নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে এক ডজন পরামর্শ
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তি তোলা হলেও নিঃসন্দেহে এটি একটি মানসম্মত এবং যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে মুখস্থ বিদ্যার গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে এই শিক্ষাক্রমই পার্ফেক্ট বলে মনে হয়। তবে শিক্ষানীতি সফলভাবে কার্যকর করার জন্য আমার কিছু পরামর্শ রয়েছে—
১. শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। দক্ষ শিক্ষকই পারে যে কোনো শিক্ষাক্রম সফল করতে।
২. আমার জানামতে ফিনল্যান্ডের শিক্ষাব্যবস্থার আদলে বর্তমানের নতুন শিক্ষানীতি তৈরি করা হয়েছে। তােই প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে শিক্ষকদেরকে সে দেশে নিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা কিংবা সে দেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মাধ্যমে অন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে।
৩. কোচিং/টিউশনি বন্ধ করার জন্য ফিনল্যান্ডের শিক্ষকদের সমমানের বেতন নিশ্চিত করা, ফলে মেধাবীরা আকর্ষণীয় বেতন দেখলে শিক্ষকতা পেশা বেছে নিতে আগ্রহী হবে। তাই শিক্ষানীতি সফলভাবে প্রয়োগের জন্য সেই মানের বেতন নিশ্চিত করা উচিত।
৪. প্রথম শ্রেণি থেকে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা প্রয়োগ করা, যেন শিশু শিক্ষার্থীরা একই ধাঁচের শিক্ষাব্যবস্থার সম্মুখীন হয়। এক ক্যাটাগরির শিক্ষাব্যবস্থার মাঝে অন্য ক্যাটাগরি—এটা শিক্ষক, শিক্ষার্থী কিংবা অভিভাবকের জন্য মানিয়ে নেওয়া কষ্টকর।
৫. প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় স্পিকিং দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কেবল ক্লাস নেওয়া যেতে পারে ইংরেজি এবং আরবিতে। এজন্য দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া দিতে হবে। ভাষাজ্ঞান থাকলে বহির্বিশ্বে কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাবে।
আরও পড়ুন: বিসিএস প্রস্তুতি সৃজনশীল চিন্তাভাবনার অন্তরায়
৬. প্রয়োজনীয় ইকুয়েপমেন্টের ব্যবস্থা করা অতি প্রয়োজন। সুইমিংপুল, নাগরদোলনা, খেলারমাঠ, ল্যাবরেটরি, কম্পিউটার ক্লাব কিংবা লাইব্রেরি ইত্যাদির সমৃদ্ধ ব্যবস্থা করা।
৭. পড়াশোনা হবে কর্মভিত্তিক এবং মূল্যায়নও রাখা উচিত কর্মভিত্তিক। গাছপালা লাগানো, শাক-সবজি চাষ এবং তা থেকে ফল প্রাপ্তির সফলতায় নম্বর দেওয়া যেতে পারে। এতে খাদ্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পরিবেশ সুন্দর থাকবে। এছাড়া যার বাড়ির পরিবেশ যত সুন্দর হবে, সে নম্বর তত বেশি পাবে। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ হলে নম্বর কমে যাবে।
৮. সৃজনশীলতার উপর বিভিন্ন পুরস্কার দেওয়া যেতে পারে। যেমন গবেষণা, উদ্ভাবন ইত্যাদি। এসকল বিষয়ে শিক্ষার্থীদের দক্ষ হয়ে গড়ে তুলতে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
৯. পরিবারের আয়ের মাধ্যম এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় ও নানা কাজে ব্যয়ে সচেতনাসহ পরিবারের সার্বিক বিষয়ে মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। যাতে করে একজন শিক্ষার্থী ছোটবেলা থেকেই পরিবারের বিভিন্ন বিষয়ে নিজেকে স্বচ্ছ ও সচেতন রাখতে শিখতে পারে।
১০. এরই ধারাবাহিকতায় পরিবারের আর্থিক উৎসে কোনো দুর্নীতি বা অনিয়ম আইন অনুযায়ী বা সামাজিকভাবে প্রমাণিত নেতিবাচক মূল্যায়ন করা যেতে পারে। সেই সাথে এই সমস্যা থেকে উত্তরণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
১১. একটি শ্রেণিকক্ষে সর্বোচ্চ ৩০-৪০ জন শিক্ষার্থী জন্য বরাদ্দের পাশাপাশি কক্ষের পরিবেশ আকর্ষণীয় করা এবং মানসম্মত টয়লেট নিশ্চিতের ব্যবস্থা করতে হবে।
১২. প্রয়োজনীয় বাজেট নিশ্চিত করার পাশাপাশি বর্তমান শিক্ষানীতি কার্যকর করতে বিসিএস পরীক্ষা বাতিল কিংবা সংশোধন করা উচিত। এ ক্ষেত্রে সৃজনশীলতা এবং বিষয়ভিত্তিক চাকরি নিশ্চিত করা জরুরি।
লেখক: সাবেক শিক্ষার্থী, চাঁদপুর সরকারি কলেজ