তারেক রহমানের দেশে ফেরা: শেষ পর্ব
বাংলাদেশের রাজনীতি আজ এক Critical Juncture-এ দাঁড়িয়ে আছে। দীর্ঘ ১৬ বছর একদলীয় আধিপত্য, বিরোধী রাজনীতিকে দমন-পীড়ন এবং নির্বাচনকালীন বৈধতার(Electoral Legitimacy) ঘাটতি—সব মিলিয়ে রাষ্ট্রীয় গণতন্ত্র এক গভীর সংকটে নিমজ্জিত ছিল। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরা কেবল একটি ব্যক্তিগত প্রত্যাবর্তন নয়, বরং এটি জাতীয় রাজনীতির জন্য এক Transformative Political Event. বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইতোমধ্যেই তাঁর বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। ফলে তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রশ্নটি আজ আর শুধুমাত্র দলীয় রাজনীতির পরিসরে সীমাবদ্ধ নেই; এটি হয়ে উঠেছে National Unity ও Inclusive Governance-এর কেন্দ্রীয় এজেন্ডা।
২০২৫ সালের ১৩ই জুন লন্ডনের ডরচেস্টার হোটেলে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তারেক রহমান ও ড. ইউনূসের আলোচনায় প্রথমবার আনুষ্ঠানিকভাবে উঠে আসে National Government বা জাতীয় সরকারের প্রস্তাব। এর ধারাবাহিকতায় ৫ আগস্ট ২০২৫ তারিখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি ঘোষণা করে। এই ঘোষণার রাজনৈতিক তাৎপর্য বহুমাত্রিক: একদিকে এটি Consociational Democracy-এর দিকে ইঙ্গিত করে, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক শক্তিগুলো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসীন হতে উৎসাহী হয়। অন্যদিকে এটি রাজনৈতিক তত্ত্বের ভাষায় একধরনের Conflict Resolution Mechanism, যা দীর্ঘদিনের Deadlock Politics ভাঙতে সহায়ক। সবচেয়ে বড় বিষয়, এই প্রস্তাব গণতন্ত্রকে Institutionalized Pluralism-এর দিকে ধাবিত করবে। তারেক রহমান স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন- তাঁর দেশে ফেরা Power Grab বা ক্ষমতা দখলের জন্য নয়, বরং Democratic Restoration-এর জন্য।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমানে একটি Leadership Vacuum বিরাজ করছে। নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে Hegemonic Governance চালিয়ে এসেছে, অন্যদিকে বিএনপি নির্যাতনে দিশাহারা ছিল। ফলে নতুন প্রজন্মের কাছে গ্রহণযোগ্য ও প্রত্যক্ষ Tested Leadership প্রায় অনুপস্থিত। এই বাস্তবতায় তারেক রহমানই একমাত্র Viable Alternative Leadership. বিএনপির কাঠামো পুনর্গঠন ও Mobilization সক্ষমতা তাঁর হাতেই সবচেয়ে বেশি। তিনি দেশের জনগণের ভোটাধিকার রক্ষার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। দীর্ঘ প্রবাসজীবনে তৈরি কূটনৈতিক নেটওয়ার্ক নির্বাচনী বৈধতা অর্জনে Soft Power Asset হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করা যায়। ডিজিটালাইজেশন, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানমুখী রাজনৈতিক চিন্তার কারণে তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি Policy Innovator. তাই বলা যায়, তারেক রহমান ছাড়া জাতীয় রাজনীতির জন্য কোনো Functional Alternative নেই।
