রানা প্লাজা ট্রাজেডি: ন্যায় বিচার কতদূর?
- ফারুক হাসান
- প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ১১:৩১ AM , আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৯, ১১:৩১ AM
বাংলার ইতিহাসে রানা প্লাজা ট্রাজেডি ছিল এক ভয়াবহ মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগের নাম। এর আগে এত মানুষ আর কোন মনুষ্য সৃষ্ট দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়নি। দিনটি ছিল ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল, ফুটফুটে ঊষার আলোয় সকালটা চারদিকে ঝলমল করছিল সেদিন। বিরোধীদের ডাকা হরতাল অবরোধ ছিল চলমান।
রাস্তা ঘাটে তেমন যানবাহন এবং মানুষজন ছিল না। চিরাচরিত নিয়ম অনুযায়ী হরতাল অবরোধে বিশেষ করে ঢাকা শহরে দোকান-পাট, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখে মানুষ। কিন্তু সেদিন এই রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানা তার কর্মীদের বাধ্য করে কাজে যোগ দিতে। কাজে যোগ না দিলে বেতন বন্ধ করে দেওয়া হবে এই হুমকিও দেওয়া হয়।
কথায় আছে ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়.............’ ঠিক এই ক্ষুধার জ্বালায় অসহায় মানুষজন বাধ্য হয় কাজে যেতে। কাজে যোগদান করলে সকালের দিকে রানা প্লাজা নামক ভবনটি হঠাৎ ভেঙে পড়ে, আর ইতিহাসের পাতায় নাম লেখা হয় রানা প্লাজা ট্রাজেডি নামে।
তাৎক্ষণিকভাবে সরকারের দায়িত্বশীল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, ‘বিএনপি-জামাতের লোক ঝাঁকি দিয়ে বিল্ডিংটি ভেঙ্গে ফেলছে।’ এই কথায় সরকারের দায়িত্বশীল জায়গাগুলোতে যে অদক্ষ লোক দিয়ে ভরে রাখা হয়েছে, তার একটি বাস্তব প্রমাণ ফুটে ওঠে। কি করে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যাক্তি দায়িত্বজ্ঞানহীন এরকম কথা বলেন তা আমরা মেনে নিতে পারিনি সেদিন।
সরকারি হিসাব মতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১১৩৬ জন। যদিও লোকমুখে শোনা মৃতের সংখ্যা এর থেকে অনেক অনেক বেশি। গুরুতর আহত ১১৬৯ জন। ঘটনা ঘটার পরে দেশি বিদেশি অসংখ্য সাহায্য সহযোগিতা আসে। করা হয় কেন্দ্রীয় ফান্ড সুষম বণ্টনের জন্যে। কিন্তু আমরা অবাক হয়ে দেখলাম, সুষম বণ্টনের চেয়ে অসম বন্টনে বেশি পারদর্শী আমাদের কর্তা-ব্যক্তিরা।
অনেক মা বোন তাদের পরিবার পরিজন হারিয়ে আজ দুর্বিসহ জীবন যাপন করে, কেউ তাদের খোঁজও নেয় না। অনেক মানুষ তাদের হাত পা বা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ হারিয়েছে। এখন তারা কি দুঃসহ জীবনযাপন করছে তা পত্রিকার পাতায় চোখ বুলালে বুঝা যায়।
এসব দেখি আর ভাবি কাদের হাতে এই প্রিয় স্বদেশ আমরা তুলে দিয়েছি। তখন সরকার যে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল, তার অনেকাংশই আজও বাস্তবায়ন করা হয়নি। এই ঘটনার সঠিক বিচারের আশ্বাস দিয়েছিল সরকার দ্রততার সঙ্গে। কিন্তু আজো সেই ঘটনার কূলকিনারা উদ্ঘাটন করেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
কারণ পানির মতো পরিষ্কার, এই ঘটনার মূল হোতা সোহেল রানা সরকারি দলের একজন পদধারী নেতা ছিলেন। পরে পাবলিক ক্ষোভের ভয়ে মামলা করা হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। মামলায় আসামী করা হয় ৪১ জনকে। এই ৪১ জন আসামীর মধ্যে এখন মাত্র একজন কারাগারে আটক রয়েছে। এই হলো রানা প্লাজা ট্রাজেডির পরের অবস্থা।
আমাদের দেশের বিচারহীনতার সংস্কৃতির ফলে অনেক কুখ্যাত আসামি রাজার হালতে বেহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়ায়, অন্যদিকে অনেক নিরপরাধ মানুষ দিনের পর দিন কারাগারে পচে মরে। রানা প্লাজার মুল ভিকটিমদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র পক্ষ থেকে।
সেই সঙ্গে রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাসহ দোষীদের দ্রুত সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে শাস্তি প্রদানের দাবি জানাচ্ছি।।
লেখক: যুগ্ম-আহবায়ক,
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।