শিক্ষকদের ওয়ারেন্ট অফ প্রিসিডেন্স থেকে বাদ দিয়ে স্বতন্ত্র বেতন স্কেল দেন
ওয়ারেন্ট অফ প্রেসিডেন্স নামক জঘন্য একটা লিস্ট ঠিক করে দেয় সম্মানের দিক থেকে এই জাতির কার কি অবস্থান। সেই লিস্টে শিক্ষকরাও আছেন। সেই ওয়ারেন্ট অফ প্রিসিডেন্সে শিক্ষকদের যদি যথাস্থানে বসাতে না পারেন, সেখানে তাদের রাইখেন না। পৃথিবীর কোন দেশের ওয়ারেন্ট অফ প্রিসিডেন্সে শিক্ষকরা আছে? পাশের দেশ ভারতের ওয়ারেন্ট অফ প্রিসিডেন্সেতো শিক্ষকরা নাই। আমাদের দেশে কেন রাখলেন?
আমাদের জাতীয় অধ্যাপকের অবস্থান কোথায় জানেন? আমাদের ইউজিসির চেয়ারম্যানের অবস্থান কোথায় জানেন? এমপি, গভর্নর, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, মেজর জেনারেল, এটর্নি জেনারেল প্রমুখদের বিশাল একটা সিরিয়াল আছে। সেই ওয়ারেন্ট অফ প্রেসিডেন্স নামক সিরিয়ালের ১৭ নম্বরে আমাদের জাতীয় অধ্যাপক আর ১৬ নম্বরে আমাদের ইউজিসির চেয়ারম্যান।
ভারতের জাতীয় অধ্যাপক ছিলেন সত্যেন বসু। ভারতের ওয়ারেন্ট অফ প্রেসিডেন্স-এ যদি অধ্যাপক ও জাতীয় অধ্যাপক থাকতো তাহলে সত্যেন বোসকে কোথায় বসালে সেই অবস্থানটি যথাযোগ্য হতো? বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনও অধ্যাপক থাকতে পারেন যার বিশ্বজুড়ে খ্যাতি আছেন। এমনকি এমন অধ্যাপকও থাকতে পারেন যিনি নোবেলজয়ী। তাকে ওয়ারেন্ট অফ প্রিসিডেন্সের কোথায় বসাবেন? শুনেন শিক্ষকদের ওয়ারেন্ট অফ প্রিসিডেন্স দিয়ে সম্মান নির্দিষ্ট করে দেওয়া যায় না।
আরো পড়ুন: হলে ওঠার ১০ম দিনেই ‘কালরাত’ নেমে এসেছিল ঢাবি ছাত্র সেলিমের জীবনে
শিক্ষকরা সতত প্রবাহমান নদীর মত। তারা তাদের সম্মান নিজ যোগ্যতায় অর্জন করতে দিন। আমাদের এই এক সমস্যা। আমরা সব অধ্যাপককে একরকম ভাবি। আমরা সব অধ্যাপককে একটা বেতন স্কেল ধরে বেতন দেই। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়েতো এমন হওয়ার কথা না। এখানে যোগ্য মানুষকে যোগ্য সম্মান দেওয়ার জায়গা। আজকে যেই অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন কালকে অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় বার্গেইন করে বেশি বেতন দিয়ে অন্য কোথাও নিয়ে যাবে।
একাডেমিয়া হবে এমনই প্রতিযোগিতামূলক জায়গা। তাই আমি দাবি করছি, অতি শিগগিরই শিক্ষকদের ওয়ারেন্ট অফ প্রিসিডেন্স থেকে বাদ দিন। সব শ্রেণির শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র একটা বেতন স্কেলের ঘোষণা দিন। শিক্ষকরা তাদের যোগ্যতানুসারে সমাজে তার অবস্থান নির্ধারণ করতে দেন।
লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
(ফেসবুক থেকে নেওয়া)