২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১১:৪৩

স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা খুবি উপাচার্যের

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন  © সংগৃহীত

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেছেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এতদঞ্চলের আপামর মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার পীঠস্থান হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সর্বস্তরের মানুষের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের চাহিদা পূরণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তোলার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সকল মহলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

আগামীকাল শনিবার (২৫ নভেম্বর) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। শিক্ষা কার্যক্রমের ৩৩ বছর পূর্তি। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকার্যক্রমের তেত্রিশ বছর পূর্ণ করে চৌত্রিশ বছরে পদার্পণ করছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে রয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আপামর মানুষের নিরলস প্রচেষ্টা ও ত্যাগ। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৮৭ সালের ৪ জানুয়ারি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসংক্রান্ত সরকারি সিদ্ধান্ত গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।

১৯৮৯ সালের ৯ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করা হয়। ১৯৯০ সালের জুলাই মাসে জাতীয় সংসদে ‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আইন-১৯৯০’ পাস হয়, যা গেজেট আকারে প্রকাশ হয় ওই বছর ৩১ জুলাই। এর পর ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে ৪টি ডিসিপ্লিনে ৮০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করা হয়। ১৯৯১ সালের ৩০ আগস্ট প্রথম ওরিয়েন্টেশন এবং ৩১ আগস্ট ক্লাস শুরুর মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমের সূচনা হয়। একই বছরের ২৫ নভেম্বর শিক্ষাকার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। প্রতিবছর এ দিনটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসবমুখর পরিবেশে পালিত হয়ে আসছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় একটি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয় হলেও সময়ের চাহিদা অনুযায়ী এখানে জীববিজ্ঞান, বিজ্ঞান প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা, কলা ও মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান, ব্যবসায় প্রশাসন, আইন, চারুকলাসহ অন্যান্য অন্যান্য বিষয়ের প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কুল বা অনুষদের সংখ্যা ৮টি এবং ডিসিপ্লিন বা বিভাগের সংখ্যা ২৯টি। শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে সাত হাজারেরও বেশি। যার মধ্যে ৩৪ জন বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন শিক্ষক আছেন পাঁচ শতাধিক, যার এক তৃতীয়াংশই পিএইচডি ধারী। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:১৪। ছাত্র-ছাত্রীর অনুপাত ৫৪:৪৬ যা দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। কর্মকর্তা তিন শতাধিক এবং কর্মচারীর সংখ্যা ৫ শত। বিশ্ববিদ্যালয়ে এ পর্যন্ত ৬টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

যার মাধ্যমে প্রায় ১৫ হাজার গ্র্যাজুয়েটকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিজ্ঞানপত্র প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রম চালুর পর গত ৩৩ বছরে এখানে কোনো ছাত্র সংঘর্ষ, হানাহানি বা রক্তপাত হয়নি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নিরবচ্ছিন্নভাবে এই দীর্ঘ সময়ে শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে। দেশে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজট, সন্ত্রাস ও রাজনীতিমুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বতন্ত্র ভাবমূর্তি অর্জনে সক্ষম হয়েছে।

গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি শ্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে। তাহলো: 'খবধৎহ, খবধফ ধহফ খরাব' যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় ‘শিখুন, নেতৃত্ব দিন এবং বাঁচুন’। এছাড়া নতুন ভিশন, মিশন এবং রিসার্চ স্ট্র্যাটেজি প্ল্যান নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠাকালের দিক থেকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নবম। খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের গল্লামারী নামক স্থানে স্থাপিত হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। স্থানটি একাত্তরের বধ্যভূমি। আর বধ্যভূমির ওপর গড়ে ওঠা এটাই দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রবেশ করেই মনে হবে এক শান্ত ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। নেই কোনো কোলাহল, নেই শব্দ দূষণ। বিশেষভাবে চোখে পড়বে একই রঙে রাঙানো ভবগুলোর দেওয়াল। প্রশাসনিক বা একাডেমিকসহ কোনো ভবনের গায়ে চিকা মারা নেই। নেই কোনো শ্লোগান লেখা, নেই কোনো ব্যানার, ফেস্টুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি ভবনের নাম বিধৃত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের শহিদ তথা বাঙালির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নামে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রবেশদ্বার দিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেই প্রথম চোখে পড়বে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুউচ্চ ম্যুরাল, যার গায়ে উৎকীর্ণ আছে ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ। এছাড়া রয়েছে শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ প্রশাসন ভবন, ড. সত্যেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবন, আচার্য জগদীশচন্দ্র একাডেমিক ভবন, কবি জীবনানন্দ দাশ একাডেমিক ভবন। এমনিভাবে  প্রত্যেকটি আবাসিক হল ও অন্যান্য স্থাপনার প্রবেশ পথেই শুধু দেখতে পাবেন নাম লেখা।

এ যেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নিজস্বতা। বঙ্গমাতা হলে রয়েছে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ম্যুরাল। রয়েছে কটকা স্মৃতিস্তম্ভ। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহদাকার কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারটি স্থপত্যশৈলী চমৎকার। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে নামকরণ করা হয়েছে এ ভবনটির। যার ছাদ দৃষ্টিনন্দন টেনসাইল মেমব্রেনে তৈরি।

নব্বইয়ের দশকের শুরুতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সব বিষয় নিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় তা কিন্তু গতানুগতিক ছিলো না। তা ছিলো ভবিষ্যৎ প্রয়োজনমুখী। তখনকার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট বিদ্যার্জন দূরদর্শিতা দেখিয়েছিলেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বুয়েটের পরই ১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স ক্রেডিট পদ্ধতি চালু হয়। দেশের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিন, ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিন, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ডিসিপ্লিন এবং ঢাকার বাইরে স্থাপত্য ডিসিপ্লিন ও কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিন প্রথম চালু হয়।

