কোথাও শোক নেই, অপরাধবোধ নেই
এক বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন শিক্ষার্থী আত্নহত্যা করেছেন। গত পাঁচদিনেই কেবল এই সংখ্যাটা তিন। কিন্তু কোথাও কোনো শোক নেই, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যে অপরাধবোধ নেই। সবাই চেয়ার টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় ব্যস্ত। সন্ধ্যা নামলেই দেশের বড় বড় হর্তাকর্তাদের বাসায় তেল মালিশে ছুটে যান । বাকি সময়টা আন্ধারকালীন (সান্ধ্যকালীন কোর্স) শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যয় করেন।
শিক্ষকরা নাকি অভিভাবক। সম্পর্কটা নাকি বন্ধুর মতো। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হন্তারক। এরা মোড়ল। কথাবার্তায় মনে হবে শিক্ষার্থীরা এদের কাছে শত্রু। আশি ভাগ শিক্ষকের মানসম্পন্ন দশটা লাইন লেখার যোগ্যতা নেই। বাংলা ভার্সনেও ক্লাসে বই দেখে পড়াতে হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের তুচ্ছ কারণে অপমান করতে, চাষাভুষার ছেলে বলতে দ্বিধা করেনা।
কথাবার্তা শিক্ষকসুলভ নয়, মাস্তান সুলভ। তবে ক্লাসের সুন্দরী ছাত্রীদের বেলায় অনেকে উদারহস্ত। রাত বিরাতে ফোন আর মেসেঞ্জারে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা চেষ্টার অনেক নজির রয়েছে। ডিপার্টমেন্টে শিক্ষকদের রুমও নিরাপদ না।
প্রতি বিভাগেরই একাধিক ছাত্র উপদেষ্টা রয়েছে। কিন্তু এরা আরও বড় মোড়লের ভাব ধরেন। হলের প্রভোস্ট/হাউজ টিউটররা বছরেও একদিন হলের ভিতরটা ঘুরে দেখেন না। টিএসসিতে মানসিক সমস্যা নিয়ে পরামর্শ দফতর রয়েছে। সেখানে কর্মকর্তাদের মাসে লাখ লাখ টাকা বেতন দেওয়ার বাইরে আর কোনও উপকার নেই। এই কেন্দ্রীক একটি সাবজেক্টও রয়েছে। সেখানকার শিক্ষকরাই বা কি করেন, জানা নেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দশজন তরুণ শিক্ষকও নেই, যাদের শিক্ষার্থীরা আইডল ভাবতে পারে। যাদের কথা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনে লাইফের ডিসিশান নিতে পারে। অতীত বিক্রি করে ঢাবি হয়তো আরও কয়েকটা বছর চলবে। কিন্তু যে পচন ধরেছে এর রোধ করতে না পারলে গ্যাংগ্রিনের মতো ছড়িয়ে পরবে। দেশে অনেক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ দাবিদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবনতা কেনো এতো বাড়ছে, এটা নিয়ে ভাবতে হবে সরকারকেও।
লেখক : সাংবাদিক, দৈনিক আমাদের সময়; সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি।
লেখাটি লেখকের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেয়া।