আলিবাবা হাজার চোরের কাহিনী
টিআইবি বলছে বিদেশে একজন মন্ত্রীর বিনিয়োগ আছে ২ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। বুঝতে পারছেন কি সাংঘাতিক ব্যাপার?
টিআইবি আরো বলেছে কেউ যদি প্রমাণ চায় তাদের কাছে প্রমাণ আছে প্রমাণ দিতে পারবে। এছাড়া বর্তমান পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী এবং নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর সম্পদ রয়েছে ১ হাজার ৩৪৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকার। তাছাড়া এইবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন তাদের মধ্যে ১৮ জনের ১০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ রয়েছে। তার উপর এইবার নির্বাচনে ৫৭১ জন প্রার্থী রয়েছেন যাদের সম্পদ কোটি টাকার বেশি। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ফেনী-২ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম উদ্দিন হাজারীর স্ত্রী নূরজাহান বেগমের ৪ কোটি ১৩ লাখ টাকার সম্পদ ছিল। ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে তাদের সম্পদের পরিমাণ বেড়ে হয় প্রায় ৩২ কোটি টাকা। এবারের হলফনামায় তাদের সম্পদের সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে প্রায় ১২৫ কোটি টাকা। আরো আছে। মাত্র ১৫ বছরে সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য জান্নাত আরা হেনরীর সম্পদ বেড়েছে ৪৯৭ গুণ। শুধু হেনরী নয়, লাফিয়ে লাফিয়ে সম্পদ ও নগদ অর্থ বেড়েছে আরও অনেক সংসদ সদস্য প্রার্থীর।
এইসব হিসাব অনেকটা অফিসিয়াল। আমার একটা থিসিস ছাত্রকে দিয়ে বাংলাদেশের কার কত সম্পদ তার একটা গবেষণা করতে চেয়েছিলাম। পারেতোর ল অনুসারে একটা ক্যাপিটালিস্ট দেশে ৮০% সম্পদ ২০% মানুষের হাতে বন্দি। অর্থাৎ একটি দেশের সম্পদ ডিস্ট্রিবিউশন পাওয়ার-ল ফলো করে এবং এই ল ৮০-২০ লকে এমবোডি করে। বাংলাদেশে এই ল মানে কিনা সেটা দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যখন জানলাম এনবিআরের টেক্স রিটার্ন অনুসারে আমাদের দরবেশ বাবাজি অনেক গরিব তখন থেকে এই গবেষণার আশা বাদ দিলাম। এই দেশে সব কিছুই fake! বয়স fake, সম্পদ fake, মানুষের চরিত্র fake এমনকি গোটা মানুষটা fake! তাই বণিকবার্তার রিপোর্ট কিংবা টিআইবির গবেষণায় যা পাওয়া গিয়েছে তার চেয়ে অনেক গুন বেশি সম্পদ তাদের আছে। পুরো রাজনীতি এখন দুর্নীতি করাল গ্রাসে বন্দি। এইজন্য এমপি নির্বাচনে বিএনপি বা আওয়ামী লীগের নোমিনেশন পাওয়ার জন্য একেকজন নোমিনেশন প্রত্যাশীর কোটি কোটি টাকা খরচ করার খবর পাই। এইবার বাড়ি গিয়েছিলাম। জানলাম বর্তমান এমপির উপর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রায় সকল নেতা ভীষণ ভীষণ ক্ষুব্ধ এবং তারা উপরের লেভেলের সবাইকে জানিয়েছেন। কিন্তু এমপি সাহেবতো অনেক টাকা ও সম্পদের মালিক এবং তিনি জানেন নোমিনেশন পেতে যত টাকা লাগে সেটা খরচ করলে এর চেয়ে বড় বিনিয়োগ আর হয় না। শুনলাম নোমিনেশন পেয়েছেনও। তৃণমূলের নেতাদের চাওয়া পাওয়ার কোন মূল্য নেই। টাকাই সব।
এ এক আশ্চর্য দেশ। দেশে লক্ষ লক্ষ ছেলে-মেয়ে বেকার। অথচ খোদ মন্ত্রী উপদেষ্টা বিদেশে বিনিয়োগ করে, অনেকেই বিদেশে অর্থ পাচার করে, বিদেশে বেগম পাড়া বানায়। আর এদিকে দেশের মানুষ কষ্টে মরে। আবার দেশের মানুষের জন্য মায়াকান্না দেখায়। অভিনয় আর ছলচাতুরি দেখতে দেখতে মনটা বিষিয়ে উঠেছে।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
(ফেসবুক থেকে নেওয়া)