তিনটি ক্ষেত্রে পরিমাপ হবে আদর্শ শিক্ষকের যোগ্যতা, মানদণ্ড ২৩টি
শিক্ষকতা একটি ধর্ম; একে জীবনে ধারণ করতে হয়। জ্ঞানীমাত্রই শিক্ষক নন। আমাদের দেশে প্রচলিত শিক্ষক শিক্ষা অনেকটাই প্রশিক্ষণনির্ভর। কিন্ত প্রকৃত অর্থে শিক্ষক শিক্ষার পরিসর অনেক অনেক ব্যাপক। সত্যিকারের শিক্ষক হয়ে ওঠার জন্য অনেক দক্ষতা, যোগ্যতা ও সঠিক মূল্যবোধের প্রয়োজন হয়। এসব দক্ষতা অর্জনের জন্য সবচেয়ে বেশি যেটি দরকার তা হলো সচেতনতা এবং নিরন্তর চেষ্টা।
এজন্য শিক্ষক নিজ থেকে যেমন সচেষ্ট থাকবেন, তেমনি শিক্ষকের সেই চেষ্টা কতটুকু ফলপ্রসূ তা যাচাইয়ের জন্য শিক্ষকমান মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। শিক্ষকমান হলো শিক্ষকদের পেশাগত পারদর্শিতা মূল্যায়নের জন্য নির্ধারিত কিছু আদর্শ (Standard) এর সমন্বয়, যার মাধ্যমে শিক্ষকতা পেশার নির্দিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে শিক্ষকদের পারদর্শিতার অবস্থা যাচাই করা হয়।
শিক্ষক যোগ্যতার ক্ষেত্র তিনটি এবং শিক্ষকমান ২৩টি। পেশাভিত্তিক জ্ঞান এবং উপলদ্ধি (শিক্ষকমান-৬টি), পেশাভিত্তিক ব্যবহারিক জ্ঞান অনুশীলন (শিক্ষকমান-১৩টি, পেশাভিত্তিক মূল্যবোধ ও সর্ম্পক (শিক্ষকমান-৪টি)।
পেশাভিত্তিক জ্ঞান এবং উপলদ্ধি
১. প্রাক-প্রাথমিক এবং প্রাথমিক শিক্ষার সকল বিষয়ে শিক্ষাদানের জন্য প্রয়োজনীয় বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান ওধারণা কার্যকরভাবে ও আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রদর্শন করতে পারেন।
২. শিক্ষাক্রমের যোগ্যতা এবং শিখনফল ও শিক্ষার্থীদের জন্য যথাযথ বিভিন্ন প্রকার শিক্ষাদান কৌশল সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা প্রদর্শন করেন।
৩. প্রাথমিক এবং প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার শিক্ষাক্রম, যোগ্যতা এবং শিখনফল সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা প্রদর্শনকরেন।
৪. শিশুদের শিখন এবং মানসিক ও শারীরিক বিকাশ সম্পর্কিত প্রধান তত্ত্বগুলো সম্পর্কে এবং কীভাবে শিশুদেরকে ভালোভাবে সহায়তা দেয়া যায় সে সম্পর্কে বাস্তবমুখি সচেতনতা প্রদর্শ করেন।
৫. প্রত্যেক শিশুকে ভালভাবে জানেন।
৬. প্রচলিত আইনকানুন ও বিধিগত, বাধ্যবাধকতা এবং এর বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে উপলব্ধি প্রদর্শন করেন।
পেশাভিত্তিক ব্যবহারিক জ্ঞান অনুশীলন
৭. শিক্ষার্থীরা কার্যকরভাবে শিখন লাভ করতে পারে এমনভাবে তাদের আগ্রহসৃষ্টি করা এবং ধরে রাখা ও সক্রিয় করার কৌশলযুক্তপাঠ-পরিকল্পনাপ্রণয়ন।
৮. সকল শিক্ষার্থী সম্পর্কে অনেক উচ্চাশাপ্রদর্শন করেন এবং প্রত্যেকে চাহিদা এবং কৃষ্টিগত ঐতিহ্যকে সম্মান করেন ও মূল্য দিয়ে থাকেন।
৯. শিক্ষার্থীদের সুস্পষ্টভাবে নির্দেশনা প্রদান করে থাকেন।
১০. শিখনে অগ্রগতি লাভের ক্ষেত্রে প্রশ্ন করা দক্ষতা প্রদর্শন করেন।
১১. সকল শিক্ষাথীর অংশগ্রহণে সহায়ক, উদ্দেশ্যপূর্ণ, ইতিবাচক, নিরাপদ এবং সমতার ভিত্তিতে শিখন পরিবেশ বজায় রাখেন।
১২. শ্রেণি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের চাহিদা, সামর্থ্য এবং সমতা অগ্রাধিকারপায়।
১৩. শিক্ষার্থীদের সাথে ইতিবাচক এবং সম্মানসূচক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিভিন্ন ধরনের কৌশলের ব্যবহার প্রদর্শন করে থাকেন।
১৪. যথাযথ এবং স্থানীয়ভাবে পাওয়াযায় এমন শিক্ষা উপকরণ নির্বাচন এবং ব্যবহার করেন।
১৫. শিক্ষক সহজলভ্য বিভিন্ন দ্রব্যাদি ব্যবহার করে শিক্ষা উপকরণ নিজেই তৈরি করেন।
১৬. শিখনকে সহায়তা দেয়ার জন্য তথ্য ও প্রযুক্তিসহ অন্যান্যপ্রযুক্তি (যেমন মোবাইলফোন) যথাযথভাবে ব্যবহার করা হয়।
১৭. যথাযথ মূল্যায়ন কৌশল পরিকল্পনা ও ব্যবহার করেন।
১৮. শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে মৌিখক এবং লিখিত ফিডব্যাক প্রদান করেন।
১৯. মূল্যায়ন এবং বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে আহরিত তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রাপ্ত সিদ্ধান্ত পরিকল্পনা করার ক্ষেত্রে এবং শিক্ষার্থীর শিখন উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করেন।
পেশাভিত্তিক মূল্যবোধ ও সর্ম্পক
২০. প্রত্যেক শিশুর মধ্যে নিহিত সম্ভাবনা পূর্ণমাত্রায় বিকাশের অধিকারসহ একীভূত শিক্ষা, অটিজম, ন্যায়পরায়ণতা এবং সমতার প্রতিঅঙ্গীকার শিক্ষকের বিভিন্ন কাজের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়।
২১. সমগ্র শিক্ষকতার জীবনে পেশাগত উন্নয়নের প্রতি এবং সক্রিয়ভাবে চিন্তনঅনুশীলনের প্রতি অঙ্গীকারপ্রদর্শন করেন।
২২. মা-বাবা, অভিভাবক এবং স্থানীয়জনগণের সাথে কার্যকরভাবে বিদ্যালয় উন্নয়নের কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে পূর্ণমাত্রায় সজাগ।
২৩. দলীয় সদস্য হিসেবে সহকর্মীদের সাথে কাজ করে থাকেন।
লেখক, নিরঞ্জন বর্মন, সহকারী শিক্ষক