বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল কি আমাদের শিক্ষার গুণগত মানের পরিচায়ক?
- এম এ মতিন
- প্রকাশ: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪২ PM , আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪২ PM

এখন বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষা চলছে। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজমান। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এতদুদ্দেশ্যে শশব্যস্ত। গুচ্ছপরীক্ষার পরিবর্তে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ও জেলা শহরে পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। শিক্ষকরা তদারকির উদ্দেশ্যে কেন্দ্র থেকে কেন্দ্র ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এতে অবশ্য টু পাইস ইনকামও হচ্ছে। অনেকের মাঝখান থেকে সর্বোত্তম কিছু চিহ্নিত করতে হলে বাছাই প্রক্রিয়াই কার্যকর ও সর্বজনগ্রাহ্য পদ্ধতি। তা না করে কোন বস্তুকে সর্বোত্তম বলা কিংবা কোন ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ আসনে স্থান দেয়া অযৌক্তিক বলে প্রতীয়মান হয়। বাছাইয়ের প্রক্রিয়া বস্তু কিংবা ব্যক্তির ক্ষেত্রে ভিন্ন হওয়া স্বাভাবিক।
আর এই প্রক্রিয়ার ভিত্তি হওয়া উচিৎ চলক এবং খুব স্বাভাবিক কারণেই একাধিক চলক। চলক যত বেশী হবে বাছাই প্রক্রিয়ার মান এবং বাছাইকৃত বস্তু কিংবা ব্যক্তির মান তত ভালো হবে। অনুরূপভাবে ভালো কিংবা সর্বোত্তম ছাত্র-ছাত্রী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও চলকের ব্যবহার অপরিহার্য। সর্বোত্তম ছাত্র-ছাত্রী বাছাইয়ের বৈশ্বিক পদ্ধতি হচ্ছে– পরীক্ষা গ্রহণ। এ লক্ষ্যে নানাবিধ পদ্ধতি চালু রয়েছে। যেমন – লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক পরীক্ষা, দক্ষতা পরীক্ষা, ব্যক্তিত্ব পরীক্ষা, মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা, শারীরিক পরীক্ষা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ইত্যাদি।
বিভিন্ন চাকরির জন্যে এ সকল পরীক্ষা দিতে হয়। স্কুল কলেজের পাঠক্রমেও রয়েছে পরীক্ষা। আর বাৎসরিক পরীক্ষা তো আছেই। আর এক জায়গায় আমাদের ছেলেমেয়েদের কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয় তা হলো ভর্তি পরীক্ষা। ভালো স্কুল কলেজে ভর্তির জন্যে যেমন পরীক্ষা দিতে হয় তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্যেও পরীক্ষা দিতে হয়। উচ্চমাধ্যমিক পাশের পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তির পরীক্ষা দিতে হয়। এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য হচ্ছে অধিক সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর মধ্য থেকে উত্তমদের বেছে নেয়া। প্রতি বছর দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা এক বিরাট যজ্ঞ। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর কয়েক মাস চলে এই যজ্ঞ। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে ভয়-আতংক, আশা-নিরাশা, অর্থব্যয়, দূরবর্তী শহর ভ্রমণের ঝক্কি-ঝামেলা ও আর্থিক খরচা সব মিলিয়ে বিরাট চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি হয়। তবে এই চ্যালেঞ্জ দেশের গুটি কয়েক সরকারী ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
দেশে এমন অনেক সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যেগুলোতে ভর্তি হতে কোন পরীক্ষার প্রয়োজন নেই – এমন কি আসন খালি পড়ে থাকে। ভর্তি পরীক্ষার ঝক্কি-ঝামেলার কথা চিন্তা করে উচ্চশিক্ষা কতৃপক্ষ বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা এক দিনে স্ব স্ব জেলা-উপজেলা শহরে নেয়ার লক্ষ্যে বোর্ডের পরীক্ষার মত ‘গুচ্ছপরীক্ষা’ চালুর প্রস্তাব করেছিলেন। বিভিন্ন মহল থেকে এ প্রস্তাব প্রশংসিতও হয়েছিল। কিন্তু বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিজেরা নিজেদের মত নিয়ে চলেছেন।
