‘আমি সব কিছুর বিনিময়ে সবার আগে ইমতিয়াজ মাহমুদ থাকতে চাই’
আমি চাকরিতে কখনো প্রমোশনের পরীক্ষা দিইনি, এটা অনেকেই জানেন। কিন্তু যেটা অনেকে জানেন না, সেটা হচ্ছে পরীক্ষা না দিলেও সরকারি চাকরিতে অটো প্রমোশনের একটা নিয়ম আছে। বিসিএসের পর চাকরির বয়স ১৫ বছর হলে এই প্রমোশনটা দেয়া হয়।
আমি চাকরিতে যোগদান করেছি ২০০৬ সালে। পরীক্ষা না দেয়ার পরও আমার অটো প্রমোশন ডিও হয়েছিল, ২০২১ সালে। কিন্তু সেটা আমাকে দেয়া হয় ২০২৪ এ এসে। তিন বছর পর। এর কারণ এই না যে আমি গত ১৫ বছর সুযোগ পেলেই সরকারের সমালোচনা করেছি। সবাই যখন পদ্মাসেতু বা মেট্রোরেলের উন্নয়ন নিয়ে উৎসব করেছে, আমি তখন উন্নয়নকে বিদ্রুপ করে অসংখ পোস্ট দিয়েছি।
এসব কারণে কালো তালিকাভুক্ত করে কর্তৃপক্ষ যে আমাকে তিন বছর বঞ্চিত করেছে, তা না। এই তিন বছর যে আমার প্রমোশন হয়নি, তার কারণ আমার প্রমোশন না হওয়ার বিষয়টা তাদের কারো মনে ছিলো না। এই না থাকাটা খুবই যৌক্তিক ছিল। কেননা আমার সিনিয়র সহকারী সচিব হওয়ার কথা ছিল ২০১১ সালে। ২০২১ সালে না। ২০২১ সালে যারা সিনিয়র সহকারী সচিব হয়েছেন, তারা চাকরিতে যোগদান করেছেন ২০১৬ সালে।
অর্থাৎ ২০২১ সালে কর্তৃপক্ষ যখন প্রমোশনের জন্য ফাইল তুলেছে, তারা ২০১৬ অথবা একটু পিছিয়ে গিয়ে তার দুই/তিন বছর আগে যারা চাকরিতে যোগদান করেছেন, তাদের ফাইল উপস্থাপন করেছে। তারা হয়তো কল্পনাই করেনি, ২০০৬ সালে যোগদান করা একজন প্রমোশনহীন চুপচাপ বসে আছে। ফলে তাদের দোষ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।
আমার হয়তো তাদের কাউকে নক করে মনে করিয়ে দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু অসুবিধা হচ্ছে, ঢাকা আমার শ্বশুরের বাসা থেকে সচিবালয় দুই মিনিটের হাঁটা পথের দূরত্বে হলেও ২০১৬ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত আট বছরে আমি একদিনও সচিবালয় যাইনি। এর আগের আট বছরে বাধ্য হয়ে দুই/তিনবার গিয়েছি।
তো সরাসরি না গেলেও কর্তৃপক্ষের কাউকে হয়তো ফোনে বলা যেত। যেহেতু এ প্রমোশনটা আইনগতভাবেও আমার প্রায় অধিকারের মতোই ছিল। কিন্তু আমি ফোনে কাউকে এই বিষয়ে বলিনি।
এমন না যে, আমাকে আমাদের আমলারা চিনতেন না। তারা আমাকে চিনতেন। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দও করতেন। কিন্ত এই বিষয়টা কারো মনে থাকতো না। আমিও মনে করাতাম না। তো এভাবে তিন/চার বছর যাওয়ার পর ফোরচুনেটলি জনপ্রশাসনে কাজ করা আমার অনেক জুনিয়র এক অফিসার Murtuza Al-Mueed এর নজরে বিষয়টা আসে, তাও অন্য আরেকজনের ফাইল খুঁজতে গিয়ে।
তার সাথে তখন পর্যন্ত আমার অনলাইনে বা অফলাইনে কোনো পরিচয় ছিলো না। তাও তিনি আমার ফাইলটা প্রমোশনের জন্য উঠান। ফোনে আমাকে জানান যে, এটা তোলা হয়েছে। এখন ঝামেলা দেখা দেয়, অলসতার কারণে আমার একটা এসিআর জমা দেয়া হয়েছিল না। প্রমোশনের জন্য এসিআরে গড়ে ৮০-৮৫ নাম্বার দরকার। সৌভাগ্যক্রমে জমা পড়া এসিআরগুলোতে আমার অধিকাংশ বসই আমাকে ৯৮-৯৯ করে নাম্বার দেয়ায় একটা না থাকা এসিআর অর্থাৎ একটা ০০ এর পরও এ নাম্বারের গড় ৮৫ এর ওপর ছিল।
ফলে কোনো জটিলতা ছাড়াই প্রমোশন হয়। কিন্তু সভায় উপস্থিত মন্ত্রী আর সচিবরা আমার নির্লিপ্ততার কারণে অনেকটাই বিস্মিত হন। তারা আমাকে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য চায়ের দাওয়াত দেন। আমি মর্তুজাকে বলি, এই দাওয়াতটা স্কিপ করা গেলে আমার জন্য স্বস্তিদায়ক হয়। মর্তুজা বললেন, তারা যেভাবে বলছেন, তাতে স্কিপ করা কঠিন।
যাই হোক, আমি সচিবদের দাওয়াত গ্রহণ করে আট বছর পর সচিবালয় যাই। লক্ষ্য করি, আমি কাউকে না চিনলেও প্রায় সবাই আমার নাম জানে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, প্রায় সবাই যেহেতু চিনতেনই, অনেকে পছন্দও করতেন, তাহলে চার বছর আগে কি আমি তাদের কাউকে একবার আমার প্রমোশনের বিষয়টা মনে করিয়ে দিতে পারতাম না? বিশেষ করে আমার অসুস্থতার দুর্যোগের পর, ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে যখন আমার দিন আনি দিন খাই অবস্থা!
উত্তর হচ্ছে, না, আমি কাউকে মনে করিয়ে দিতে পারতাম না। সেটা মনে করিয়ে দিতে গেলে, আমি আর ইমতিয়াজ মাহমুদ থাকতাম না। আমি সব কিছুর বিনিময়ে সবার আগে ইমতিয়াজ মাহমুদ থাকতে চাই।
(ফেসবুক থেকে নেওয়া)