তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা বারবার রেলপথ কেন অবরোধ করছেন?

আশরাফুল ইসলাম
আশরাফুল ইসলাম

তিতুমীর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় হবে কী না সেটা সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা আজ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন। এরপরও বিষয়টি নিয়ে অহেতুক জলঘোলা করার চেষ্টা চলছে। কী কারণে এই জলঘোলার অপচেষ্টা-সে ব্যাখ্যায় যাওয়ার আগে রেলের একটা আইন সম্পর্কে একটু জানা যাক। 

বাংলাদেশে রেলের কর্মকাণ্ড পরিচালনায় 'রেলওয়ে আইন ১৮৯০' নামের একটি আইন রয়েছে। এই আইন অনুসারে, রেললাইন ও এর দুই পাশে ১০ ফুট করে ২০ ফুট এলাকায় বছরের প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টাই ১৪৪ ধারা জারি থাকে। অর্থাৎ রেললাইনের আশপাশ দিয়ে হাঁটা চলা অথবা অবস্থান করা আইনত দণ্ডনীয়। এ কারণেই ট্রেনে কাটা পড়ে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে কোনো মামলা অথবা বিচার হয় না। 

জেনে হোক না জেনে হোক, তিতুমীর কলেজের কিছু ছাত্র দাবি আদায়ের নামে গত কিছুদিন ধরেই এই দণ্ডনীয় অপরাধটি অবলীলায় করে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক দলগুলো যে কাজ করার আগে দুই বার ভাবে, আপনি তিতুমীর কলেজের ছাত্র বলেই দাবি আদায়ের জন্য রেলপথ অবরোধ করে ফেলবেন-ব্যাপারটি এতো সস্তা নয়, হওয়ার সুযোগ নাই। খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে, এমনটি তাহলে কেন ঘটছে?

আরও পড়ুন: তিতুমীর শিক্ষার্থীদের মহাখালীতে বিক্ষোভ, রেলপথ অবরোধ

কারণটি খুব স্পষ্ট-মহাখালি ঢাকা শহরের এমন একটি স্থান যেটি অবরোধ করতে পারলে আসলে পুরোপুরি শহরই কিছুক্ষণের মধ্যে অচল করে ফেলা যায়। মহাখালি রেলক্রসিং দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক যাত্রীবাহী ট্রেন সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আসা যাওয়া করে। শুধুমাত্র এই একটি রেল ক্রসিং আর মহাখালির সাথে যুক্ত এয়ারপোর্ট সড়ক আটকালেই ঢাকা শহর কার্যত শেষ।  দাবি আদায়ের জন্য বারবার এই দুটি স্থানকে লক্ষ্যবস্তু করার পেছনে মতলব একটাই-সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করার এই খেলার চ্যাম্পিয়ন দল কে বা কারা-উত্তরটা সবাই জানে।

ঢাকা শহরের বাসিন্দা হিসেবে সরকারকে বলবো, এদের বিষয়ে কঠোর হতে। সহনশীলতা দেখানো মানেই দুর্বলতা নয় এটা তিতুমীর কলেজ শিক্ষার্থীদের বুঝাতে হবে। কোনোভাবেই ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে কেউ যাতে রেলপথ অবরোধ করে লাখো মানুষকে জিম্মি করতে না পারে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আন্দোলনের নামে কেউ যদি ট্রেনে ঢিল দিয়ে কোনো শিশু যাত্রীর মাথা ফাটিয়ে ফেলে তার বিরুদ্ধে কঠাের আইনের প্রয়োগ করতে হবে। ছাত্র বলে এখানে নরম হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন: শিক্ষার্থীদের অবরোধ: মহাখালী রেলগেটে ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরােধ, মানুষকে এভাবে জিম্মি করা বন্ধ করুন। এখন আপনাদের যদি প্রশ্ন করা হয়, গত ১৬ বছর এই দাবি নিয়ে আপনারা কী একবারও রেলপথ অবরোধ করেছেন? তাহলে এখন কেন করছেন?

ভাইয়েরা, নিজেদের ব্র্যান্ড ইমেজের দিকে একটু খেয়াল রাখেন। আপনাদের আশে-পাশেই ঢাকা শহরের সব গুরুত্বপূর্ণ করপোরেট অফিস। তারা আপনাদের কি চোখ মূল্যায়ন করে এটা কিন্তু আপনাদের ভবিষ্যতে কর্মজীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আমি ব্যক্তিগতভাবে তিতুমীর কলেজের একাধিক শিক্ষার্থীকে চিনি যারা অনেক কষ্ট করে কোনো  প্রতিষ্ঠানে কাজ করে, পাশাপাশি পড়ালেখা করে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এরা বাড়িতে টাকাও পাঠায়। বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া না হওয়ায় তাদের তেমন কিছু আসে যায় না। কারণ তারা জীবন যুদ্ধে ইতোমধ্যেই জয়ী।

একটা প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার প্রথম শর্ত হলো, সেই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা কতটা গবেষণামুখী? দ্বিতীয়ত, গবেষণা করার কতটুকু সুযোগ-সুবিধা সেখানে বিদ্যমান। তৃতীয়ত, অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধার মান-এর মধ্যে ক্যাম্পাসের আয়তন, অ্যাকাডেমিক ভবন, শিক্ষকদের সুবিধা ইত্যাদি বিষয় জড়িত। এই তিনটির কোনোটাই তিতুমীর কলেজ পূরণ করে না, ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা করা হলেও এ সব শর্ত পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা শূন্য। 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখলাম, নেতা গোছের এক শিক্ষার্থী আন্দোলনের ঘোষণা দিতে গিয়ে বলছে, একলা (১লা) ফেব্রুয়ারি!। পহেলা অথবা পয়লা ফেব্রুয়ারিকে শুদ্ধভাবে উচ্চারণ করতে যে শিক্ষার্থী জানে না তাদের হাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের নেতৃত্ব তুলে দেওয়ার বিপদ কী আমরা অনুধাবন করবো না?

লেখা: লেখক ও সাংবাদিক


সর্বশেষ সংবাদ