সংশ্লিষ্টদের অনেকে মনে করেন– এটি অযৌক্তিক। কেননা বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সমাজবিজ্ঞান, কলা এ সকল বিষয়ে মেধা যাচাইয়ের জন্যে যথাযথ প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হলে ছাত্রছাত্রীরা যেখান থেকেই পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করুক না কেন তাদের প্রাপ্ত নম্বর/স্কোরের ভিত্তিতে মেধা তালিকা প্রণয়ন সম্ভব এবং এর ভিত্তিতে ক্রমানুসারে বুয়েট, ঢাবিসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ভর্তি করতে পারে। প্রয়োজনে মৌখিক পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে অনেকে জিআরই, জিম্যাট, আইইএলটিএস– এর উদাহরণ তুলে ধরেন।
যাই হোক, দেশের ৪৮টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষ স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে আসন আছে ৬০ হাজার। এই ৬০ হাজার আসনের জন্যে প্রতিযোগী হচ্ছে ১০ লাখ প্রার্থী (এই বছর উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে ১০ লাখেরও বেশি ছাত্রছাত্রী। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজারের উপর)। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও বেসরকারি ১০৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে আসন আছে ২ লাখ ৩ হাজার ৬৭৫টি। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২ হাজার ২১৫টি সরকারি ও বেসরকারি কলেজে ৮ লাখ ৭২ হাজার ৮১৫ আসন রয়েছে। তাই সরকারি তরফে বলা হয়, দেশে উচ্চশিক্ষার আসনের কোন ঘাটতি নেই। তবে সমস্যা হচ্ছে হাতে গোনা নামীদামী গোটা কয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা
যুক্তির খাতিরে ধরে নেয়া যাক, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ে মেধাবীরাই ভর্তি হতে চাইবে। সে হিসেবে জিপিএ ৫ প্রাপ্তরাই অগ্রগণ্য। বাকীদের কথা বাদই দিলাম। জিপিএ ৫ প্রাপ্তির অর্থ হচ্ছে তিনি প্রতি বিষয়ে শতকরা ৮০ এর উপরে নম্বর পেয়েছেন। সুতরাং ধরে নেয়া যায় এরা মেধাবী এবং ভবিষ্যতে এরাই হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রশাসনিক ও অর্থ বিষয়ক কর্মকর্তা, ইত্যাদি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এরা খারাপ করে কেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) অতি সাম্প্রতিক ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলের চিত্র আমাদের কী ইঙ্গিত দেয়?
২০২৩-২৪ শিক্ষা বর্ষে ঢাবি’র কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে পাশের হার মাত্র ৯.৮৫ শতাংশ। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৯০.১৫ ভাগ অকৃতকার্য হয়েছে। অবশ্য এবারের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় গড় পাসের হার ছিল ৮৫.৯৫ শতাংশ। বিগত ৬ মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭টায় এ ফল প্রকাশিত হয়েছে। ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে এই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১ লাখ ২৫ হাজার ৪৯৯ ভর্তিচ্ছুর মধ্যে অংশগ্রহণ করেন ১ লাখ ১৪ হাজার ৯০৪ জন। পরীক্ষা মোট উত্তীর্ণের সংখ্যা ১১ হাজার ৩১০। এর মধ্যে মানবিকের ৫ হাজার ৭১৪, বিজ্ঞানের ৪ হাজার ৮৫৭ এবং ব্যবসায় শিক্ষার ৭৩৯ জন। এবার কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে মোট ২ হাজার ৯৩৪টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে মানবিকের ১ হাজার ৭০৭টি, বিজ্ঞানের ৯৪৪টি এবং ব্যবসায় শিক্ষার ২৮৩টি। (প্রথম আলো, দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস, ৬ মার্চ ২০২৫)।
গত ২৪ মার্চ ২০২৫ তারিখে ঢাবি’র ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ভর্তি প্রোগ্রামের বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এই পরীক্ষায় পাসের হার ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ। ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৯৪ দশমিক ০৭ শতাংশই ফেল করেছেন। জানা যায়, বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় এ বছর মোট পাস করেছে ৭৪৩৭ জন। এর মধ্যে বিজ্ঞান থেকে পাস করেছে ৬৯২২জন, মানবিক থেকে ৩৯৩ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ১২২ জন। (দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস, ২৪ মার্চ ২০২৫ইং)।