তারেক রহমান আজ বাংলাদেশের রাজনীতিতে Irreplaceable Leadership—যার কোনো বিকল্প নেই। তিনি দেশে ফিরবেন শুধু প্রতীকী উপস্থিতির জন্য নয়; অফিস করবেন, দলকে সংগঠিত করবেন, নির্বাচনি কার্যক্রমে সরাসরি মাঠে নামবেন। অবশ্যই তাঁর প্রতিটি কর্মসূচি জনসমুদ্রে রূপ নেবে। রাস্তায় ভিড় জমবে, মানুষ তাঁকে ছুঁয়ে দেখতে চাইবে, হাজারো সমর্থক তাঁর চারপাশে ঢল নামাবে। এ বাস্তবতায় রাজনৈতিক বিজ্ঞানীরা একে বলেন Charismatic Mobilization, যা যেমন গণআন্দোলনকে শক্তিশালী করে, তেমনি Security Dilemma তৈরি করে। তাঁর নিরাপত্তা সুরক্ষিত রাখা তাই কেবল একটি ব্যক্তিকে রক্ষার প্রশ্ন নয়—এটি আসলে জাতীয় স্থিতিশীলতা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার নিরাপত্তা। কারণ, যদি তাঁর নিরাপত্তায় ঘাটতি থাকে তবে সেটি রাষ্ট্রের জন্য Political Destabilization ডেকে আনবে।
এজন্য তাঁকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা কৌশলের চাদরে আবৃত করতে হবে। VVIP Protection Protocol- রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট/প্রধানমন্ত্রীর সমপর্যায়ের সুরক্ষা দিতে হবে। তাঁর রাজনৈতিক কার্যালয়কে নিরাপদ এলাকায় রূপান্তরিত করতে হবে। জনসমাবেশে Crowd-control ও Emergency Exit ব্যবস্থা রাখতে হবে। নির্বাচনি সফরের সময় প্রতিটি জেলা ও জনসভায় মোবাইল নিরাপত্তা টিম দিতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে আগাম ঝুঁকি চিহ্নিতকরণ অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশে বিশিষ্ট নেতাদের প্রত্যাবাসন অনিবার্যভাবে নিরাপত্তা উদ্বেগের সাথে জড়িত। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, চিলি এবং ফিলিপাইনের জাতীয় নেতাদের উদাহরণগুলি চিত্রিত করে যে কীভাবে প্রত্যাবর্তনকারী নেতারা রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময়কালে সুসংগঠিত হুমকি, সহিংসতা বা এমনকি গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টার মুখোমুখি হয়েছেন। তবুও, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের প্রতি আপাত উন্মুক্ততা এবং পেন্ডিং মামলা থেকে তাঁকে আইনি অব্যাহতি দিতে সচেষ্ট। তবুও,পরিবর্তনশীল রাজনীতির অস্থিরতার জন্য শক্তিশালী ঝুঁকি প্রশমন কৌশল প্রয়োজন। দক্ষিণ এশিয়া এবং ল্যাটিন আমেরিকার পূর্ববর্তী বিরোধী নেতাদের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায় যে, আপাতদৃষ্টিতে অনুকূল পরিস্থিতিতেও ঝুঁকির হিসাব পরিবর্তনশীল থাকে এবং এর জন্য সক্রিয় প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষার প্রয়োজন হয়।
বাংলাদেশের জনমিতি অনুযায়ী প্রায় ৬৫% জনগোষ্ঠী তরুণ। এরা ডিজিটালি দক্ষ, রাজনৈতিকভাবে সচেতন এবং পরিবর্তনের জন্য উৎসুক। তারেক রহমান অতীতে Youth-centric Policies-এ গুরুত্ব দিয়েছেন—শিক্ষা সংস্কার, আইটি খাতের উন্নয়ন, দক্ষতা প্রশিক্ষণ। এর ফলে তরুণদের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন একধরনের Policy Entrepreneur. তাঁর ফেরা হলে এই তরুণ প্রজন্ম আবারও Electoral Mobilization-এ যুক্ত হতে পারে। এভাবে Political Participation বাড়বে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় তরুণদের অন্তর্ভুক্তি ঘটবে।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির সংসদ নির্বাচন শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ইস্যু নয়; আন্তর্জাতিক অঙ্গনের গভীর পর্যবেক্ষণের বিষয়। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ বারবার Free, Fair and Inclusive Election-এর ওপর জোর দিয়েছে। ফলে তারেক রহমানের দেশে ফেরা আন্তর্জাতিকভাবে তিনটি বার্তা দেবে- ক) বাংলাদেশে সঠিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব কার্যকর আছে (Political Legitimacy), নির্বাচনকে Globally Acceptable করার একটি সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মহলে Democratic Soft Power অর্জন করবে। এটি International Recognition of Electoral Process নিশ্চিত করবে, যা পরবর্তী সরকারকে External Legitimacy এনে দেবে।
