বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য ৭টি পরামর্শ
তুমি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। দীর্ঘ শিক্ষাজীবন শেষে এখন তোমার ফাইন টিউনিং চলছে। এ টিউনিং যত ভালো হবে, ততবেশি তুমি সার্থক হবে। আমি অভিজ্ঞতা থেকে সাতটি পরামর্শ দিচ্ছি, যাতে তোমার ফাইন টিউনিং খুব ভালো হয়।
১। ক্যারেক্টার ফার্স্ট, ক্যারিয়ার নেক্সট
মনে রাখবে ডিগ্রি তোমাকে ক্যারিয়ার দেবে। ক্ষমতা দেবে। স্বাচ্ছন্দ্য দেবে। তবে এটি একসময় শেষ হয়ে যাবে। চরিত্র কিন্তু চিরন্তন। তা মৃত্যুর পরও মানুষের স্মৃতিতে টিকে থাকে। তাই ক্যারিয়ারের জন্য চরিত্র বিসর্জন দিও না। সেটি ধরে রেখে ক্যারিয়ার তৈরি করো। তাহলেই তুমি সার্থক।
২। চিন্তা করো, শুধু পাস করো না
শুধু পরীক্ষা পাস করার জন্য পড়ো না। বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে নিজের চিন্তাভাবনা বিকাশের সেরা জায়গা। এখানে ক্যাম্পাসের কড়িডোর দিয়ে হাঁটলেও চিন্তার নতুন শক্তি তৈরি হয়। এ সুযোগ হাতছাড়া করো না। চিন্তা নামের পাখিটিকে উম্মুক্ত করে দাও।সীমাবদ্ধ থেকো না। তাহলে জীবনে পরিপূর্ণতা আসবে।
৩। ক্লাসের বাইরে ক্লাস
ক্লাসে আটকে থেকো না। নিজের পড়ার বাইরেও পড়ো, বন্ধুদের সাথে তর্ক করো, বিতর্কে যাও, সেমিনারে যাও, কালচারাল প্রোগ্রামে যাও। ওয়েবিনারে যোগ দাও। জ্ঞানকে সলিড রূপ দেওয়ার জন্য এগুলো জরুরি। ভুলে যেও না, ক্লাস শেখায় অর্ধেক, বাকিটা শেখায় বাইরের দুনিয়া।
৪। শ্রেষ্ঠ বন্ধু খুঁজে নাও
বিশ্ববিদ্যালয়ে তোমার অনেক বন্ধু হবে। তারা সম্পদও হতে পারে, আপদও হতে পারে। সেইসব বন্ধু খুঁজে নাও, যারা তোমাকে স্বস্তি দেবে। নিত্যনতুন ভাবনা দিয়ে চিন্তা করতে শেখাবে। তোমার ভেতরের আগুনকে বের করে আনবে। সুখে-দুঃখে পাশে থাকবে। এমন বন্ধুত্ব করো না, যা জীবনে আফসোস ডেকে আনবে। মানুষের জীবনের করুণ পরিণতির অন্যতম কারণ বন্ধুসঙ্গ। আবার ভালো বন্ধুর চেয়ে মতো আশীর্বাদ খুব কম আছে।
৫। নিজে বড় হও, অন্যের বড় হওয়ার ‘মই’ হয়ো না
বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে ‘বড়’ হওয়ার জায়গা। এটি পরবর্তী জীবনে ‘বড়’ হয়ে উঠার শেষ শিক্ষাক্ষেত্র। একই সাথে এখানেই অনেকে তোমাকে নিজেরা বড় হওয়ার জন্য ‘মই’ হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা করবে। দয়া করে নিজে বড় হও, অন্যকে বড় হতে সাহায্য করো, কিন্তু নিজেকে বরবাদ করে অন্যের বড় হওয়ার মই হয়ো না।
৬। ফল ফরোয়ার্ড
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সবসময় যে সফলতা আসবে তা নয়। ব্যর্থতাও আসতে পারে। এরকম হলে ঘাবড়ে যেও না। উঠে দাঁড়াও, আবার ছুটো। আছাড় যদি খাও, সামনের দিকে পড়। পেছনের দিকে নয়। প্লিজ, ফল ফরোয়ার্ড।
৭। রিপন মিয়ার কথাটা মনে রেখো
আমরা মানি বা না মানি, এটা সত্য যে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রেম আসে, প্রেম ভাঙে। যদি ভেঙে যায় জীবন শেষ হয়ে গেছে ভেবো না। ইউটিউবার রিপন মিয়া খুব সাধারণ একজন মানুষ। কিন্তু এ ব্যাপারে তিনি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা বলেছেন। তাহলো ‘ছ্যাকা খেয়ে অনেকেই তো অনেককিছু করে, অনেকে মরে যায়, নেশাপানি করে। আমি চিন্তা করলাম ভিডিও বানাই। যে চলে গেছে, চলে যাক। এই অনুপ্রেরণা নিয়েই শুরু। কষ্টের সময়টা ভুলতেই অনলাইনে আসা।’
কী সাধারণ সারল্য মেশানো কথা! কিন্তু এতে লুকিয়ে আছে বিশাল বার্তা। সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার কষ্টকে নষ্ট হওয়ার কারণ বানিও না। জ্বলে উঠার বারুদ বানাও। তোমার জীবন হোক আনন্দযাত্রা। সে যাত্রাপথে কাঁটাও ফুল হয়ে ফুটুক।
বাদল সৈয়দ: কথাসাহিত্যিক ও সরকারি কর্মকর্তা