অন্যদিকে চবি’র প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার এ ইউনিটের ফল প্রকাশিত হয়েছে। এই ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৯১ হাজার ৭৩৯ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। তবে এর মধ্যে পাস করেছেন ২৯ হাজার ৪১১ জন। আর ফেল করেছেন ৫৯ হাজার ৫১১ জন। বাকিদের উত্তরপত্র বাতিল হয়েছে। পাশের হার ৩২.০৫। বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, প্রকৌশল, মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ অনুষদের সব বিভাগ নিয়ে গঠন করা হয়েছে এ ইউনিট। এই ইউনিটে ১ হাজার ১২৩ সাধারণ আসনের বিপরীতে আবেদন করেছিলেন ১ লাখ ৯ হাজার ৮১ জন। তবে পরীক্ষা দেন ৯১ হাজার ৭৩৯ জন। ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় পাসের জন্য সর্বনিম্ন নম্বর ধরা হয়েছিল ৪০। এর বাইরে আলাদা করে বাংলায় ১০ নম্বরের মধ্যে ৩ আর ইংরেজিতে ১০ নম্বরের মধ্যে সর্বনিম্ন পাস নম্বর ৪ নির্ধারণ করা হয়েছিল। (আমাদের বার্তা ৬/৩/২৫ইং) ।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০২৩-২৪ সেশনের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ‘এ’ ইউনিটের ফলাফলে দেখা যায়, এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনকারী সংখ্যা ছিল ৭৪ হাজার ৭৮৫ জন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৬৮ হাজার ৬০৭ জন শিক্ষার্থী। এতে পাশ করেছে ২৬ হাজার ৫৯১ জন শিক্ষার্থী। গড় পাশের হার ৩৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অবশ্য উচ্চমাধ্যমিকে পাশের হার ছিল ৯০ এর কাছাকাছি। এ বছরকার (২০২৪-২৫) এ রাবি’র ভর্তি পরীক্ষা এখনও অনুষ্ঠীত হয়নি। (ইত্তেফাক ১৩/৩/২৪ইং)। উল্লেখ্য, বুয়েট, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল এর কোন তথ্য সংবাদ মাধ্যমে পাওয়া যায়নি।
ভর্তি পরীক্ষায় কী প্রশ্ন করা হয়?
উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তক থেকেই প্রশ্ন করা হয়। ইংরাজী ও গণিত প্রশ্ন হয় মাধ্যমিকের আদলে। পাশ নম্বর ৩৫/৪০ ধরার পরেও তা হলে পাশের হার এত কম কেন? সংগত কারণেই প্রশ্ন জাগে এ সকল ছাত্রছাত্রী জি পি এ ৫ পেল কেমন করে? এর উপর সুনির্দিষ্ট কোন গবেষণা না থাকলেও অভিজ্ঞতার আলোকে বলা যেতে পারে – কলেজগুলোতে পাঠ্যক্রম অনুযায়ী কোন বিষয়েই পরিপূর্ণ পাঠদান করা হয় না। ছাত্রছাত্রীরা পাঠ্যপুস্তক আগাগোড়া না পড়ে বেছে বেছে কয়েকটি প্রশ্ন আয়ত্ব করে পরীক্ষা পাশের জন্যে। আর শিক্ষক কতৃক সাজেশন নামক টুটকার প্রচলন তো আছেই। পাঠ্যপুস্তকই যেখানে ছাত্ররা পড়ে না সেখানে রেফারেন্স বই পড়ার তো প্রশ্নই উঠে না। সার্বিকভাবে একজন ছাত্রের একটি বিষয়ে যতটুকু পড়াশুনা করার কথা, সেই বিষয়ে যা জানার কথা তার শতকরা ৫০ ভাগও একজন ছাত্র অর্জন করতে পারে না। এ জন্যে অবশ্য ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারে ছাত্রছাত্রীদের অতিরিক্ত সময় ব্যয় ভাল ফলাফলের অন্যতম বাঁধা বলে অনেকে বলে থাকেন।
বিগত দশকে বাংলাদেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার অবস্থা
আমরা জানি, বিগত দেঢ় দশকের বেশী সময় একটি দল দেশ শাসন করেছে। এই দীর্ঘ সময় সময় শিক্ষাসহ দেশের আর্থ-সামাজিক সকল ক্ষেত্রে ঐ সরকার জনমত কিংবা বিজ্ঞজনদের মতামতের তোয়াক্কা না করে একনায়কসূলভ আচরণ করেছে। আমরা লক্ষ্য করেছি, এই সময়ে শিক্ষার হার এবং পরীক্ষা পাশের হার জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল। পাশের হার বাড়ানোর জন্যে পরীক্ষকদের শিক্ষাবোর্ডে ডেকে এনে পাশ করিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে এই দীর্ঘ সময় পাশের হার ৮০-৮৫ শতাংশের নিচে আসেনি কখনও। এতো গেল শিক্ষাব্যবস্থা ভেংগে পড়ার একদিক। অন্যদিকে জীবনমুখী ও কর্মমুখী শিক্ষা চালুর নামে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে পাঠক্রমের খোল-নলচে বদলে ফেলে এক নৈরাজ্যকর অবস্থার সৃষ্টি করা হয়েছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা গোটা সমাজে। স্মর্তব্য, শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনের লক্ষে ২০০৯ সালে সরকার কবীর চৌধুরী শিক্ষা কমিশন গঠন করে।
