০৪ এপ্রিল ২০১৯, ১১:০০

‘যা অন্যরা পারেনি, নুর ও আখতার পেরেছে’

  © সংগৃহীত

অনেকে বলছে, ডাকসুর ভিপি হয়ে ১৫-২০ জন নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলো, যা রীতিমতো ভিপির জন্য লজ্জাজনক! জি, আমি আপনার সাথে দ্বিমত পোষণ করছিনা। ১১ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীর ভোটে নির্বাচিত ভিপির সাথে শিক্ষার্থীরা নেই কেন?

আমি উদাহরণ স্বরুপ বলবো, ছবির ছেলেটির কথা৷ ছেলেটিকে মাস ছয়েক আগে খুব কম শিক্ষার্থীরাই চিনতো, কিন্তু প্রশ্নফাঁসবিরোধী আন্দোলন করে শিক্ষার্থীদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে আজ সে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক।

আচ্ছা, কেউ কি বলতে পারবেন যখন সে প্রশ্নফাঁসবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছিলো, তখন তার সাথে কতজন ছিলো? আচ্ছা, এই আখতার হোসেন-ই যদি আজকে আরেকটা আন্দোলনের ডাক দেয়, তবে কতজন আসবে? আমি হলফ করে বলতে পারি, খুব কম শিক্ষার্থীই তার ডাকে সাড়া দিয়ে আন্দোলনে সরাসরি যোগদান করবে।

এখন বলি, কেন আন্দোলনে যোগদান করবে না? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী হলে থাকে। বাকিরা বাড়ি থেকে বা মেসে থেকে ক্লাস করে। বড় কোন আন্দোলন না হলে বা কোটা সংস্কার বা নিরাপদ সড়কের মত আন্দোলন না হলে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা পারিবারিক চাপে, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কারণে, পড়াশোনার কারণে বা অন্য যেকোন কারণে প্রতিবাদী আন্দোলনে কম যোগদান করে। উপস্থিতি কম থাকে বলেই কি আমরা ধরে নিবো, তারা কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করছে না?

জী, এই যে অল্প কিছু লোক নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন হয়, তাদের মধ্যে মোট উপস্থিতির ৫০ শতাংশের বেশি থাকে অনাবাসিক শিক্ষার্থী। আর আবাসিক শিক্ষার্থী? তাদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। হলে থাকার কারণে, সিট হারানোর ভয়ে তারা কোন প্রতিবাদী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে চাইলেও, অংশ নিতে পারেনা। প্রতিনিয়ত গেস্টরুমে তাদের মোবাইল, ফেসবুক চেক করা হয়। কোন ছেলেটি কোন পোস্টে, কার পোস্টে লাইক কমেন্ট করলো, তা পর্যবেক্ষণ করা হয়।

আমাকে অনেক ছেলে মেসেজ করে বলে, ভাই আপনার পোস্ট বিভিন্ন গ্রুপ ও আপনার টাইমলাইনে দেখি, কিন্তু একটা কমেন্ট বা লাইক করার সাহস করিনা। ডাকসু আসার পরে কি এই ভীতিকর অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে? আচ্ছা, একটা কথা আছে না? নতুন বোতলে পুরাতন মদ। বর্তমান ডাকসুর অবস্থা ঠিক সেরকম হয়েছে৷

যারা গণরুম, গেস্টরুমের রাজনীতি করে তারাই আজ ডাকসুর নেতা। যারা বহিরাগতদের হলে রাখে, সিট বাণিজ্য করে, তারাই এই সমস্যা দূর করবে? হাস্যকর।

তারপরেও আমি আশাবাদী মানুষ। রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ার বাইরে মেয়েদের হল ও ডাকসুতে যে দু’একজন নির্বাচিত হয়েছে, তাদের হাত ধরেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থার পরিবর্তন হবে বলে বিশ্বাস করি৷ সেটিও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কারণ তাদের সংখ্যা যে খুবই সীমিত করে রাখা হয়েছে।

একটা বিষয় মনে রাখা জরুরি, নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়াতে সংখ্যা লাগেনা, একজনই যথেষ্ট। আন্দোলন বা প্রতিবাদ করতে সংখ্যা লাগেনা, একজন আখতারও যথেষ্ট। যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে আখতারের মতো একলা প্রতিবাদ করো রে। লোক নেই বলে, আন্দোলন করা যাবে, এই চিন্তাচেতনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

যেকোন কারণেই হোক লোকজন সরাসরি কোন প্রতিবাদে অংশ নিতে না পারলেও, তাদের সমর্থন সবসময় থাকে। আর সুযোগ পেলে, মানুষ রাজপথে নেমে আসে, তা আমরা সাম্প্রতিক আন্দোলনগুলোতে দেখেছি। সুতরাং যতোই ভয়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হোক, হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি, মেরে রক্তাক্ত করে থানায় দেওয়ার হুমকি দেওয়া হোক না কেন সুযোগ পেলে কেউ ঘরে বসে থাকবেনা, জনে জনে শত জনে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসবে।

আর নীরব বিপ্লব বলেও একটা কথা আছে। নুর, আখতার প্রতিবাদ করে বলেই, ডাকসুতে শিক্ষার্থীরা নীরব প্রতিবাদ করেছে। যদিও পুরো ডাকসু নির্বাচন নিয়ে অনেক তর্ক-বিতর্ক রয়েছে। তারপরও বলতে চাই, নুর ও আখতারের ক্ষেত্রে তারা নীরব বিপ্লব করে তাদেরকে জয়ী করেছে।

তাই এই নীরব বিপ্লবকারীদের পাশে দাঁড়ানো নুর ও আখতারের দায়িত্ব। নির্যাতিত ফরিদ হাসান নীরব বিপ্লবকারীদের একজন। তার পাশে দাঁড়ানো কি নুর ও আখতারের দায়িত্ব নয়?

খাবারের মূল্য ২৫ টাকা থেকে কমিয়ে ২৩ টাকা করার চেয়ে একজন ডাকসুর নেতার অন্যতম দায়িত্ব নির্যাতিতদের পাশে থাকা। যা অন্যরা পারেনি, নুর ও আখতার পেরেছে।

লেখকঃ মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন,

যুগ্ম আহ্বায়ক,

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।