তামিম-মিরাজ কি মিথ্যাবাদী রাখাল?
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে ক্রিকেটার ‘তামিম ইকবাল-মিরাজের ফোনালাপ’।এই সংবাদ ফেসবুকে দেখে নেটিজেনরা যখন সংবাদমাধ্যম ও ব্যক্তিগত ফোনালাপ ফাঁসকারী সংস্থার বিরুদ্ধে নৈতিকতা ও সরকারের তথ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ঠিক তখনই জানা গেলো এটি দেশের স্বনামধন্য ডিজিটাল আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান ‘নগদের’ বিজ্ঞাপনের একটি পরিকল্পিত অংশ।
বিজ্ঞাপনটি যেন বেশি আলোচিত বা প্রচারিত হয় তাই এই নেতিবাচক পদ্ধতি অবলম্বন করেছে নগদ। পরবর্তীতে অনেক আলোচনা ও ভাইরাল হওয়ার পরই তারা আবার সংবাদ মাধ্যমকে জানালেন এটি নিয়ে লাইভে আসেন তামিম ইকবাল। সম্প্রতি তামিম ইকবালের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে লাইভে আসা নতুন কিছু নয়। তাই সবাই ভেবেছিলেন ভুক্তভোগী তামিম ইকবালের কথাটাও শোনা দরকার। কিন্তু লাইভের বিষয়টিও বিজ্ঞাপনেরই একটি অংশ সেটিও পরে পরিষ্কার হয়। সেখানে অংশ নেন মিরাজ, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহর মত তারকা ক্রিকেটারও।
সম্প্রতি তামিম ইকবাল বিশ্বকাপ স্কোয়াডে না থেকেও এবং ঐ জাতীয় দলে না খেলেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বেশি আলোচিত ছিলেন এবং তার ভক্ত অনুরাগীরাই তাকে ইতিবাচক ভাবে আলোচনায় রেখেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি নগদের এই বিজ্ঞাপন ঘটনায় আমাদের মনে করিয়ে দিলো ছোটবেলায় পড়ে আসা "মিথ্যাবাদী রাখাল" এর সেই গল্পটি। গ্রামবাসী যেমন তাকে বাঁচাতে এসেছিল বাঘের হাত থেকে এবং জেনেছিল এটি মিথ্যে গল্প বাঘ আসেনি কিন্তু পরের বার সত্যিই যখন বাঘ এসেছিল কিন্তু গ্রাম বাসী বাঁচাতে আসেনি।কারণ,সে আস্থা হারিয়েছিল। গ্রামবাসী তাকে গরুর রাখাল হিসেবে চিনতো,অভিনেতা হিসেবে নয়।
কেন যেন মনে হচ্ছে, ঐ গল্পের লেখক আমাদের গল্পটির মর্মার্থ (ম্যুরাল অব দ্য স্টোর) বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন।আমরা ঐ গল্প থেকে মিথ্যাটাই শিখেছি কিন্তু গল্পটির মূল অর্থ ধরতে পারিনি বা শিক্ষা নেইনি।
তা নাহলে দেশের সেলিব্রেটি তারকাদের কাছ থেকে যে শিক্ষা বা আদর্শ আমরা অনুসরণ করবো সেটি তারা সামান্য টাকার কাছে বিক্রি করেছেন,নিজেদের বানিয়েছেন হাসির পাত্র। তাদের মনে রাখা উচিত ছিল, তারা এদেশের মানুষের কাছে অভিনয় তারকা হিসেবে প্রিয়জন বা বিখ্যাত নন, ক্রিকেটার হিসেবে। তাদের কাজ পর্দায় অভিনয় দেখানো নয়, মাঠে পারফরম্যান্স করা। তারা ভক্তদের থেকে পাওয়া ভালবাসা ও শ্রদ্ধা সস্তায় বিক্রি করে দিয়েছেন একটি বিজ্ঞাপনের জন্য। তারা তাদের খেলার ভক্ত,অভিনয়ের না।এই ভক্তদের অভিনয় জগতেও তাদের আলাদা তারকা রয়েছেন। মুশফিক, তামিম বা মাহমুদউল্লাহরা তরুণদের চেতনা ও নৈতিকতার আদর্শ হয়ে উঠতে পারেন কিন্তু মিথ্যা গল্পের অভিনেতা নন।
আজকাল কোনো অভিনেতা সত্যি সত্যি মারা গেলেও অনেকে ভাবেন এটি কোনো সিনেমার দৃশ্য। তারা মারা যাওয়ার পরেও অনেক সময় হাস্যরসের পাত্র বনে যান শুধু অভিনয় তার পেশা বলে। তাদের মৃত্যুর খবরও অনেক সময় সংবাদমাধ্যম বিনোদন পাতায় দিয়ে থাকেন। একবার সংবাদপত্রে দেখেছিলাম শুটিং করতে গিয়ে একজন বিদেশি অভিনেতা সাঁতার না জানায় পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছিলেন, আর তাকে দেখতে আসা দর্শক, কলা-কৌশলীরা সবাই ভাবছিলেন এটি শুটিংয়েরই অংশ তাই কেউ বাঁচাতেও এলেন না ভালোবেসে বা দায়িত্ববোধ থেকে। তারপর ঐ অভিনেতা সত্যিই মারা যান। অথচ তাকে উদ্ধার করা কঠিন কিছু ছিল না, শুধু অভিনয়ের কারণেই তিনি সহায়তা পেলেন না, কারণ তার ভক্তরা ভেবেছিলেন এটিও অভিনয়। এরকম বহু মর্মান্তিক গল্পও আমাদের জানা আছে।
সবচেয়ে বড় কথা,বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের নিশ্চয়ই নিজস্ব কোনো কোড অব কন্ট্রাক্ট আছে। সেখানে ধোঁকা, প্রতারণার জন্যও শাস্তির ব্যবস্থা অথবা এ ধরনের কন্টেন্টে কাজ না করার নিষেধাজ্ঞা আছে। যদি সেসব থেকেই থাকে তাহলে নিশ্চয়ই ঘটনা বিচার বিশ্লেষণ করে এই তারকাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি। নাহলে কোনো একদিন সত্যিই বাঘ এসে জাতির নৈতিকতার রাখালকে খেয়ে যাবে। কিন্তু কিছু করার থাকবে না।
লেখক: কলামিস্ট ও নাট্যকার।
ই-মেইল: kabilsadi@gmail.com