২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৬:৫২

মায়ের ভালোবাসা

তুলনাহীন ভালোবাসার এক মহাসমুদ্রের নাম মা। পৃথিবীতে মায়ের সাথে তুলনা হয় এমন মনুষ্য প্রাণি তো নাই, মায়ের মতো ভালোবাসে এমন প্রেমময় মানব-মানবীও দ্বিতীয় অার নাই। প্রত্যেক মা-ই সন্তানের জন্য মধুর কলসি। যে কলসি ভালোবাসার মধুতে পরিপূর্ণ থাকে। যেখান থেকে অপুরন্ত মধু অাহরণ করার পরও ভালোবাসা শেষ হয়না। সন্তানের জন্য মায়ের জীবন উৎসর্গের ঘটনা কোনো নতুন বিষয় নয়। সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করার জন্য মায়ের ত্যাগ তিতীক্ষার কোনো পরিমাণ নাই। পরিমাপ করা যায়না মায়ের ভালোবাসাও। কিভাবে পরিমাপ করবে! মায়ের ভালোবাসা মাপার মতো কোনো যন্ত্রও তো নাই। মাকে নিয়ে গল্প উপন্যাস লিখে কেউ মায়ের প্রকৃত ভালোবাসার দৃষ্টান্ত যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছে বলে মনে হয়না। পারবেও না। মায়ের উদাহরণ মা নিজেই। মায়ের কোনো বিকল্প নাই। মায়ের গল্পের নায়ক প্রকৃত মায়েরাই হয়।

কুলে সন্তান বহন করা ছবিটির কথায় বলি: গত একুশে সেপ্টেম্বর ঢাবির ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেদিন একজন মায়ের ছবি ভাইরাল হয়। ছবিতে দেখা যায় একজন মা তার প্রতিবন্ধী সন্তানকে কুলে নিয়ে শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দায় হাঁটছে। ছোটখাটো কোনো সন্তানকে কুলে করে নয়, নয় কোনো অবুঝ শিশু, মা নামের সেই ভালোবাসার জীবন্ত মহাসমুদ্রটি সেদিন যে সন্তানকে কুলে বহন করে নিয়েছিলেন, সে ছিল প্রাপ্ত বয়স্ক এক টগবগে যুবক। যে শিক্ষার সর্বোচ্চ মাধ্যম অনার্সের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে গিয়েছিল। সন্তান প্রতিবন্ধী হওয়ায় মা তাকে এভাবে কুলে করে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যান। অাজকে সেই মা সার্থক। সেই সংগ্রামী মায়ের প্রতিবন্ধী সন্তানও সফল হয়েছে। ছেলেটি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাবির ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।

ভালোবাসার প্রতিযোগিতায় মায়ের সমতুল্য হবে এমন প্রেমিকা, এমন মানবী, ভালোবাসার এমন অভিনয় শিল্পী অার অাছে বলে প্রমাণিত হয়নি। অাশা করি হবেও না। পৃথিবীর সব মানুষই ভালোবাসা পাওয়ার কাঙাল। সবাই ভালোবাসা পেতে চাই। অার মা নামের একমাত্র সেই প্রাণিটাই ভালোবাসা দিতে চায় কেবল। সন্তানকে ভালোবাসা দিয়ে অাগলে রাখতে মরিয়া হয়ে উঠে কেবল মা-ই।

অাসুন দ্বিতীয় ছবিটার প্রকৃত গল্প শুনি: এ ছবিটাও মায়ের ভালোবাসার অনন্য দৃষ্টান্ত। মানুষের মতো প্রাণি জগতেও যে, সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা অাছে তার অপরূপ দৃশ্য এটি। গহীন অরণ্যে একটি হরিণ পরিবার হিংস্র ক্ষুধাতুর বাঘের কবলে পড়লে, মা হরিণটি বাচ্চা সন্তানদেরকে দ্রুত সরিয়ে দিয়ে নিজের শরীরটা তীব্র ক্ষুধায় কাঁতর হিংস্র বাঘের তরে সমর্পণ করে দিয়ে এটি প্রমাণ করে যে, অামাকে যতো ইচ্ছে খাও। খেয়ে নিঃশেষ করো। অামার শরীরের সব রক্ত শুষে নাও কিন্তু অামার সন্তানদেরকে নয়। অামার শরীরের বিনিময়ে তাদেরকে বাঁচতে দাও। অামার রক্তের বিনিময়ে তাদেরকে ছেড়ে দাও।

নিজের বাচ্চাদেরও দ্রুত তাড়িয়ে দেয় এই বলে যে, তোদের অনেক ভবিষ্যত অাছে। সুতরাং তোরা পালিয়ে যা। অার অামার ভবিষ্যত হলো নিজের প্রাণ দিয়ে হলেও তোদের রক্ষা করা। যা অামি পালন করছি। তোরা অাজীবন বেঁচে থাক। এই হলো মা। এই হলো ত্যাগ অার এটাই ভালোবাসা। এটি গল্প উপন্যাস নয়, কোনো নাটকের স্ক্রিপ্ট নয়। হুম, এটা বাস্তবতা অার সব মায়ের ক্ষেত্রে এটায় ঘটে।

পৃথিবীতে নিঃস্বার্থে ভালোবাসে এমন প্রমিকা নাই কেবল মা ছাড়া। সন্তানকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে মায়ের কোনো স্বার্থ নাই। সব মা-ই চায়- অামার সন্তান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সন্তান হোক। পৃথিবীর কোনো বন্ধু বান্ধব, প্রেমিক প্রেমিকা-ই চায়না অামার থেকে অামার বন্ধুটি, অামার ভালোবাসার মানুষটা বড় হোক, যোগ্য হোক। একমাত্র মা-ই চায়- ‘অামার সন্তান অামার চেয়ে বড় হোক। সবক্ষেত্রে যোগ্য হোক।’

একজন পাগলিনীকে দেখছিলাম সন্তানকে ভালোবেসে লালন করতে। রাস্তার ধারে, কোনো সময় যাত্রী ছাউনির নিচে কিংবা দোকানের বারান্দায় বসবাস করা সেই পাগলিনী নিজের পরনের কাপড়কে তেমনভাবে শরীরের সাথে জড়িয়ে নেয়নি যেভাবে নিজের সন্তানকে জড়িয়ে ধরছিল। অবাক হয়েছিলাম সেদিন তার অমন ভালোবাসাময় কর্মকাণ্ড দেখে। পাগলি মাহিলাটি সব ছাড়তে প্রস্তুত কিন্তু নিজ সন্তানকে ছাড়তে বিন্দু পরিমাণও প্রস্তুত নয়। মানুষের থেকে হাত পেতে চেয়ে নেয়া খাদ্যদ্রব্য সমূহ মুরগির বাচ্চার মতো কুঁড়েকুঁড়ে খাওয়াচ্ছিল মস্তিষ্কবিকৃত এ মা।
হুম, এরাই হলো মা। পাগল, ফকির, মিসকিন, ধনাঢ্য, যে রকম মানুষ হোক না কেন অাপন সন্তানের জন্য সব মায়ের ভালোবাসা একই।

পৃথিবীর সব মা-ই দীর্ঘজীবী হোক এমন প্রত্যাশা করি।

লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।