২৫ মার্চ ২০১৯, ২২:২১

শিশু মননে দেশপ্রেম

  © সংগৃহীত

দেশের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করতে দেশপ্রেম অতিব জরুরী। দেশপ্রেম, মমত্ববোধ, মাতৃত্ববোধ ও ভ্রাতৃত্ববোধের মহান শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বীয় দেশের উন্নয়ন, সমৃদ্ধি এবং সুশৃংখলা প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত হওয়ার মাধ্যমে দেশপ্রেম ফুটে উঠে। স্বীয় মাতৃভূমিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবার কর্মকৌশল উদ্ভাবনে আত্মনিয়োগ করার প্রকৃত শিক্ষা পায়। দারিদ্র, নিরক্ষরতা এবং অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে মুক্ত হয়ে একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী শিক্ষিত ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার ক্ষেত্রে শিশুকাল থেকে দেশপ্রেম গড়ে উঠা আবশ্যক।

শিশুদের বিদ্যালয়ে শপথ বাক্যে পড়ানো হয়— মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখিব এবং দেশের প্রতি অনুগত থাকিব। কিন্তু বড় হয়ে এর কতটুকু মনে থাকে বা মান্য করে? আমরা কি পারি মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে? বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের হতাশ হতে হয়। আমরা কেন পারছি না বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী ও আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে? কারণ একটাই, মুখে আমরা যতই দেশপ্রেমের আওয়াজ তুলি কিন্তু কাজ কর্মে তার বড়ই অভাব।

বিদ্যালয়ে গিয়ে শিশুদের কাছ থেকে যখন জানতে চাওয়া হয়, বড় হয়ে তোমরা কি হবে? বেশিরভাগই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পুলিশ কিংবা শিক্ষক হতে চায়। চোখে মুখে তাদের তৃপ্তির হাসি লেগে থাকে। আমরাও তৃপ্ত হই। স্বাধীনতা অর্জন করেছি বলেই, আজ আমরা বড় বড় স্বপ্ন দেখছি। পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকলে বহু উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন সত্ত্বেও হয়তো কেরানীর চাকরিই করতে হতো।

বড় হয়ে যখন আমাদের প্রত্যাশিত জায়গায় পৌঁছতে পারি, তখন লোভ, উদাশীনতা, হিংসা, ক্রোধ বাড়তে থাকে। দেশ এবং দেশের মানুষের প্রতি দায়িত্ব ও ভালোবাসা ধীরে ধীরে কমে যায়। আমরা আমাদের সুমহান আদর্শকে আর ধরে রাখতে পারি না। যা আমাদের কৃতকর্মের মাধ্যমেই ফুটে উঠে।

বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত আর জীবন ত্যাগের বিনিময়ে শত শত বছরের পরাধীনতা আর গোলামীর শিকল ভেঙ্গে ১৯৭১ সালে ছিনিয়ে এনেছেন স্বাধীনতার পূর্ণস্বাদ ও লাল- সবুজের একটি পতাকা। এ লাল-সবুজের পতাকা যে মর্যাদা নিয়ে এসেছে আমরা তা ধরে রাখতে পারছি না। পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ, খুন, রাহাজানি, ধর্ষণ এবং দুর্নীতি তারই প্রমাণ বহন করে।

আজকের শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যতের বাংলাদেশ এদের হাত দিয়েই সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। শিশুদের শুধু শপথ বাক্য পাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এর তাৎপর্য ও আবেদন তাদের অন্তরে গেঁথে দিতে হবে। দেশের প্রতি দায়িত্ব এবং ভালোবাসা যেন একেবারে মন থেকে আসে। তাহলেই, ছোট বেলায় বাবার হাত ধরে খালি পায়ে প্রভাত ফেরিতে যাওয়া শিশুটি বড় হয়ে জুতা পায়ে দিয়ে শহীদ মিনারে উঠবে না। ছোট খাটো ইস্যু নিয়ে রাস্তায় গাড়ি ভাঙ্গতে যাবে না।মাদকাসক্ত কিংবা ধর্ষণ নামক সামাজিক ব্যাধিতে নিজেকে বিলিয়ে দিবে না।

প্রতিটি জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে শিশুদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাদের মুগ্ধ করে। জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকার প্রতি তাদের ভালোবাসায় স্পষ্টই দেশপ্রেম ফুটে উঠে। এই আবেগ, এই অকৃত্রিম ভালোবাসা আজীবন ধরে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, এই দেশ, এই পতাকা কেউ আমাদের করুণা করে দেয়নি। বহু ত্যাগ আর প্রাণের বিনিময়ে আমরা এসব পেয়েছি।

এ দেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে গড়ে তুলে ভাষা, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে জাতীয় অর্জনের সুফল ভোগ করতে হবে। সত্যিকার অর্থে ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে হবে। পারস্পরিক ভালোবাসা, শ্রদ্ধাবোধ আর পরমতসহিষ্ণুতা দেশপ্রেমেরই অংশ।সহপাঠীদের সাথে উত্তম ব্যবহার, তাদের প্রতি আন্তরিকতা, অপরের দুঃখে পাশে দাঁড়ানো এসব শিশুদের শেখাতে হবে এবং অভ্যস্ত করতে হবে। পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ, মা-বাবা এবং শিক্ষকদের সাথে উত্তম ব্যবহার, সর্বদা সত্য বলা, নৈতিকতার অভ্যাস প্রাথমিক পর্যায়েই আয়ত্ত করতে হবে।

আসুন, আমরা আমাদের সন্তানদের ছোটবেলা থেকেই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করি। দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি জানতে সহযোগিতা করি। দেশের মঙ্গল হয় এমন কাজ করতে উৎসাহ দেই। মানুষের ক্ষতি তথা দেশের ক্ষতি হয় এমন কিছু করতে তাদের নিরুৎসাহিত করি। শিশুদের সঠিক পথে পরিচালনা করতে যদি না পারি, সত্যিকার অর্থে সোনার বাংলা গড়া হয়তো স্বপ্নই থেকে যাবে।
লাখো শহীদের রক্তে ভেজা এ স্বদেশের কল্যাণে কাজ করবো এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

লেখক: সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার