উন্নয়নের কক্ষপথ থেকে দেশ যেন পিছলে না যায়
জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৩০শে ডিসেম্বর। চারিদিকে তুমুল আলোচনা, সমালোচনা, প্রস্তুতি চলছে। স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর এই নির্বাচন অনেক তাৎপর্যপূর্ণ। তরুণ প্রজন্মের পাশাপাশি প্রবীণদেরও ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা আসলে আমাদের দেশকে কোথায় দেখতে চাই।
অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে আমাদের দেশ আজ অনেকটাই তার সঠিক কক্ষপথে ফিরে এসেছে। প্রথমেই ধরা যাক বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার কথা। যেখানে ৩০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হিমশিম খেতে হয়েছে ১০ বছর আগেও, সেখানে এখন ১৮০০০-২১০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা, এমনকি এই বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ দিনদিনই বাড়ছে। যার ফলে ঢাকা শহরে মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ চলছে ও ভবিষ্যতে আরো মেট্রোরেল ও পাতাল রেলের পরিকল্পনা হচ্ছে। সারা দেশে আধুনিক প্রযুক্তির বৈদ্যুতিক রেল যোগাযোগ নিয়ে ও পরিকল্পনা হচ্ছে। সড়ক যোগাযোগ আধুনিকায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ বিপুল গতিতে এগিয়ে চলছে।
সারাদেশে অনেক নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পাশাপাশি সকল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো বিপুল হারে আধুনিকায়ন হচ্ছে। গত ১০ বছরের পরিক্রমায় গবেষণায় বরাদ্দ বেড়েছে অনেক, যদিও আরও অনেক বাড়ানো প্রয়োজন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলছে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার ব্যবস্থা। দেশের অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন বিজ্ঞান গবেষণায় প্রয়োজনীয় সব অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আছে। যার ফলশ্রুতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার পরিমাণ বাড়ছে এবং অচিরেই গবেষণায় বরাদ্দের পরিমাণ বাড়লে দ্রুত বিশ্বমানের গবেষণা হবে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সামগ্রিক ভাবে কর্মোপযোগী শিক্ষা ও গবেষণাধর্মী শিক্ষার পথ সুগম হচ্ছে।
আমাদের দেশের এখনো সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো স্বাস্থ্য সেবা। এখানে উন্নয়ন করতে হবে অনেক কিছুই। স্বাস্থ্য সেবা উন্নত করতে হলে প্রথমেই দরকার প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক, যা অর্জনের জন্য ইতিমধ্যেই মেডিকেল কলেজের সংখ্যা অনেক বাড়ানো হয়েছে। সরকারী হাসপাতালের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি অত্যাধুনিক অবকাঠামো উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আধুনিক করার চেষ্টা চলছে। দীর্ঘ দিনের অনিয়ম অব্যবস্থাপনার ফলে সৃষ্ট প্রতিকূল অবস্থাগুলো চিহ্নিত করার প্রচেষ্টা লক্ষণীয়। পাশাপাশি নিশ্চিত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে এগুতে হবে অনেক দূরে। বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকারী উদ্যোগে স্বাস্থ্যবীমার সাথে হয়রানিবিহীন চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশে বর্তমানে বিনিয়োগের জন্য একটি সুন্দর অবস্থা বিরাজ করছে। দেশীয় বড় বড় শিল্পোদ্যোক্তাদের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ পরিলক্ষিত হচ্ছে। কৃষি খাতে প্রায় ৯০০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়ার ফলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে বিপুল হারে।
এখনো যেতে হবে বহুদূর। এই কঠিন পথ পাড়ি দিতে হলে বিরতিহীন ভাবে কাজ করতে হবে সবাইকে। আর যেন পিছলে না যায় কক্ষপথ সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে অবিচল। ভোটটা আপনার অধিকার, সেই অধিকার প্রয়োগ করে স্বাধীনতার পক্ষের প্রার্থীকে বিজয়ী করে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখুন।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়