সেই কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন না করে সরকার অপেক্ষাকৃত অনুল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে ২০১৭ সালে ‘জাতীয় পাঠক্রম কমিটি’ গঠন করে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে নতুন শিক্ষাক্রমের চাহিদা নিরূপণ ও বিশ্লেষণের কাজ শুরু হয়। কমিটির দাবী, একাধিক গবেষণা ও বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শক্রমে ২০২১ সালে 'জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১' তৈরি করা হয়। সরকারের অনুমতিক্রমে ২০২২ সালে ৬০টি স্কুলে পরীক্ষামূলকভাবে এটি চালু করা হয়। এর ফলাফলের ভিত্তিতে ২০২৩ সালে সারা দেশে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যক্রম চালু করা হয়।
নতুন শিক্ষাক্রমে দশম শ্রেণির আগের সব পাবলিক পরীক্ষা তুলে দেওয়া হয়েছিল। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা পদ্ধতিতেও আনা হয়েছিল পরিবর্তন। এ ছাড়া নবম শ্রেণিতে বিভাগ পছন্দের সুযোগ বাতিল করা হয়। অবশ্য একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা পছন্দমতো বিভাগ নেয়ার সুযোগ পেত। সুতরাং নূতন পাঠক্রমে পরীক্ষা বাদ দেয়ার সংস্কৃতি ছাত্রছাত্রীদের পাঠবিমুখ করার বিরাট সুযোগ করে দেয়। অবশ্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অভিভাবকসহ বিভিল্ল গোষ্ঠীর চাপে এই পাঠক্রম বাতিল করে পূর্বতন পাঠক্রমে শিক্ষাদানের নির্দেশ দিয়েছেন।
শিক্ষার শক্ত ভিত্তি তৈরি হয় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায় থেকে। কিন্তু অপ্রিয় হলেও এ কথা সত্য যে, এই দুই স্তরে আমাদের শিক্ষাববস্থার অবকাঠামো, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত, শিক্ষাদান পদ্ধতি, শিক্ষকদের সন্মানজনক বেতন কাঠামোর অনুপস্থিতি, শিক্ষার গুণগত মান, ইত্যাদি দিক থেকে যথেষ্ট ভঙ্গুর অবস্থায় বিদ্যমান। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) রিপোর্ট মতে, দেশে সরকারি প্রাথমিক, কিন্ডারগার্ডেন, এনজিও পরিচালিত মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ১ লাখ ২৯ হাজার ২৫৮টি। এর মধ্যে ৬৫ হাজার ৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষক ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৩৬৬ জন। আর শিক্ষার্থী ১ কোটি ৪১ লাখ ৪৪৫ জন। এই হিসেবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত হয়ে ১:৩৯ জন। আবার ২০ হাজার ৬০০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ১ কোটি ৩ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৩ জন, শিক্ষক ২ লাখ ৪৬ হাজার ৮৪৫ জন। অর্থাৎ মাধ্যমিক স্তরে সারাদেশে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত ১:৪২ জন। আর কলেজে ৫০ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ১৬ হাজার। শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত ১ঃ৩১২। অথচ আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে কলেজে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত ১:২০।
পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাবে গতানুগতিক ধারার শিক্ষাতেই কার্যকর শ্রেণিব্যবস্থাপনা ব্যাহত হয়ে আসছে বহুকাল ধরে। এ ছাড়া সারাদেশে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকের অভাব তো রয়েছেই। শহরগুলোতে এটা কম হলেও গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে তা বিরাট বড় সমস্যা। যেখানে গণিত শিক্ষকের দ্বারা বিজ্ঞানের ক্লাস নেওয়া, ইংরেজি শিক্ষকের দ্বারা ইতিহাস ক্লাস নেওয়া স্বাভাবিক বিষয় বলেই ধরে নেওয়া হয়, সেখানে কি করে আশা করা যায় যে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের যথাযথ জ্ঞান অর্জন সম্ভব । বর্ণিত অবস্থার মধ্যে যে সকল ছাত্রছাত্রী উচ্চমাধ্যমিকে পা দেয় তাদের শিক্ষার মৌলিক ভিত্তি থাকে সঙ্গত কারণেই খুবই দুর্বল। আর কলেজের শিক্ষক ছাত্র অনুপাত (১:৩১২) তো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে কতটা সুশিক্ষা আমাদের ছেলেমেয়েরা পাচ্ছে আমদের কলেজগুলোতে?