৫ আগস্ট ২০২৫-এ নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি Window of Opportunity তৈরি হয়েছে। তারেক রহমান যদি তফসিল ঘোষণার সময়সীমার মধ্যেই দেশে ফেরেন, তবে তিনি কেবল দলের অভ্যন্তরে Organizational Cohesion তৈরি করবেন না, বরং জাতীয় ঐক্য সরকারের ধারণাকে বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। বিএনপি ঘোষিত সংস্কারের ৩১ দফাও বাস্তবায়নে নিবেদিত হবেন। এটি হবে একটি Strategic Political Move, যা নির্বাচনের আগে Electoral Confidence তৈরি করবে। ইতিবাচক রাজনীতিকে পুনর্জীবিত করবে (Political Revival), আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে Symbol of Democratic Commitment হয়ে উঠবে। জেসন এবং আর্গোনটদের গ্রিক পৌরাণিক কাহিনি, যারা বৈধতা এবং নবায়নের প্রতীক হিসেবে গোল্ডেন ফ্লিস নিয়ে ফিরে এসেছিলেন, তা তারেক রহমানের কূটনৈতিক অংশগ্রহণের সম্ভাব্য প্রভাবের জন্য একটি উপযুক্ত রূপক। বাহ্যিক সমর্থন ব্যবহার করে এবং বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরে, তিনি জাতির সফট পাওয়ারকে শক্তিশালী করতে এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের সম্প্রদায়ে এর একীকরণকে অবদান রাখতে পারেন।
আগেই বলা হয়েছে কেবল ক্ষমতায় আসীন হওয়ার জন্য তারেক রহমান দেশে আসবেন না বরং জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবেন। বাংলাদেশে আজ সবচেয়ে বড় প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য। বিভক্তির রাজনীতি ও Polarized Governance রাষ্ট্রকে দুর্বল করে তুলেছে। জাতীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে তারেক রহমান আসলে একটি Consociational Model of Democracy-র দিকে এগোচ্ছেন, যেখানে- সব রাজনৈতিক দল Inclusive Governance-এ অংশ নেবে। রাষ্ট্রীয় নীতি হবে Consensus-oriented, গণতন্ত্র পুনর্গঠন পাবে Broad-based Legitimacy, এটি হবে বাংলাদেশের জন্য এক Transformative Political Settlement.
তারেক রহমানের দেশে ফেরা রাজনৈতিক বিজ্ঞান ও গণতন্ত্রের তত্ত্ব দিয়ে বিচার করলে এক Epoch-making Event, তিনি ফিরবেন জাতীয় ঐক্যের ডাক দিতে (National Unity Call), জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করে Democratic Restoration ঘটাবেন, তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করে Political Participation বাড়াবেন, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে Electoral Credibility দেবেন, সবচেয়ে বড় কথা, তিনি বাংলাদেশের বর্তমান Leadership Vacuum পূরণ করবেন।
বাংলাদেশের সামনে আজ দুটি পথ- একদলীয় আধিপত্য ও রাজনৈতিক অচলাবস্থা (Hegemonic Stagnation), জাতীয় ঐক্য, বহুদলীয় অংশগ্রহণ ও গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন (Inclusive Democracy), এই দ্বিতীয় পথের প্রতীক একমাত্র তারেক রহমান। তাই বলা যায়—‘‘তারেক রহমান ছাড়া বিকল্প নেই।’’ তাঁর দেশে ফেরা মানেই গণতান্ত্রিক পুনর্জাগরণের সূচনা, জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার একমাত্র গ্যারান্টি।
লেখক: সাবেক চেয়ারম্যান, থিয়েটার এন্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়