সবাইকে বিএ এমএ পাস করতে হবে না
সবাইকে বিএ, এমএ পাস করতে হবে - এমন মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে; না হলে বাড়তেই থাকবে বেকারত্ব, হতাশা, অস্থিরতা ও নৈরাজ্য। কারিগরি শিক্ষাকে সাইডলাইনের শিক্ষা হিসেবে না রেখে স্কুল, কলেজের মূলধারার শিক্ষার সাথে একীভূত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের উপর লেখাপড়ার বাড়তি বোঝা না চাপিয়ে সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষাও দেয়া সম্ভব।
কিভাবে?
১. তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি, অংক, বিজ্ঞান ও সমাজ বই থেকে একটি করে অধ্যায় কমিয়ে ‘কারিগরি শিক্ষা’ নামের একটি বই পাঠ্য করতে হবে। এ বই এ কারিগরি শিক্ষার প্রাথমিক ধারনাসম্বলিত পাঁচটি অধ্যায় থাকবে।
পাশাপাশি, প্রাইমারীর উপবৃত্তির টাকা বর্তমান ১০০ থেকে বাড়িয়ে ২৫০ করতে হবে। এরমধ্যে ১০০ টাকা অভিভাবকরা বর্তমানের ন্যায় নগদ পাবে, বাকি ১৫০ টাকা প্রতিমাসে সরকার ও অভিভাবকের জয়েন্ট একাউন্টে থাকবে। শর্ত থাকবে, যে সব শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে একটানা ৮ম শ্রেণি শেষ করবে তারা মাসিক ১৫০ টাকা হারে ৯৬ মাসের টাকা একত্রে পাবে (যা প্রায় বিশ হাজার টাকা হয়ে যাবে)। তারা যদি আর লেখাপড়া করতে না চায় তাহলে এ টাকা তাদের পছন্দনীয় ট্রেডে পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। সরকার অবশ্যই ফ্রি ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করবে।
২. নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণিতে বর্তমান বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, মানবিক শাখার পাশাপাশি ‘কারিগরি শাখা’ নামে নতুন শাখা খুলতে হবে। এ শাখার শিক্ষার্থীরা গ্রুপের বিষয় হিসেবে পাঁচটি কারিগরি বিষয় যেমন সিভিল ওয়ার্কস, উড ওয়ার্কস, মেটাল ওয়ার্কস, ইলেকট্রিক, স্যানিটারি ওয়ার্কস নামক বইগুলো পড়বে ও প্র্যাকটিক্যাল করবে।
যারা কারিগরি শাখায় ভর্তি হবে সরকার তাদেরকে মাসে ৫০০ টাকা হারে বৃত্তি দিবে, যা প্রতিমাসে শিক্ষার্থী ও সরকারের যৌথ একাউন্টে জমা হতে থাকবে। শর্ত থাকবে যে, কারিগরিতে এইচএসসি পাস করার পরেই কেবল শিক্ষার্থী এককালীন এ টাকাটা পাবে (প্রায় ত্রিশ হাজার টাকা); এ টাকা তারা তাদের পছন্দের ট্রেডে পুঁজি হিসেবে বিনিয়োগ করে স্বাবলম্বী হতে পারবে। সরকার অবশ্যই ফ্রি ট্রেনিং, এবং সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ সুদে এদেরকে দুই লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেবে।
৩. এইচএসসি পাস করার পরে যারা কারিগরি শিক্ষায় অনার্স, মাস্টার্স করতে চাইলে সরকার তাদের জন্য সে ব্যবস্থা রাখবে। সরকার নিজে কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে, প্রাইভেট কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি দেবে এবং বর্তমান পাবলিক, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রত্যেকটিকে কমপক্ষে দশটি করে কারিগরি খুলতে দিক নির্দেশনা দেবে।
৪. কারিগরি শিক্ষাকে মূলধারার শিক্ষায় একীভূত করতে হবে। কারিগরি শিক্ষা'র সাথে সংশ্লিষ্ট সকল জনবল মূলধারার শিক্ষায় সসম্মানে এবসৰ্ভ হয়ে যাবেন।
৫. দেশে শিক্ষাবোর্ডের সংখ্যা বাড়াতে হবে। যেমন নোয়াখালী, ফরিদপুর, পটুয়াখালী, টাঙ্গাইল, বগুড়া জেলায় একটি করে নতুন শিক্ষা বোর্ড করতে হবে।
যদি আমরা শিক্ষাকে আয়ের সাথে যুক্ত করতে না পারি, কেবল বেকার তৈরির ফ্যাক্টরি হিসেবে দেখি, শিক্ষা কখনোই সফল হবে না। বছরে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ শিক্ষিত বেকার তৈরির শিক্ষা ব্যবস্থা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
বিঃদ্রঃ ১৯৭৬ সাল থেকে অদ্যাবধি দীর্ঘ ৪৪ বছর শিক্ষা ও কারিগরি শিক্ষার উপর নিজে পড়ে, পড়িয়ে ও গবেষণা করে যে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি তা অতি সংক্ষেপে আপনাদের সবিনয়ে জানালাম। প্রায় এক লক্ষ শব্দের গবেষণাপত্রটির সারসংক্ষেপ তুলে ধরলাম। ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। আপনাদের মতামতকে সম্মান জানাবো। আরো ব্যাখ্যা চাইলে পাবেন। ভালো লাগলে শেয়ার করবেন প্লিজ।
লেখক: আফতাব উদ্দিন
প্রতিষ্ঠাতা এবং অধ্যক্ষ
নোয়াখালী সাইন্স অ্যান্ড কমার্স কলেজ