গুরুত্বপূর্ণ পদে অযোগ্য ব্যক্তির নিয়োগ বিশ্বাসঘাতকতার শামিল
আল কোরআন ও হাদিসের আলোকে মেধাবীদের মূল্যায়ন এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন পজিশনে নিয়োগ করার গুরুত্ব ব্যাপক এবং তা ইসলামি সমাজে বিশেষভাবে গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হয়েছে। ইসলামের শিক্ষা অনুসারে, নেতৃত্ব ও দায়িত্বশীল পজিশনে উপযুক্ত ও মেধাবী ব্যক্তিদের নিয়োগ করা একটি অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। এই প্রবন্ধে, আমরা কোরআন ও হাদিসের আলোকে এই বিষয়ে একটু দেখে নেই।
মেধাবীদের মূল্যায়ন
মেধাবীদের মূল্যায়ন ইসলামি নীতি অনুযায়ী একটি নৈতিক দায়িত্ব। ইসলামে মেধা, দক্ষতা এবং যোগ্যতা অত্যন্ত মূল্যবান। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কোরআনে বলেন, "তোমরা আমানতসমূহ (দায়িত্বসমূহ) আমানতদারদের নিকট অর্পণ করো।" (সুরা আন নিসা: ৫৮)
এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন যে দায়িত্ব সঠিক ব্যক্তির হাতে অর্পণ করতে হবে। এখানে আমানত বলতে মানুষের ওপর অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য বোঝানো হয়েছে, যা মেধাবীদের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দক্ষতার সাথে পালন করা যায়।
হাদিসের আলোকে মেধাবীদের মূল্যায়ন
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি কোনো কাজে অধিকারী নয়, তাকে সেই কাজে নিয়োগ করা হলে তা বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে বিবেচিত হবে।" (সহিহ মুসলিম)
এই হাদিসে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মেধাহীন বা অযোগ্য ব্যক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে নিয়োগ করা হলে তা এক প্রকার বিশ্বাসঘাতকতার শামিল। সুতরাং, হাদিসের আলোকে মেধাবী ব্যক্তিদের মূল্যায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাষ্ট্রের বিভিন্ন পজিশনে নিয়োগ
ইসলামি রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে মেধাবীদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে নিয়োগ করা অত্যন্ত জরুরি। ইসলামের ইতিহাসে আমরা দেখতে পাই যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাহাবীদের মধ্যে যাদের বিশেষ যোগ্যতা ও দক্ষতার অধিকারী মনে করতেন, তাদের বিভিন্ন দায়িত্বপূর্ণ পজিশনে নিয়োগ করতেন।
উদাহরণস্বরূপ, হজরত উমর ইবনে খাত্তাব (রাযি.) ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ছিলেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী ও বিচক্ষণ। তাঁর শাসনামলে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা শক্তিশালী হয় এবং বহু গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক সংস্কার সাধিত হয়। তাঁর নিয়োগপ্রক্রিয়া ছিল অত্যন্ত মেধাভিত্তিক এবং তিনি সবসময়ই যোগ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব দিতেন।
মেধাবীদের মূল্যায়ন ও নিয়োগের গুরুত্ব
মেধাবীদের সঠিক মূল্যায়ন ও তাদের যোগ্য পজিশনে নিয়োগ করার ফলে রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। মেধাবী ব্যক্তিরা সঠিক পরিকল্পনা, উন্নত কৌশল ও বিচক্ষণ নেতৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।
কোরআন ও হাদিসের উদাহরণ
কোরআন ও হাদিসে বিভিন্ন দৃষ্টান্তের মাধ্যমে মেধাবীদের মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কোরআনে হজরত ইউসুফ (আ.)-এর গল্প উল্লেখ আছে, যেখানে তিনি তাঁর মেধা ও দক্ষতার জন্য মিসরের অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি বলেন, "আমাকে দেশের ধনভান্ডারের (মন্ত্রণালয়ের) দায়িত্বে নিয়োগ করুন, আমি রক্ষক এবং জ্ঞানী।" (সুরা ইউসুফ: ৫৫)
এখানে আমরা দেখতে পাই, হজরত ইউসুফ (আ.) নিজের যোগ্যতার কারণে গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে নিয়োগ পান এবং তিনি দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সফলভাবে পরিচালনা করেন।
মেধাবীদের মূল্যায়নে ইসলামের নীতি
ইসলামে মেধাবীদের মূল্যায়ন ও তাদের যোগ্য পজিশনে নিয়োগ করার কয়েকটি মূলনীতি রয়েছে:
১। আদালত: মেধাবী ব্যক্তিদের নিয়োগের ক্ষেত্রে বিচারক ও দায়িত্বশীলদের নিরপেক্ষতা ও ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বন করতে হবে।
২। যোগ্যতা ও দক্ষতা: নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যক্তির যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রাথমিক বিবেচ্য বিষয় হবে।
৩। প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ: মেধাবী ব্যক্তিরা তাদের যোগ্যতার দ্বারা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ সঠিকভাবে রক্ষা করতে পারবেন।
৪। মর্যাদা ও সম্মান: মেধাবীদের সঠিক মূল্যায়ন করে তাদের সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করা।
আল কোরআন ও হাদিসের আলোকে মেধাবীদের মূল্যায়ন ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন পজিশনে নিয়োগ করা ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা। যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্ব রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। ইসলামের শিক্ষার আলোকে আমরা যদি আমাদের সমাজে মেধাবীদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করি এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপূর্ণ পজিশনে নিয়োগ করি, তবে আমরা একটি উন্নত, স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারব।
যোগ্য ও মেধাবীদেরকেই বিশ্ববিদ্যালসহ রাষ্ট্রের সকল পজিশনে থাকা চাই। রাষ্ট্রের যে পজিশনই হোক না কেন, আর অযোগ্য ও মেধাহীন সে যেই হোক না কেন, সামাজিকভাবে এদের বয়কট করুন। মহান আল্লাহ দয়া করে এ দেশ ও জাতিকে রক্ষা করুন। আমিন ইয়া রব্বুল আলামীন।
লেখক: গবেষক ও অধ্যাপক, ফিশারিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।