বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সরকারের মুখোমুখি করলেন, এ দায় এড়াবেন কী করে?
সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিমকে’ বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে সেটি বাতিলের দাবিতে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এর ফলে ক্লাস পরীক্ষা সব বন্ধ হয়ে যাবে। অচল হয়ে যাবে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। আমি ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ করে যে কোন আন্দোলনের বিপক্ষে। তবে শিক্ষকদের একটা কথার সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত যে, এই স্কিম বৈষম্যমূলক। এর ফলে তাদের সুযোগ-সুবিধা কমবে।
আচ্ছা প্রত্যয় স্কিম যদি এতোই ভালো হয় তাহলে সরকারি সব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সেটা নিচ্ছেন না কেন? কেন তারা শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত-স্বায়ত্তশাসিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন? কেন আগে তাঁরা নিজেরা এমন একটা স্কিমে নিজেদের জন্য বানাচ্ছেন না? অন্যদের জন্য যেটি ভালো তাদের নিজেদের জন্য নয় কেন?
আমি মনে করি, এ স্কিম এবং স্কিমের বিরুদ্ধে আন্দোলন দুটোই সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাকে ক্ষতি করবে। এর ফলে সাধারণ মানুষ সর্বজনীন পেনশন নিয়ে অনাস্থা তৈরি হবে। তারা ভাববে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যেহেতু সর্বজনীন পেনশন স্কিম না নিয়ে এর বিরুদ্ধে বলছেন আবার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও নিজেদের জন্য নিচ্ছেন না, তার মানে এটি ভালো কিছু নয়। এটি সার্বজনীন পেনশনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি।
যাই হোক, শিক্ষকরা আন্দোলনে মরিয়া। তবে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা নিয়ে আমি এখন কিছুই বলতে চাচ্ছি না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষকদের কর্মবিরতির দিকে নজর রাখছে এবং শিক্ষকদের এ আন্দোলনের পরিস্থিতি বিবেচনা করে ব্যবস্থা নেবো।
এ কথাটার মানে হলো, বড় ধরনের আন্দোলন করতে পারলে সব বিশ্ববিদ্যালয় অচল করতে পারলে সরকার তাদের কথা শুনবে, নয়তো না। এ ধরনের আচরণ ভীষণ হতাশার। আমি বুঝি না, শিক্ষক বা রাষ্ট্রায়াত্ব কর্মচারীদের জন্য আলাদা স্কিম চালু করার কী দরকার ছিল? যাই হোক শিক্ষকরা বলুক সরকারি বা রাষ্ট্রায়াত্ত্ব যাই হোক না কেন সরকারি সব চাকরিজীবীদের সার্বজনীন পেনশনের আওতায় আনা হোক! সবার বেতন-ভাতা সুযোগ সুবিধা একইরকম হোক।
আরেকটা কথা, ভূমি সেবা, জন্ম নিবন্ধন, এনআইডি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ নানা সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে সার্বজনীন পেনশন স্কিম নিতে অনেকটা জোর করা হচ্ছে। না করলে সেবা দেয়া হচ্ছে না। এর ফলে দেখা যাবে, বাধ্য হয়ে অনেকেই পেনশন স্কিমে নাম লিখিয়েছে। কিন্তু পরে আর সেটা চালিয়ে নিচ্ছেন না। কাজেই এগুলো করা উচিত নয়। বরং যার ইচ্ছে পেনশন স্কিমে আসবে, যার ইচ্ছে নয়।
আরো পড়ুন: ৮ বছর পর আবারও ‘অচল’ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়
ভালো হলে এমনি মানুষ আসবে। আর সাধারণ মানুষকে এসবে বাধ্য করার আগে সরকারি চাকরিজীবীরা সবাই পেনশনে স্কিমে আসুক। সেটা না করে এখন যা হচ্ছে, তাতে সাধারণ মানুষ আগ্রহ হারাবে। আবারো বলছি, পেনশন স্কিমের মতো অসাধারণ একটা উদ্যোগ নিয়ে এখন যা হচ্ছে তাতে সাধারণ মানুষ সার্বজনীন পেনশন স্কিমে আগ্রহ হারাবে। তারা বলবে একদিকে বিপুল পরিমাণ টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু সরকার সেটা বন্ধ করতে পারছে না বলে এখন পেনশন থেকে টাকা আয় করতে চায়।
দুর্নীতি পাচার লুটপাট বন্ধ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়া এর জবাব নেই। কাজেই সুশাসন জরুরী। জরুরি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সচল রাখা। আচ্ছা আপনাদের স্বার্থে সাধারণ ছেলে-মেয়েদের কেন জিম্মি করবেন? পৃথিবীর আর কোথায় এভাবে ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ করা হয়? আচ্ছা ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার স্বার্থে তো কোনদিন আন্দোলনে নামলেন না?
তারপরও নীতি নির্ধারকদের বলি, আমাদের শিক্ষকদের কথা শুনুন। ক্লাস-পরীক্ষা স্বাভাবিক থাকুক। আর নীতি নির্ধারক আমলাদের বলব, এই যে সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সরকারের মুখোমুখি করলেন, দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অচল হবার পথে এর দায় এড়াবেন কী করে? কেন এই বিষয়গুলো কথা বলে করা হলো না? কেন হুট করে চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে? খুব করে চাই বোধ ফিরুক সবার। ভালো থাকুক এই বাংলাদেশ!
লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট
(ফেসবুক থেকে নেওয়া)