১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:৫৫

কেমন উপাচার্য চান বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা?

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়  © টিডিসি ফটো

ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যরা পদত্যাগ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২০ আগস্ট শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া।

বর্তমানে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে একে একে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে উপাচার্য পেয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে একযোগে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা উপদেষ্টা। 

আরও পড়ুন: বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিসি নিয়োগ কবে, যা জানালেন শিক্ষা উপদেষ্টা

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কার্যক্রম সচল রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়েরও আর্থিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পেয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. মুহসিন উদ্দীন।

শিক্ষা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়নে  কেমন উপাচার্য চান বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা- তা জানতে চেয়েছেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসের ববি প্রতিনিধি আরিফ হোসাইন। 


‘উপাচার্য হিসেবে বরেণ্য শিক্ষাবিদদের কাউকে পেতে চাই’ 

উপাচার্য হিসেবে এমন একজন শিক্ষককে চাই, যিনি নিজেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত না করে শিক্ষার্থী-বান্ধব দক্ষ একজন প্রশাসক হয়ে উঠবেন। বরেণ্য শিক্ষাবিদদের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব দিতে হবে। বরেণ্য শিক্ষাবিদেরাই স্বার্থান্বেষীদের অনৈতিক ও অগণতান্ত্রিক দাবি মানতে চান না। 

উপাচার্যের নিয়োগে অ্যাকাডেমিক এক্সিলেন্সি, গবেষণায় দক্ষতা, যেমন আন্তর্জাতিক মানের জার্নালে একাধিক প্রকাশনা আছে, সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ইত্যাদি বিষয়ে গভীরভাবে পর্যালোচনা করা উচিত। প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক নেতৃত্ব দেওয়ার গুণ যেমন থাকা জরুরি, সেই সঙ্গে কাজে সততা, স্বচ্ছতা, দূরদর্শিতা, নিরপেক্ষতা থাকাটাও গুরুত্বপূর্ণ। মানুষ রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে না, তাই একজন উপাচার্যের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকাটা স্বাভাবিক। তবে দায়িত্বের জায়গায় বৈষম্য করা, স্বৈরাচারী আচরণ করা এমন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যক্তির কাছে কাম্য নয়।

জান্নাতুল নওরিন উর্মি (২০১৫-১৬), গণিত বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় 

আরও পড়ুন: সব বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উদ্যমে কাজ শুরুর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে: প্রধান উপদেষ্টা

‘উপাচার্য হবেন গবেষণা মুখী,যুগোপযোগী ও কর্মমুখী শিক্ষা বাস্তবায়ন-কারী ও উন্নয়নে মনোযোগী’ 

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের ৩৩ তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১১ সালে ভিত্তিস্থাপন করা হলেও ২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি থেকে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে অনেক ভিসি আসছে গেছে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের তেমন উন্নতি করতে পারেনি।এমন একজন ভিসি চাই যিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গবেষণা-মুখী করার পাশাপাশি আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যুগোপযোগী ও কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন। যিনি হবেন সৎ, নিরপেক্ষ প্রশাসনিক দক্ষতা সম্পন্ন, শিক্ষার্থী-বান্ধব। সেশনজটের কবল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মুক্ত করে অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম চলমান রাখবেন।পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোর দিকে অগ্রণী ভূমিকা রেখে বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ দিবেন এমন একজন ভিসি চাই।

কামরুল হাসান (২০১৮-১৯), রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।

‘নিরপেক্ষ, শিক্ষা-বান্ধব এবং উন্নয়নে মনোযোগী  উপাচার্য চাই’ 

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়  এই বিভাগের একমাত্র জেনারেল বিশ্ববিদ্যালয়।দক্ষিণ বাংলার মানুষ হাজারো স্বপ্ন দেখে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে।কিন্তু প্রতিষ্ঠার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এই অঞ্চলের মানুষের সেই স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠতে পারেনি ববি, এর মূলে রয়েছে পূর্বে নিয়োগপ্রাপ্ত ভিসিদের অযোগ্যতা এবং দুর্বলতা। আমরা দেখেছি পূর্বে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় সকল ভিসিই ছিলেন রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত।  আমরা আর কোনো রাজনৈতিক মদদপুষ্ট ভিসি দেখতে চাইনা। আমরা এমন একজন মানুষকে ভিসি হিসেবে দেখতে চাই যাকে কোনো রাজনৈতিক নেতা চেনেন না কিন্তু দেশ বিদেশের গবেষক এবং শিক্ষাবিদগণ ভালোভাবেই চেনেন। যিনি আমাদের বাহ্যিক এবং মানসিক উন্নয়নের কথা ভাববেন আমাদের সকল আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবেন।

আমরা ইতিপূর্বে যাদেরকে ভিসি হিসেবে পেয়েছিলাম তাদের অধিকাংশই কাজে নয় বরং কথায় বড় ছিলেন। কিন্তু এই নতুন বাংলাদেশে আমাদের ক্যাম্পাসে আমরা এমন একজনকে ভিসি হিসেবে চাই যিনি কথায় ছোট থেকে ক্যাম্পাসের সার্বিক উন্নয়নের জন্য কাজ করে বড় হবে।

আমরা বিশ্বাস করি একজন নিরপেক্ষ, শিক্ষা-বান্ধব এবং উন্নয়নে মনোযোগী ভিসি নিয়োজিত হলে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি হবে।

শহিদুল ইসলাম (২০২০-২১), আইন বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন: উপাচার্য নিয়োগে কদর পশ্চিমা ডিগ্রি-গবেষণায়, রাজনৈতিক সক্রিয়রা বাদ

‘যোগ্য ও দক্ষ উপাচার্য চাই’ 

উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতায় যেন মূল চাবিকাঠি হয়,ভালো অ্যাকাডেমিক দক্ষতার পাশাপাশি নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে পৃথিবীর সুনাম ধন্য প্রথম সারির  বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা সম্পন্ন করেছেন এমন একজন ব্যক্তিকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে চাই।

পাশাপাশি পারিপার্শ্বিক সবকিছু সম্পর্কে তার যথেষ্ট জ্ঞান থাকবে,বিশ্ববিদ্যালয়কে সে নিজের পরিবার ভেবে সবসময় উন্নয়নের চেষ্টা করবে,সে যে ধর্মেরই হোক ধর্মীয় অনুশাসন মেনে সৎ থাকবে,নিজের দায়িত্বের প্রতি ইতঃপূর্বে অবহেলা করেনি বরং দায়িত্বের চেয়ে শ্রেষ্ঠ কিছু করে দেখিয়েছে এমন একজন ব্যক্তিকে  বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে আশা রাখি।

মো:তারিক হোসেন (২০২১-২২), ইংরেজি বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়