এ ছাড়া নতুন শিক্ষাক্রমে একীভূত শিক্ষা অর্থাৎ ধনী, দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত, গ্রামীণ-শহুরে, বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন, সুবিধাবঞ্চিত সকল শিক্ষার্থীর জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধার অবকাশ রেখে সমতা ও ন্যায্যতাভিত্তিক শিক্ষার কথা বলা হয়েছিল বটে কিন্তু নতুন পাঠ্যবইগুলোতে একীভূত শিক্ষা বাস্তবায়নে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের শিখনে সহায়ক কোনো বিশেষ ব্যবস্থা বা প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ছিল না। এসব ছাড়াও পাঠ্যবই এর বড় দাগের ভুলগুলোর সমালোচনা তো ছিলই। এই অল্প কয়েকটি বই তৈরিতেই এতোগুলো বড় আকারের ভুল রীতিমতো সকলের মনে শংকা জাগিয়ে দিয়েছিল সরকার কাদের দিয়ে এত বড় একটা জাতীয় গুরুত্বপুর্ণ কাজ করিয়েছিলেন?
এতো দীর্ঘ প্রচেষ্টা, দীর্ঘ সময়ের পর এটা মোটেও প্রত্যাশিত ছিল না। আরো একটা বিষয় না বললেই নয় – সেটি হলোঃ নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নের মূল কাজটি সরেজমিনে করতে হয় বিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষকদেরই। এখানে প্রয়োজনীয় শিক্ষণ সামগ্রী সংগ্রহ, তৈরি, প্রদর্শন, প্রয়োজনীয় উপকরণ যোগান, নিয়মিত অভিভাবকদের সমাবেশ নিশ্চিত করা - এসবের জন্য ছিল না কোনো নির্দিষ্ট বাজেট। হতাশাজনক হলেও সত্যি যে শিক্ষকতাই এদেশে সবচেয়ে অবহেলিত পেশা, জীবন জীবিকার প্রয়োজনীয় সামগ্রী যোগানেই হিমশিম খাওয়া শিক্ষকদের কাছে এসব মরার উপর খাঁড়ার ঘাঁ এর মতোই বিষয়। সুতরাং প্রাথমিক ও মাধ্যমিক এবং কলেজ পর্যায়ে শিক্ষক ছাত্র অনুপাত হ্রাষের লক্ষে শিক্ষক সংখ্যা অবশ্যই বাড়াতে হবে। বিশ্বমানের না হলেও একটি যৌক্তিক গ্রহণযোগ্য অনুপাত বের করার জন্যে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কলেজপর্যায়ে শিক্ষক সংখ্যা দ্বিগুণ করার একটি টাস্ক ফোর্স সরকারকে অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়া শিক্ষকদের বেতন কাঠামো বাজারমূল্য বিবেচনা করে ঈপ্সিত পর্যায়ে নিতে হবে।
বাজেট বরাদ্দ
আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে একটি দেশের শিক্ষা খাতে মোট জাতীয় আয়ের ৬ শতাংশ এবং বাৎসরিক বাজেটের ২০ শতাংশ বরাদ্দকে আদর্শ হিসেবে ধরা হয়, যা ২০০০ সালে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সম্মতিতে স্বাক্ষরিত ‘ডাকার ঘোষণা’য়ও বলা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ জাতীয় আয়ের দুই শতাংশেরও কম (১.৭৬) এবং বাৎসরিক বাজেটের ১১ দশমিক ৮ শতাংশ, যা আফ্রিকার অনেক দরিদ্র দেশের চেয়েও কম। এছাড়া, বাংলাদেশের শিক্ষা খাত নিয়ে বিশ্বব্যাংকের পর্যালোচনা প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে, উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বা বরাদ্দে যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে, উন্নয়নশীল দেশগুলো শিক্ষা খাতে গড়ে বাৎসরিক বাজেটের ১৮.৭ শতাংশ বরাদ্দ রেখেছে। আগামী ১০ বছরে উদীয়মান অর্থনীতিতে পরিণত হতে হলে বাংলাদেশকে মাধ্যমিক, কারিগরি, বৃত্তিমূলক ও উচ্চশিক্ষায় বিনিয়োগ অবশই বাড়াতে হবে।
ফলে শিক্ষাখাতে ব্যয় জাতীয় আয়ের (জিডিপি) ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ থেকে ৬ শতাংশে এবং জাতীয় বাজেটের বরাদ্দ ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশে উন্নীত করার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সকলের মাথায় রাখতে হবে। আর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উচ্চ শিক্ষায় অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যয় বাড়াতে হবে। বিগত বছরগুলোতে দেশে বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টে তৎকালীন সরকার ব্যয় বরাদ্দ বাড়ালেও শিক্ষাখাত অবহেলিতই রয়ে গিয়েছে। অনেকে মনে করেন জাতিকে শিক্ষায় দুর্বল করার জন্যে পরিকল্পিতভাবে খিক্ষাখাতে ব্যয় বরাদ্দ হ্রাষ করা হয়েছে এবং পাশের হার যথেচ্ছ বাড়িয়ে শিক্ষাকে করা হয়েছে পংগু ও মানহীন। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা কতটা মানহীন হয়েছে তার প্রমাণ মিলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে।
