অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী, করণীয় কী?
সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা এখন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হবে অবিবেচনাপ্রসূত। এতদিন ধরে যারা ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধা ভোগ করেছে তারাই, এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে সরকারকে প্রভাবিত করছে। এ সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। সরকারকে অদূর ভবিষ্যতে বড় সংকটে ফেলবে। শুধু তাই না, এমন সিদ্ধান্তে প্রভাব বিস্তারকারীদের মোটিভ যথেষ্ট সন্দেহজনক।
এ সিদ্ধান্তের নেতিবাচক দিক হচ্ছে:
১. আগামী কয়েকবছর কর্মসংস্থান কমে যাবে, ফলে বেকারত্ব প্রকট হবে।
২. এ সিদ্ধান্তের ফলে তরুণদের মধ্যে চরম অসন্তোষ তৈরি হবে, যা তারুণ্যবান্ধব সরকারের নীতির পরিপন্থী।
৩. সরকারি চাকরিজীবীদের খুবই ক্ষুদ্র একটি অংশ লাভবান হবে, যারা এতোদিন ফ্যাসিস্টের অপকর্মের সহযোগী ছিল। তারাই অবসরে যাওয়ার আগে স্বার্থসিদ্ধির চেষ্টা চালাচ্ছেন।
৪. বেকারত্ব ও কর্মসংস্থানকে কেন্দ্র করে অসন্তোষ গণআন্দোলনে রুপ লাভ করতে পারে, যা সরকারকে বিপদে ফেলবে।
৫. সরকারের বয়স্ক চাকরিজীবীরা বেশিরভাগ এনালগ যুগের। তাদের কর্মদক্ষতা জেনজি যুগ থেকে বেশ পিছিয়ে। তারা চার আইআর-এর বাস্তবতা থেকেও পিছিয়ে।
৬. বাংলাদেশের বর্তমান সময়টা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের। এ সময়ে জিডিপি হওয়ার কথা ছিল ডাবল ডিজিটের। ফ্যাসিস্টের দুঃশাসনের কারণে সেটা হয়নি। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সদ্ব্যবহারের শেষ সুযোগটাও নষ্ট হয়ে যাবে, অবসরের বয়সসীমা বাড়লে।
করণীয় কী
এটা সত্য বাংলাদেশের মানুষের গড় প্রত্যাশিত আয়ুকাল বেড়েছে। এক্ষেত্রে অবসরের বয়সসীমা বাড়াতে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। যেমন:
১. পাঁচ-ছয় বছর আগে ঘোষণা দেওয়া, এক্ষেত্রে প্রথম দফায় সরকার সিদ্ধান্ত নেবে ২০৩০ সাল থেকে অবসরের বয়সসীমা এক বছর বৃদ্ধি পাবে।
২. ছয় বছর অন্তর এ বয়সসীমা রিভিউর মাধ্যমে ৬৪-৬৫ বছরে উন্নীত করা। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় দফায় ২০৩৬ সালে আরও এক বছর বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
৩. বলা হচ্ছে ২০৩৮ থেকে ২০৪২ এ গিয়ে বাংলাদেশে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড শেষ হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে ২০৪২ সালে অবসরের বয়সসীমা আবার দুই বছর বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
আরো পড়ুন: সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ছে
৪. ইউএন পপুলেশন প্রসপেক্ট অনুযায়ী ২০৫০ সালের পর বাংলাদেশ বৃদ্ধদের দেশে পরিণত হবে। তখন বৃদ্ধদের কাজে লাগানোর সুবিধার্তে অবসর বয়সসীমা ৬৫ বছরে উন্নীত করা যেতে পারে।
৫. এ পর্যায়ে গিয়ে সেটা দুই প্রজন্ম বহাল রাখা যাবে। কারণ একটি দেশ বৃদ্ধদের দেশে পরিণত হলে তা অন্তত দুই প্রজন্ম বহাল থাকে।
সর্বোপরি, ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুযোগকে ইকোনোমিক ডিভিডেন্ডে রুপান্তর করতে সরকারকে অবশ্যই অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধির মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে আপাতত দূরে থাকতে হবে। এটাই বাস্তবতা।
লেখক: শিক্ষক ও গবেষক।