বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা এখন অধঃপতিত পেশা

ড. কামরুল হাসান মামুন
ড. কামরুল হাসান মামুন  © টিডিসি ফটো

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশা কতটা অধঃপতিত হয়েছে তার কিছু উদাহরণ দিব। ১৯২৪ সালের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের বেতন ছিল ১২ হাজার ডলার। আর আজকে সেটা ৯০০ ডলারের আশেপাশে। বিশ্বাস হয়?

সেই সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের বেতনের চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের বেতন ৩০০-৪০০ রুপি বেশি ছিল। বর্তমানে ভারতে আমার মত একজন অধ্যাপকের বেতন আমার ৩ গুণের চেয়েও বেশি। ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষককে পার্টটাইম অন্যত্র পড়াতে হয় না। অর্থাৎ নিজের পড়ানো ও গবেষণায় পুরোপুরি মনোনিবেশ করতে পারে। 

আজকে ভারতের একজন সহকারী অধ্যাপক যার পিএইচডি এবং পোস্ট ডক আছে তার বেতন প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার রুপি। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপকের বেতন সর্বোচ্চ ৫০ হাজার রুপি। কারো পিএইচডি এবং পোস্টডক থাকলে তার অতিরিক্ত যোগ্যতার কারণে যে বেশি দিতে হয় সেই ন্যূনতম সৌজন্যতাবোধও দেখানো হয় না। 

ভারতে একজন পোস্ট ডক ফেলো হিসাবে মাসে পায় প্রায় ১ লাখ টাকা যা আমাদের একজন সহকারী অধ্যাপকের বেতনের দ্বিগুণ। একজন পিএইচডি ছাত্র পায় প্রায় ৬০ হাজার টাকা। এটাও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সহকারী অধ্যাপকের বেতনের চেয়ে বেশি। এইজন্যই ভারতের প্রতিটি ইনস্টিটিউটে প্রচুর ভারতীয় পিএইচডি করছে, পোস্ট-ডক করছে। একটা গবেষণা পরিবেশ আছে।

তবে এটিও বলতে হবে ভারত যা দিচ্ছে সেটাও যথেষ্ট না। প্রতিবেশী চীন এর চেয়েও বেশি বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে। যার জন্য চীনে এখন ওয়ার্ল্ড র‍্যাংকিংয়ে ১ থেকে ২০ এর মধ্যে আছে এমন বেশকটি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। 

যারা মনে করে বেতন বাড়ালেই কি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান ভালো হয়ে যাবে? জ্বি, আলবত ভালো হয়ে যাবে। সেই ১৯২১ সালের দিকে সত্যেন বোস, জ্ঞান চন্দ্র ঘোষ, আর সি মজুমদারসহ অনেকেই কলকাতা থেকে ঢাকা এসেছিলেন বেতনের জন্যই।

এখনও অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে বাংলাদেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে গেছে বেতনের জন্যই। শিক্ষকতা পেশায় তো আর ঘুষ-দুর্নীতির সুযোগ নেই, যদি না শিক্ষকের অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ক্ষমতা থাকে। আর সেটা কখনও কাঙ্খিতও না। 

তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বাংলাদেশের স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সকল স্তরের শিক্ষকদের আলাদা উচ্চমানের বেতন স্কেল দরকার। অন্যথায় আমরা ভালো মানের মানুষদের শিক্ষকতা পেশায় আনতে পারবো না।

আর এটা করতে হলে শিক্ষায় বরাদ্দ কমপক্ষে জিডিপির ৪.৫% বরাদ্দ দিতেই হবে। যদিও ইউনেস্কো বলে সেটা ৫.৫% এর বেশি হওয়া উচিত। আর আমরা দেই ১.৭৬%!

লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