শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠিতে যা লিখলেন ঢাবি অধ্যাপক ড. মো. এরশাদ হালিম
জুলাই বিপ্লব ২০২৪ নিয়ে সব শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. এরশাদ হালিম। বুধবার (৩১ জুলাই) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে এই খোলা চিঠিটি তাঁর ফেসবুক টাইমলাইনে প্রকাশিত হয়েছিল। জুলাই বিপ্লবের প্রতিটি হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, গ্রেফতার, মামলা-হামলা ও হয়রানির বিরুদ্ধে সরব প্রতিবাদ জানিয়ে খোলা চিঠি লিখেছেন এই অধ্যাপক।
খোলা চিঠি
আমার প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ
সমগ্র বাংলাদেশ,
আসসালামু আলাইকুম। শ্বাসরুদ্ধকর এক পরিবেশে হৃদয়ের রক্তক্ষরণ এবং মানসিক দহন থেকে বলছি। শতবর্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষী রসায়ন বিভাগের একজন শিক্ষক, গবেষক ও সাবেক ছাত্র উপদেষ্টা হিসাবে আত্মগ্লানির নরক অনলে পুড়ে, আমি আমার প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। সারা দেশ জুড়ে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের উপর বহমান সর্বাত্মক জুলুম ও নিপীড়ন -- প্রতিটি হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন, গ্রেফতার, মামলা-হামলা ও হয়রানির বিরুদ্ধে সরব প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমি একজন শিক্ষক। নিজে পড়ি এবং ছাত্র-ছাত্রী পড়াই -- এটাই আমার পেশা। শিক্ষার্থীরা আমাদের পেশাগত অস্তিত্ব। তাদের উন্নতিই আমাদের সার্বজনীন সার্থকতা, পুরো জাতির সর্বাঙ্গীণ কল্যাণ। তাদের বিনাশ পুরো জাতির প্রলয়। তাই শিক্ষক হিসেবে প্রতিবাদ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই চলে আসে, নিজের সম্মান ও অস্তিত্বের তাগিদে।
পাশাপাশি একজন মুসলিম হিসাবে বলতে চাই, ইসলাম ধর্মে অন্যায়ের প্রতিবাদের ধাপ এবং ধরন তিনটিঃ (১) শক্তি প্রয়োগ করা, (২) কথায় প্রতিবাদ করা, (৩) অন্তরে ঘৃণা পোষণ করা যেটি ঈমানের সর্বনিম্ন ধাপ। আমি দুর্বল, কারণ আমি একজন শিক্ষক। এদেশে শিক্ষকও বিনা দোষে পুলিশের পিটুনি খায়, আহত হয় যেখানে রাষ্ট্রের থাকে না কোন দায়বদ্ধতা। আমার শুধু কলম আছে। নাই কোনো অস্ত্র, শক্তি কিংবা প্রশাসনিক প্রভাব বলয়। তাই আমি প্রতিবাদের দ্বিতীয় ধাপের উপরে আর অগ্রসর হওয়ার ক্ষমতা রাখি না। আমার ছেলেও তোমাদের মত একজন ছাত্র। তোমাদের এই বয়সে আমি নিজেও একজন ছাত্র ছিলাম। তাই তোমাদের উপর চলমান জুলুম দেখে আমি নিজেকেও একজন মজলুম মনে করছি। তোমরা আসলেই নিপীড়িত ও নিগৃহীত তবে মনোবল ও ঈমানী দৃঢ়তা নিয়েই আছ। মহান আল্লাহ তোমাদের সবাইকে হেফাযত করুক। তিনি তাঁর রহমতের বারি তোমাদের উপর শ্রাবণের এই মৌসুমে প্লাবনের ন্যায় অঝোর ধারায় বর্ষণ করুন।
উল্লেখ্য যে, এই আন্দোলনে অনেক ছাত্র-ছাত্রী আহত ও নিহত হয়েছে। আমার বিভাগের (ঢাবি_রসায়ন) অথবা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রজীবনে আমার ভালোবাসার আবাসস্থল শহীদুল্লাহ হলের কোন আহত শিক্ষার্থীর চিকিৎসার্থে কোন ধরনের আর্থিক সহযোগিতা বা মেডিকেল রেফারেন্সের প্রয়োজন হলে আমাকে নিঃসংকোচে জানাবে। আমার অসহায় ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে আমি ছিলাম, আছি এবং সর্বদাই থাকব ইনশা আল্লাহ। তোমাদের ন্যায্য দাবির সাথে একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করেই বলছি, অতি শীঘ্রই তোমরা কাঙ্ক্ষিত সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে। তোমাদের সাথে আবার শ্রেণীকক্ষে দেখা হবে। তোমরা চূড়ান্তভাবে বিজয়ী হবে, এই আশাবাদ ব্যক্ত করেই তোমাদের সর্বাঙ্গীন কুশল কামনায় রইলাম। তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।
যখন যেখানেই থাক না কেন সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল কর, ধৈর্য ধর এবং অন্তরে ধারণ কর আসমানী বাণী "ভেঙ্গে পড়োনা, নিরাশ হয়োনা, সাহায্য আসবেই, এটা আল্লাহর ওয়াদা। জেনে রেখো আল্লাহর সাহায্য অতি নিকটে।" [সূরাঃ আল-বাকারা, আয়াতঃ ২১৪।]
নিবেদক,
মো. এরশাদ হালিম, পিএইচডি (কিউশু, জাপান)
অধ্যাপক ও গবেষক
সিন্থেটিক অর্গানিক কেমিস্ট্রি এ্যান্ড কম্পোজিট ম্যাটেরিয়ালস
রসায়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়