ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি তার সন্তানদের কান্না শুনতে পায়?
বছরের শুরুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। হলের ক্রীড়া অনুষ্ঠানে সবাইকে টি-শার্ট দেয়া হয়। এবারো দেয়া হয়েছে। শুনেছি গতবারের চেয়ে উন্নতমানের টি-শার্ট দেয়া হয়েছে। এই টি-শার্ট যারা নিয়ে থাকেন তাদের মধ্যে এমনও অনেক ছাত্র থাকেন যারা এই একটি মাত্র পোশাক পড়ে কাটিয়ে দেন বছরের অর্ধেকটা সময়। তেমন শিক্ষার্থীদের একজন তরুণ হোসেন। সে আমার গণরুমের বন্ধু। হতাশ জীবনকে যিনি উঁচু ভবন থেকে লাফিয়ে পড়ে বিদায় জানিয়েছেন।
তরুণের চলে যাওয়ার আজ এক বছর হল। অনেকক্ষণ ধরে ভেবেও বাক্য সাজাতে পারিনি। কি লিখবো, তরুণের কথা মনে পড়লে স্তব্ধ হয়ে যাই। গণরুমে যার ঘুমানোর জায়গা ছিল না। আজ সে কত নীরবে ঘুমাচ্ছে। গভীর সেই ঘুম ভাঙানোর ক্ষমতা কারো নেই। না ক্ষমতাশালী কোন নেতার, না রাজনৈতিক কোন কর্মীর। অথচ কতদিনই গেস্ট রুম থেকে বিশেষ দূত পাঠানো হত তরুণকে ধরে আনার জন্য। তরুণের অসহায় অবস্থা দেখে কখনো কখনো গেস্ট রুমের বড় ভাইরাও তাকে সামান্য বকাঝকা করে ছেড়ে দিত।
কিন্তু ফিনান্সের মত বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করার মত শক্তি তরুণ গণরুমে থেকে থেকে হারিয়ে ফেলেছিল। ফলে বছর বছর রেজাল্ট খারাপ হতে থাকে। এই খারাপ রেজাল্ট তাকে হতাশার চরম পর্বে নিয়ে যায়। কম সিজিপিএ নিয়ে তো অনেকেই বেঁচে থাকে, কিন্তু তরুণ কেন চলে গেল? তরুণের গায়ের গড়ন ছিল ছোট আর রং ছিল কালচে। ফলে নানা রঙের এই রঙিন পৃথিবী শৈশবে মা হারানো এই ছেলেটিকে বঞ্চিত করেছে সব ধরণের ভালবাসা থেকে। সবাই গণরুমে থাকে বছর খানেক। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মসূচি থেকে দূরে থাকা ও ‘বড় ভাই’র কাছে ধরনা না দেয়ায় তরুণকে গণরুমে পঁচতে হয়েছে দ্বিগুণ সময়। তৃতীয় বর্ষে উঠে ঘুমানোর মত একটি সিট জুটলেও ‘বেঁচে’ থাকার মত পৃথিবী সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল তার।
২০১৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তরুণ চলে গেলেও গণরুম রয়ে গেছে আজও। সেখানে পিতৃপরিচয়হীন কিংবা নিজ দেশ থেকে পালিয়ে আসা বাস্তুহারা মানুষের মত করে এখনো ঘুমায় হাজারো তরুণ। আর প্রতিটি রাত তাদের প্রস্তুত করে দিচ্ছে ভবিষ্যতের হতাশার জন্য! রোহিঙ্গা শিশুদের কান্না শুনছে বাংলাদেশ। শত বছরের দ্বার প্রান্তে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সে কি তার সন্তানদের কান্না শুনতে পায়?
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।