১০ নখই উপড়ে ফেললো বিএসএফ, কত উদাসীন হবে সরকার?
ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী- বিএসএফ বাংলাদেশি এক তরুণের হাতের ১০টি আঙুলেরই নখ উপড়ে ফেলে পাশবিক কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছে। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। এছাড়া এ ব্যাপারে সরকারের ‘উদাসীনতা’র কড়া সমালোচনা করেছেন তিনি।
নিজের ফেজবুক পেজে এক পোস্টে তিনি এ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। তিনি লিখেছেন- ‘বাংলাদেশের এক যুবকের সবগুলো নখ উপড়ে দিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী। এই পৈশাচিক আচরণের আগেও আরো অনেক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। দিনের পর দিন সীমান্তে বাংলাদেশের মানুষকে খুন করছে, রক্তাক্ত করছে ভারতের বাহিনী। এর কোন প্রতিকার করতে পারেনি সরকার। এমনকি অনেক সময় উপযুক্ত প্রতিবাদ পর্য্ন্ত করতে ব্যর্থ্ হয়েছে তারা।
আমি বুঝিনা নিজ দেশের মানুষের জীবন আর মর্যাদার প্রতি এমন উদাসীন্য কিভাবে দেখাতে পারে একটা সরকার? কিভাবে বাংলাদেশের মানুষকে নীচু চোখে দেখা আর নির্বিচারে সীমান্তে হত্যা করা একটি রাষ্ট্রকে বন্ধুরাষ্ট্র বলে বলে বিগলিত হয়ে থাকতে পারে?
আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে, অবৈধ সীমান্ত পারাপার হলে গ্রেফতার করা যায়, বিচার করা যায়। কিন্তু কোনভাবে কাউকে খুন করা যায় না, কারো নখ উপড়ানোর মতো পৈশাচিক আচরণ করা যায়না। আন্তর্জাতিক আইনে এসব গুরুতর অপরাধ।
নিজ দেশের মানুষের প্রতি মমত্ব থাকলে আর নিজ দেশের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকলে এসব ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করা উচিৎ ছিল সরকারের। উচিত ছিল প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক ফোরামে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এসব আচরণ তুলে ধরা।
অবৈধভাবে এদেশে ভারতীয়দের থাকা ও চাকরী করার অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয়েও সরকারের ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ অবিলম্বে।’
প্রসঙ্গত ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ নওগাঁর সীমান্তবর্তী ভারতের মালদা জেলার রাঙামাটি ক্যাম্পে মো. আজিম উদ্দিন নামে বাংলাদেশি এক তরুণের হাতের ১০টি আঙুলেরই নখ উপড়ে নিয়ে পাশবিক কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছে। ওই অবস্থায় বিনা চিকিৎসায় তিন দিন তাকে আটকে রাখা হয়।
এর সত্যতা নিশ্চিত করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশ জানিয়েছে, পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ওই তরুণকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। আজিমের বাড়ি সাপাহার উপজেলার সীমান্তবর্তী তুলসিডাঙ্গা দক্ষিণ পাতারি গ্রামে।
ফিরিয়ে আনার পর তাকে সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘তার পরনের টি-শার্ট ও লুঙ্গি রক্তে ভিজে ছিল। উপড়ানো নখ ছাড়াও তার প্রায় সারা শরীরে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’
আসিফ নজরুল একজন বাংলাদেশী লেখক, ঔপন্যাসিক, রাজনীতি-বিশ্লেষক, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, কলামিস্ট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক। টিভি টক শো ও তার কলামে সাহসী রাজনীতি বিশ্লেষণের জন্য তিনি বিশেষভাবে খ্যাত। তিনি দশের অধিক গ্রন্থের রচয়িতা। রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কথা বলে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পূর্বে ১৯৯১ সালে আসিফ নজরুল একটি বহুল প্রচারিত সাপ্তাহিক পত্রিকা বিচিত্রায় কাজ করতেন। বাংলাদেশ সরকারের একজন সরকারি কর্মকর্তা (ম্যাজিস্ট্রেট) হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মিডিয়ায় তাকে প্রায়ই দেখা যায়।