বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মানেই শিক্ষাবিদ বা শিক্ষা বিশেষজ্ঞ নয়
ক্যান্সার যেমন সাধারণ ঔষধে (প্যারাসিটামল) ভালো হবে না, তেমন শিক্ষা ব্যবস্থার ক্যান্সারও গতানুগতিক সমাধানে সারবে না। হাতুড়ে ডাক্তারের চিকিৎসায় যেমন রোগীর মরণাপন্ন অবস্থা হয়, তেমনি দেশের শিক্ষাব্যবস্থাও আজ মরণাপন্ন। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা, সব জায়গায়ই সমস্যা। সেটা শিখন পদ্ধতি বা মূল্যায়ন, শিক্ষাক্রম বা পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষক নিয়োগ বা পদোন্নতি, সবই চলছে উল্টো পথে- হাতুড়ে শিক্ষাবিদের পরামর্শে।
শিক্ষার মতো বিশেষায়িত ব্যবস্থার উন্নতিতে প্রয়োজন একদল বিশেষায়িত লোকের কাজের সুযোগ। যারা শিক্ষানীতি, গবেষণা, শিক্ষাক্রম, মূল্যায়ন, শিক্ষণ কৌশল কিংবা শিক্ষা সম্পর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি নিয়মিত গবেষণা করছেন। ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। যারা শিক্ষার ক্যান্সার চিকিৎসার বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। তারাই আসল ‘শিক্ষাবিদ’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মানেই শিক্ষাবিদ বা শিক্ষা বিশেষজ্ঞ নয়। তারা ওই সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশেষজ্ঞ যেমন- অর্থনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী বা কৃষিবিদ। শিক্ষা একটা টেকনিক্যাল বিষয়। যারা এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞ তাদেরকে কাজের সুযোগ দিন। হাতুড়ে শিক্ষাবিদদের পরামর্শে মৃত প্রায় শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাচাতে অভিজ্ঞ শিক্ষাবিদদের পরামর্শ নিন।
সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকে একটি পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনের উদ্যাগ নেয়া হয়েছে। যেখানে রোগ নির্ণয়ের জন্য বোর্ড করা হয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার রাখা হইনি। আশা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভেবে দেখবেন।
আরো পড়ুন: বেতন-ভাতায় অনেকটা পিছিয়ে ‘দুর্ভাগা’ বাংলাদেশি শিক্ষকরা
উল্লেখ্য, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক প্রণীত ও মুদ্রিত সকল পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে এক অফিস আদেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলামকে কমিটির আহবায়ক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব (স. মা.-২) মো. ইয়ানুর রহমানকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।
শিক্ষা গবেষক রাখাল রাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা নিত্রা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাসুদ আখতার খান, এনসিটিবির চেয়ারম্যান ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান, এনসিটিবি শিক্ষাক্রমের সদস্য প্রফেসর রবিউল কবীর চৌধুরী এবং প্রাথমিক শিক্ষাক্রমের সদস্য অধ্যাপক এ এফ এম সারোয়ার জাহানকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
এ কমিটি পাঠ্যাপুস্তকে শিক্ষাক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হয়েছে কিনা তা যাচাই করা; পাণ্ডুলিপিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন ও পরিমার্জন; বিষয়বস্তু, লেখার উদ্দেশ্য, লেখার মান, রচনার পরিমাণ, ভাষা ও অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে পাণ্ডুলিপিকে প্রকাশযোগ্য ও মানসম্পন্ন করা; রাষ্ট্রীয় দর্শন, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, সামাজিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় মতাদর্শ ও নৈতিক মূল্যবোধ যথাযথ আছে কিনা তা যাচাই; শিখন-শেখান কৌশলের সাথে পাঠ্যপুস্তকে প্রদত্ত টাস্ক, এক্টিভিটি প্রভৃতির সামঞ্জস্যতা পর্যবেক্ষণ; সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে স্পর্শকাতর বলে প্রতীয়মান হলে সেগুলো চিহ্নিত করে তার বিপরীতে মতামত প্রদান; পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কার্যক্রম সমন্বয়ের মতো কাজ করবে।
লেখক: যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা ইউনিভার্সিটির গ্র্যাজুয়েট রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্ট ও পিএইচডি শিক্ষার্থী এবং জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির (নেপ) সহকারী বিশেষজ্ঞ