শিশুমনের উপর বিজ্ঞাপনের প্রভাব নিয়ে ভাববেন কি?
মাঝেমাঝে কন্যার সাথে সাথে দুরন্ত টিভির কিছু অনুষ্ঠান দেখা হয়। অনুষ্ঠান দেখতে দেখতে কিছু বিজ্ঞাপনও দেখা হয়ে যায়। বিজ্ঞাপনের ভাষা, বক্তব্য, পাত্রপাত্রীর দেহভঙ্গি! এগুলো নিয়ে কি নির্মাতারা গবেষণা করেন? শিশু মনস্তত্ত্বের উপর এগুলোর প্রভাব নিয়ে কখনো ভাবেন? মনে হয়না।
লাইফবয় না ডেটল হ্যান্ডওয়াশের বিজ্ঞাপন ভুলে গেছি। তুলনামূলকভাবে একটু গুল্লুগাল্লু একটি ছেলে বাচ্চা একটি সুদর্শনা নারী। বাচ্চার সাথে/পাশে বসে লাঞ্চ খাওয়ার আশায় পুলকিত হয়ে ওঠে। কিন্তু তার ব্যবহৃত সাবানটি স্লো হওয়ায়, অপেক্ষাকৃত সুদর্শন নায়কোচিত ছেলে বাচ্চাটি কৌশলে বালিকাটির লাঞ্চের সঙ্গী হতে পারে। ছেলে বাচ্চাদুটো বা মেয়ে বাচ্চাটি কারো আচরণ/দেহভঙ্গি বাচ্চা সুলভ লাগেনি আমার কাছে।
ইদানিং নর নুডলসের একটা বিজ্ঞাপন দেখি। মেয়ের বান্ধবীরা আসবে বলে মা নুডলস বানিয়ে দিতে চাইছে। কিন্তু মেয়ের মায়ের রান্নার পারদর্শিতার ওপর ভরসা নেই। সে দোকান থেকে আনিয়ে নেবে বলে আরাম করে চেয়ারে বসে মোবাইল টিপতে টিপতে মায়ের মুখের উপরে আস্তে করে দরজাটা ঠেলে দেয়। মা দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় মুখের উপর দরজা ঠেলে চাপিয়ে দেয়া যে একটা অভদ্রোচিত আচরণ এবং মায়ের আন্তরিকতার ভাষাকে অবজ্ঞা করা- এটা কি নির্মাতারা বোঝেন না?
আরেকটা বিজ্ঞাপন দেখি, ‘গেট গ্লো, গেট গ্লো’ বলতে বলতে কয়েকটি নারী ফেয়ার এন্ড লাভলির বিজ্ঞাপন করতে করতে জানিয়ে দেন উজ্জ্বলতার/ ফরসা রঙের অপরিহার্যতা। আর তাই দেখে আমার সাড়ে চারবছর বয়সী কন্যা উজ্জ্বলতার প্রয়োজনীয়তা জানতে চায় এবং প্রশ্ন করে বসে যে, ‘সে কালো কিনা? এগুলো মেখে সে গেট গ্লো হতে পারবে কিনা!’
ইদানিং আরেকটায় দেখি, মা যখন বলেন যে, পড়লে বড় হওয়া যায় আর সবাই তার কথা শোনে- যেমন তোমার বাবার কথা! তখন শিশু চোখ নাচিয়ে মাকে বলছে, ‘তুমিই তো বাবার কথা শোনো না।’
মা তখন অস্বাস্থ্যকর কি যেন একটা শিশুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন, ‘মাথা খেয়ো না তো!ভালো কিছু খাও।’
এর আগে দেখেছি, শিশুদের চিপসের বিজ্ঞাপন বলে দেয়, ‘একা একা খেতে চাও, দরজা বন্ধ করে খাও।’
ভালো, সব একা খাওয়ার, কাউকে কিছু না দেওয়ার, আত্মকেন্দ্রিক হওয়ার শিক্ষা শিশুকাল থেকেই দিয়ে দেয়া হচ্ছে!
আরো অনেকগুলো আছে বিজ্ঞাপন (এখন লিখার সময় নাই)- যেগুলো দেখলেই পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায়, মাথার মেজাজ গরম হয়ে যায়। মন চায়, টিভিটুভি ভেঙে বনবাসে যাই।
কাজী তাহমিনা
সাবেক শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়