সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি যেন মেধাশূন্য করার হাতিয়ার
গত বুধবার (৫ জুন) মহামান্য হাইকোর্টের রায়ে পুনর্বহালের পথে বিভিন্ন ক্যাটাগরি ভেদে ৫৬% কোটা সম্রাজ্যের ইতিহাস, (তন্মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০%, পোষ্য কোটা ১০%, জেলা কোটা ১০%, নারী কোটা ১০%, উপজাতি কোটা ৫% এবং প্রতিবন্ধী কোটা ১০%) পূর্বের ইতিহাসকে পুনরায় নবায়নের তাগিদেই যেন এই রায়ের আস্ফালন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে ২৩ মাসব্যাপী এই দেশের সর্বস্তরের জনগণ যুদ্ধের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছিল শুধু পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের যাবতীয় অন্যায্য ও যুক্তিহীন নীতিমালাগুলোকে চিরতরে বিলীনের উদ্দেশ্যে ,কারণ এই দেশের মানুষ ছিল সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় অগ্রগামী।
কিন্তু সেই ন্যায়হীন ও অন্যায্য দাবিকে পুনরায় অস্তিত্বদানে কোটা ব্যবস্থার প্রচলন যেন সংবিধানের ২৯নং অনুচ্ছেদ (যেখানে বলা হয়েছে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে) লঙ্ঘনের শামিল।
২০১৮ সালে ফিরে দেখা, তখনও এই কোটা-ব্যবস্থাকে ঘিরে সারা-বাংলাদেশ জুড়ে ছাত্রসমাজের বিক্ষোভ যেন প্রতিটা শিক্ষাঙ্গণ থেকে উদ্ভূত হয়েছিল, আর তখন বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ-হাসিনার বিচক্ষণ সিদ্ধান্তে কোটা-ব্যবস্থা কিছুটা হলেও শিথিল হয়েছিলো কিন্তু সেই কোটার বিস্তার যেন পুনরায় হাইকোর্টের রায়ে বাস্তবায়নের পথে,যার ফলে ২০২৪ সালে আবারও প্রতিটা শিক্ষাঙ্গনের ছাত্রসমাজ জাগ্রত হয়েছে পথে-প্রান্তরে (যেমন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ) তাদের একটাই দাবি “বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, অসমতার বিধান নাই”-হোক সেটা চাকরি ক্ষেত্রে বা অন্য কোন ক্ষেত্রে।
এই কোটা ব্যবস্থা যেন আমাদের বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার লক্ষ্যেই বাস্তবায়নের পথে। সরকার পক্ষের এই অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত যে পুরো জাতিকে কি পরিমাণ ভোগাবে, তা আসন্ন দিনগুলোই জানান দিবে। এই ধরনের অন্যায্য কোটা ব্যবস্থার প্রচলনের জন্যই এই দেশ থেকে মেধাবীরা পাড়ি জমাচ্ছেন ভিনদেশে,এর ফলে দেশের মেধাশক্তিগুলোর বিলোপসাধন যেন অবিলম্বে সংঘটিত হতে যাচ্ছে জাতির এই অস্বাভাবিক ক্ষতি কখনই মেনে নেওয়ার নয়।
কোটা ব্যবস্থার এই অবশ্যম্ভাবী ও অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত অনতিবিলম্বে খারিজ করে, চাকরির ক্ষেত্রে সমতা-বিধান নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সরকারের নিকট প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
লেখক: শিক্ষার্থী,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়