বাংলা মাধ্যমের সন্তানরা আর কত ধান্দাবাজি মার্কা পরীক্ষার শিকার হবে?
সৃজনশীল কারিকুলাম এনে কত মধুর কথা বলা হয়েছিল—মনে আছে? সেই সৃজনশীল ব্যর্থ। যারা এই সৃজনশীল নিয়ে এত কথা বলে কয়েক প্রজন্মের ছেলেমেয়ের অপূরণীয় ক্ষতি করলেন তাদের কি বিচার হয়েছে?
তারপর পিইসি-জেএসসি পরীক্ষা এনে বললেন পরীক্ষা খুব উপকারী জিনিস। সেই পিইসি-জেএসসি পরীক্ষা এখন প্রমাণিত ব্যর্থ। যারা এই দুই পরীক্ষা এত সুন্দর সুন্দর কথা বলে কয়েক প্রজন্মের ছেলেমেয়ের অপূরণীয় ক্ষতি করলেন তাদের কি বিচার হয়েছে? এখন আবার বলছেন পরীক্ষা খুব খারাপ জিনিস। শুধু এখানেই থামেননি। এই অজুহাতে বৃত্তি পরীক্ষা বাদ দিলেন। অথচ ছেলেমেয়েরা বৃত্তি পেয়ে শুধু বৃত্তির টাকা পেত না একই সাথে বিনা বেতনে অসংখ্য ছেলে-মেয়ে স্কুল কলেজে পড়তে পারতো। আপনাদের উদ্দেশ্যটা কি বলেনতো?
তারও আগে মূল্যায়নে জিপিএ পদ্ধতি এনে আপনারা কি বলেছিলেন আর কি ঘটেছে? শুরু হয়েছিল খুব সামান্য-সংখ্যক (১০০ শিক্ষার্থীরও কম) জিপিএ ৫ দিয়ে। তারপর এই সংখ্যা এক্সপোনেনশিয়াললি বাড়তে বাড়তে এখন ১ লক্ষ ৭৬ হাজারের বেশি জিপিএ ৫ পায়। এক গ্লাস চিনির শরবতে পানি ঢেলে ঢেলে তরলীকরণ করতে করতে এখন আর চিনির অস্তিত্ব না থাকার অবস্থা হয়েছে। এমন অবস্থা হয়েছে পরীক্ষায় ভালো নম্বর না দিলে পরীক্ষককে কারণ দর্শায়। বলা যায় জিপিএ ৫ সিস্টেম প্রবর্তন করে শিক্ষার মানের ধস নামানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখে নতুন শিক্ষাক্রমের বৈশ্বিক গুণ-মান অর্জন
তারও আগে ল্যাব নির্ভর ‘এসো নিজে করি’ পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। এটি চালু করে আমাদের কি বলেছিলেন সেইসবও আমরা ভুলিনি।
এই পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের যোগসাজশে কিছু chosen শিক্ষাবিদ দিয়ে যতগুলো পরিবর্তন আনা হয়েছে তার একটিও সফলতার আলো দেখেনি। তাহলে বর্তমানে অধ্যাপক জাফর ইকবাল, অধ্যাপক মশিউজ্জামান, অধ্যাপক এম তারিক আহসানরা নতুন শিক্ষাক্রম নাজিল করেছেন এইটার উপর আমরা কিংবা ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক তথা আপামর জনসাধারণ কীভাবে আস্থা রাখবে?
আগে আগের সিস্টেম কেন ব্যর্থ হলো সেটা উদ্ঘাটন করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা হউক। এইবার মন্ত্রী, আমলা এবং শিক্ষকদের মধ্যে যারা এই সিস্টেমের প্রশংসা করছেন তাদের সবার সন্তানদের বাংলা মাধ্যমে পড়তে বাধ্য করে একটা প্রজ্ঞাপন জারি করুন। এতই যদি ভালো হয় তাহলে এই মাধ্যমে পড়তে বা পড়াতে অসুবিধা কোথায়?
আরও পড়ুন: ৪০৬ কোটি ব্যয়ে সোয়া ৪ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেবে মাউশি
আপনাদের যে উদ্দেশ্য খারাপ তার প্রমাণ এই যে শিক্ষা বাজেট বরাদ্দ গতবারের চেয়ে কমালো তার বিরুদ্ধে কি প্রতিবাদ করেছেন? যেখানে এত বড় একটা কর্মযজ্ঞ নাজিল করলেন, যার জন্য আগের চেয়ে অনেক বেশি খরচ বেড়েছে অথচ শিক্ষায় বরাদ্দ কমেছে। একই সাথে শিক্ষায় দুর্নীতি বেড়েছে ছাড়া কমেনি।
আপনারাতো শুধু কারিকুলামই বদলাননি একই সাথে শিক্ষার্থী মূল্যায়ন পদ্ধতিও বদলে ফেললেন। পৃথিবীতে এমন আরেকটি দেশের উদাহরণ দেনতো যেই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার এমন আমূল পরিবর্তন করে ফেলে? শিক্ষায় যেকোনো পরিবর্তনের ইমপ্যাক্ট পড়ে একটি দেশের গোটা প্রজন্মের উপর। তাই পরিবর্তন আনলেও সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫% পরিবর্তন এনে এর ইমপ্যাক্ট দেখা হয়। ইমপ্যাক্ট সন্তোষজনক হলেও বাকিটা ধীরে ধীরে করা হয় যাতে কোনো ভুল থাকলে টিউন করা যায়।
আগের সবগুলো সিস্টেম যেমন ব্যর্থ হয়েছে এটির ব্যর্থ হওয়ার সম্ভবনা সবগুলোর চেয়ে বেশি। একই সাথে এটির ক্ষতিও হবে আগেরগুলোর চেয়ে অনেক অনেক অনেক বেশি।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।