লাখো ছেলে-মেয়ের ছাত্র পরিচয়ে অলস সময় পার করা ছাড়া কি লাভ হচ্ছে?
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ আছে ২ হাজার ২৫৭টি। এর মধ্যে সরকারি কলেজ আছে ৫৫৫টি। শিক্ষার্থী ৩১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি, যা দেশে উচ্চশিক্ষায় মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৭২ শতাংশ। এই যে প্রায় আড়াই হাজার কলেজে যে অনার্স মাস্টার্স খোলা হলো এতে দেশের লাখ লাখ ছেলেমেয়ে নিজেদের ছাত্র পরিচয় দিয়ে অলস সময় পার করা ছাড়া আর কি লাভ হচ্ছে?
অথচ এ বয়সটা কত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবাই জানি এ কলেজগুলোতে যথেষ্ট সংখ্যক মানসম্মত শিক্ষক নেই। একেকটি বিষয়ে সর্বোচ্চ গড়ে ২ বা ৩ জন শিক্ষক দিয়ে এইচএসসি, ডিগ্রি পাস কোর্স এবং অনার্স মাস্টার্স পড়ানো হয়। ফলে অধিকাংশ ক্লাসই হয় না। কেবল ভর্তির রেজিস্ট্রেশন, পরীক্ষা আর সার্টিফিকেট দেওয়া ঠিক মত হয়। বাকি কিছুই ঠিক মত হয় না।
যে কলেজে অনার্স মাস্টার্স থাকবে সেখানে একেকটি বিষয়ে থাকা উচিত কম পক্ষে ১৫ জন শিক্ষক, যার মধ্যে যারা অনার্স মাস্টার্স পড়াবে। তাদের সবার পিএইচডি থাকা উচিত। পাশের দেশের কলকাতায় এমনই হয়। সেখানে কলেজগুলোতে কেবল ৩ বছরের অনার্স পড়ানো হয় এবং অনার্স পড়ানোর জন্য একেকটি বিভাগে কম পক্ষে ৮ থেকে ১৫ জন শিক্ষক থাকে, যাদের সবার পিএইচডি ডিগ্রি আছে।
আরো পড়ুন: ঢাবিতে নিয়োগের এমন প্রাগৈতিহাসিক বিজ্ঞপ্তি কোথাও পাবেন না
কলেজ থেকে অনার্স করে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২ বছরের মাস্টার্স করে বিশ্বমানের শিক্ষিত মানুষ তৈরি হয়। সেখান থেকে মাস্টার্স করে অনেকেই ইউরোপ আমেরিকায় পিএইচডি করতে যায় এবং বিশাল একটি গ্রুপ ভারতেই পিএইচডি করে ইউরোপ আমেরিকায় পোস্ট-ডক করে।
একবার ভাবুন এ ২ হাজার ২৫৭টি কলেজে যদি যথেষ্ট মানসম্মত শিক্ষক দেওয়া হয় এবং শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় করা হয়, দেশেতো শিক্ষার মানের বিপ্লব ঘটে যাবে। এটা করতে শিক্ষায় জিডিপির অন্তত ৫ শতাংশ বরাদ্দ দিলেই হয়ে যেত, যা ইউনেস্কোর প্রেসক্রিপশনও বলে। এটা না করে হাজারে হাজারে কলেজে অনার্স মাস্টার্স খুলে আমরা কি জাতির সাথে জাতীয় প্রতারণা করছি না?
লেখক: অধ্যাপক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
(ফেসবুক থেকে নেওয়া)