বিজ্ঞজনেরা মনে করেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার এই নাজুক অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় হচ্ছে সর্বজনীন বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা। জাতিসংঘ আরোপিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এস ডি জি) এর লক্ষ্য ৪ (গুণগত শিক্ষা) বাস্তবায়নের লক্ষে সরকারকে ২০৩০ সালের মধ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক সর্বজনীন বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করতে হবে এবং শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করতে হবে। এ জন্যে শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধি, ঝরে পড়া ছাত্র সংখ্যা হ্রাষ, বাধ্যতামূলকভাবে সকল শিশুকে বিদ্যালয়ে আনা, যথাসময়ে পঠন সামগ্রী সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। উল্লেখ্য, দারিদ্রসীমার নিচে অবস্থানকারী শিশুদের দুইবেলা আহারের ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে। কেননা এ সকল শিশু বিদ্যালয়ে না গিয়ে গৃহস্থালি কাজে বাপ-মাকে সাহায্য করে থাকে। বিবিএস-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ সকল শিশুর সংখ্যা শতকরা ১০ এর কাছাকাছি।
শিক্ষক নিয়োগ ও করণীয় অন্যান্য বিষয়
যোগ্য, দক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক নিয়োগদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা বিভাগ ও দাতা সংস্থার বিভিন্ন প্রতিবেদন এবং প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধের প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায় বাংলাদেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত ম্যান ক্রমশ নিণ্মগামী। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বৃহৎ দাতাসংস্থা ইউনিসেফ এবং বিশ্বব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার মান শ্রীলঙ্কা ও ভারতের চেয়ে খারাপ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা যা জানে বাংলাদেশের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা তা জানে না। আর এরা যখন মাধ্যমিকের পর উচ্চমাধ্যমিক পার হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে যায় তখন ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রমাণ করে যে, আমাদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পড়াশুনার মান আসলেই নিন্মমুখী।
তাই আমাদের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পড়াশুনার মান বৃদ্ধির জন্যে অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ, শিক্ষকদের জন্যে উপযুক্ত বেতন কাঠামো নির্ধারন, পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাপনার নিবিঢ়তর পরিবীক্ষণ, লক্ষ্যভিত্তিক শিক্ষাক্রম চালু ও তা বাস্তবায়নের জন্যে কঠোরতর সিদ্ধান্ত গ্রহণ – লক্ষ্য অর্জনকারীর উপযুক্ত পুরস্কার ও ব্যর্থতায় শাস্তি প্রদানের সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা থাকতে হবে। শিক্ষাবিভাগ থেকে দুর্নীতি নামক ব্যধি চিরতরে উৎখাত করতে হবে। আর এ সকল কিছুর জন্যে ‘ডাকার চুক্তি’ অনুসারে শিক্ষাখাতে ক্রমান্বয়ে জিডিপি’র অন্তত ২.৫০ শতাংশ থেকে শুরু করে ৪-৫ শতাংশ এবং বাৎসরিক বাজেটে বরাদ্দ ২০ শতাংশ না হলেও ১৭-১৮ শতাংশ তো রাখতেই হবে।
লেখক: উপদেষ্টা, গ্রন্থাগার ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ ও প্রক্টর, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, আশুলিয়া এবং প্রাক্তন পরিচালক, বাংলাদেশ লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি), সাভার, ঢাকা।
ই-মেইল: amatin@aub.ac.bd