ভিসা ইন্টারভিউ: যে ব্যাপারগুলো খেয়াল রাখা উচিত
বিভিন্ন সময়ে আমাকে নানা দেশের ভিসা ইন্টারভিউ দিতে হয়েছে। সৌভাগ্যবশত, কখনো কোনো আবেদন রিজেক্ট হয়নি। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আমি মনে করি, ভিসা ইন্টারভিউর সময় কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে খেয়াল রাখা জরুরি। যারা বিদেশে যেতে চান, তাদের জন্য সেই বিষয়গুলোই তুলে ধরছি।
১। সৎ থাকুন
ভিসা ইন্টারভিউতে শতভাগ সৎ থাকুন। সম্ভবত ২০০২ সালে তখনকার জনপ্রিয় ম্যাগাজিন সাপ্তাহিক ২০০০ বিভিন্ন দূতাবাসের ভিসা অফিসারদের সাথে আলাপ করে ভিসা ইন্টারভিউ সম্পর্কে একটি কভার স্টোরি করেছিল। তাতে প্রায় সব ভিসা অফিসার যা বলেছিলেন তার সারমর্ম হচ্ছে, আমরা কেউ মিথ্যা বলামাত্র বুঝতে পারি। ট্রেনিং এবং অভিজ্ঞতা আমাদের এ দক্ষতা দিয়েছে। তাই ভিসা ফেস করার সময় অবশ্যই সত্য বলবেন। সততা ভিসা পাওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।
২। অসত্য তথ্য: নো অ্যান্ড নেভার
ভুলেও ভিসা আবেদনের সাথে মিথ্যা তথ্য দেবেন না। ধরা পড়লে ভিসা আবেদন তো রিজেক্ট হবেই, আপনাকে আজীবনের জন্য অবাঞ্ছিতও ঘোষণা করা হতে পারে। অনেক সময় দূতাবাসগুলো বন্ধু দেশের সাথে এ ধরনের তথ্য আদান-প্রদান করে বলে জানি। সেক্ষেত্রে অন্য দেশের দরজাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
৩। ভ্রমণের উদ্দেশ্য
আপনার ভ্রমণের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত কিন্তু পরিষ্কার জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিন।
৪। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পছন্দের কারণ
শিক্ষার্থী হলে যেখানে পড়তে যাচ্ছেন, সেটি কেন বেছে নিলেন তা জিজ্ঞেস করতে পারে। এক্ষেত্রে আসলে যে কারণে পছন্দ করেছেন তা-ই বলুন। এমনকি জবাবটি অস্বস্তিকর হলেও ঠিক কথাই বলুন। যেমন, আপনি হয়তো টপ র্যাংকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাননি। তাই মধ্যম মানের বিশ্ববিদ্যালয়ে যাচ্ছেন। এটা খোলাখুলি স্বীকার করুন।
৫। ব্যয়ভার কীভাবে বহন করা হবে
আপনার ভ্রমণের ব্যয় কীভাবে বহন করা হবে সে ব্যাপারে উত্তর ও প্রমাণ রেডি রাখুন। শিক্ষার্থীদের এ ব্যাপারে বেশি জিজ্ঞেস করা হয়। ব্যয়ের উৎস বোঝাতে না পারলে ভিসা সাধারণত হয় না। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণ সাথে নিয়ে যান।
৬। ভ্রমণসঙ্গী ও আমন্ত্রণদাতা
সাথে কেউ গেলে তার ব্যাপারেও প্রশ্ন করা হতে পারে। যেমন, তিনি কেন আপনার সাথে যাচ্ছেন? এ ব্যাপারেও প্রস্তুতি নিন। সঠিক উত্তরটি দিন। এছাড়া, কোনো আমন্ত্রণে গেলে আমন্ত্রণদাতার ব্যাপারে জেনে রাখুন।
৭। পেশা ও পরিবার
আপনার পেশা নিয়েও প্রশ্ন করতে পারে। ব্যাপারটি মাথায় রাখুন। কোনো কোনো সময় পরিবার নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। এটিও ভেবে রাখবেন।
৮। বৈরি দেশ সফর
যে দেশের ভিসার জন্য আবেদন করেছেন, তার বৈরি কোনো দেশ ভ্রমণের ইতিহাস থাকলে সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা প্রায় নিশ্চিত। যৌক্তিক উত্তর প্রস্তুত করুন। বোঝাতে হবে যে, বৈরি দেশ সফরে গেলেও আপনার উদ্দেশ্য বৈরি ছিল না।
৯। সোশ্যাল মিডিয়া উন্মুক্ত রাখা
ইদানীং অনেক দেশ ভিসা আবেদনকারীর সোশ্যাল মিডিয়ায় কার্যক্রম দেখে। তাই ওটা ভিসা ইন্টারভিউয়ের আগে উন্মুক্ত রাখা উচিত। লকড প্রোফাইল ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হয় বলে জানি।
১০। পরিপাটি থাকুন
দামি পোশাক পরতে হবে তা নয়। কিন্তু যা পরবেন তা যেন পরিপাটি হয়। ড্রেস সেন্সের দিকে নজর রাখুন। তীব্র গরমে স্যুট-টাই না পরাই ভালো। একই সাথে নিজের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে গুরুত্ব দিন।
১১। ওভার স্মার্ট হবেন না
বেশি ওভার স্মার্ট হয়ে ভিসা অফিসারকে আউট-স্মার্ট করার চেষ্টা করবেন না। ওভার স্মার্ট কখনোই ভালো নয়, ভিসা ইন্টারভিউতে তা আত্মঘাতী।
১২। আত্মবিশ্বাসী হোন
ওভার স্মার্ট হবেন না। তবে আত্মবিশ্বাসী হোন। প্রতিটি প্রশ্নের জবাব আত্মবিশ্বাসের সাথে দিন। সম্ভব হলে হালকা রসবোধ যুক্ত করতে পারেন। ২০০৫ সালে প্রথমবারের মতো একটি পশ্চিমা দেশের ভিসা ফেস করার সময় আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তুমি কি আমাদের দেশে থেকে যাবে? আমি হাসতে হাসতে বলেছিলাম, আমি ক্যারিয়ার ব্যুরোক্রেট। কখনো যদি বাংলাদেশ সরকার আমাকে তোমার দেশে অ্যাম্বাসেডর করে পাঠায় তাহলে থাকব। আপাতত সে ইচ্ছে নেই। ভিসা অফিসার হো হো করে হেসে দিয়েছিলেন।
আপনার বিদেশ যাত্রা শুভ হোক।
পাদটীকা: আমি ভিসা বিশেষজ্ঞ নই। ভিসা প্রসেসের সাথেও আমার সম্পর্ক নেই। যা বললাম তা একান্ত নিজের অভিজ্ঞতাপ্রসূত। আপনার কোনো পরামর্শ থাকলে দয়া করে কমেন্টে জানান। ছবিটি ২০১৫ সালে ভিয়েনায় তোলা। তখন জাতিসংঘে পার্ট-টাইম কাজ করতাম।
বাদল সৈয়দ: কথাসাহিত্যিক ও সরকারি কর্মকর্তা