দেশের মধ্যে ফরেস্ট্রি এন্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২য় হিসেবে চালু হয়। সুন্দরবন ও উপকূল নিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বের মধ্যে প্রথম স্থাপিত হয়েছে ইনস্টিটিউট ফর ইন্টিগ্রেটেড স্টাডিজ অন দ্য সুন্দরবনস এন্ড কোস্টাল ইকোসিস্টেম (আইআইএসএসসিই)। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপিত হয়েছে দেশের প্রথম সয়েল আর্কাইভ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের মাটির ২০ ফুট গভীর নিচে সুরম্যভাবে স্থাপিত এ আর্কাইভ। এখানে সংগৃহীত আছে দেশের ৫টি জোনের এক হাজার আটশত আটান্নটি প্লটের ৫ হাজারের বেশী মাটির নমুনা। যা সংরক্ষণ করা হয়েছে গবেষণার জন্য।

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে- খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নেই, সেশনজট নেই। তবে শিক্ষার্থীদের ৩২টি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আছে। যার সাথে সম্পৃক্ত থেকে শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব, দক্ষতা ও সাংগঠনিক মনোবল অর্জন করে। তারাই সারাবছর উৎসবমুখর রাখে ক্যাম্পাস। শারীরিক ও মানসিক বিকাশে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রক্তদানে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, খেলাধুলার জন্য আন্তডিসিপ্লিন ক্রিকেট, ফুটবল টুর্নামেন্ট ছাড়াও অ্যাথলেট প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হচ্ছে। উপসানালয় হিসেবে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ, রয়েছে মন্দির। এ বছর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে নবনির্মিত দৃষ্টিনন্দন ক্যাফেটেরিয়ার উদ্বোধন করা হয়েছে। ইট পাথরের শহরের মধ্যে গোলপাতার ছাউনিতে গ্রাম বাংলার ছোঁয়া পেয়েছে এই ক্যাফেটেরিয়া। ওভাল শেপ আকারে নির্মিত এ ক্যাফেটেরিয়ার আয়তন ৫ হাজার ৪০০ স্কয়ার ফিট। এটি সবাইকে আকৃষ্ট করছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন লেকওয়ে। এখানে বৃক্ষছায়ায় হাটাহাটি গল্প আড্ডা ও চা কফির জায়গা।

বর্তমান সরকার দেশের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে ইতোমধ্যে হেকেপ প্রকল্প বাস্তবায়ন ছাড়াও শিক্ষার মান যাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত হয় সেজন্য বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল স্থাপন করেছে। এই কাউন্সিল ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক- বিএনকিউএফ এর গাইডলাইন অনুসরণ করে দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম পর্যায়ে বিশ্বমানের আউটকাম বেজড এডুকেশন (ওবিই) কারিকুলা প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। গত জানুয়ারি থেকে প্রণীত ওবিই কারিকুলা এবং একই ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ও মাস্টার্সে ক্লাস-পরীক্ষা গ্রহণ করা হচ্ছে।

বৈশ্বিক পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রমবিকাশের ধারায় এখন শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবনায় বিশ্বমান অর্জনে জোর দেওয়া হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে রিসার্চ ফোকাস্ড ইউনিভার্সিটি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। গবেষণার গুণগত মানোন্নয়নে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এ বছর আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং, কিউএস র‌্যাংকিং, টাইমস্ হায়ার এডুকেশন র‌্যাংকিং এ স্থান করে নিয়েছে। এছাড়াও এবছর ইউজিসির এপিএ মূল্যায়নে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ ৯৫.৪৭ নম্বর পেয়ে চতুর্থ স্থান অর্জন করেছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে ডিজিটালাইজেশনের জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক, একাডেমিকসহ সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের গতি ত্বরান্বিত করতে ডি-নথি চালু, সফট ইনফ্রাস্ট্রাকচার প্রকল্পের আওতায় হাইস্পিড ইন্টারনেট ব্যাকবোন, সিকিউরিটি সার্ভিলেন্স সিস্টেম স্থাপন এবং আধুনিক সুবিধা সম্বলিত স্মার্ট ক্লাসরুম তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ভর্তি ও রেজিস্ট্রেশন, আবাসিক হলের সিট বুকিং, অ্যাপস্ ব্যবহার করে ঢাকাস্থ গেস্ট হাউজের রুম বুকিং, অনলাইনে চাকরির আবেদন, আধুনিক সুবিধা সম্বলিত প্রশিক্ষণ কক্ষ, ল্যাব উল্লেখযোগ্য। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শীঘ্রই স্মার্ট কার্ডের আওতায় আনা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়ন হলে বিশ্ববিদ্যালয় ডিজিলাইজেশনের ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অধীন ‘ডিজিটাল উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবন ইকোসিস্টেম উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনোভেশন হাব-স্মার্ট ইউনিবেটর স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। গত ১৮ অক্টোবর (বুধবার) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ রাসেল দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি স্মার্ট কার্ড পাঞ্চ করে এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির অটোমেশনের কাজও শেষ হয়েছে। ২৫ নভেম্বর এটি উদ্বোধন করা হবে। এটা সম্পন্ন হলে এতদঞ্চলের মধ্যে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি হবে অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং যা অনলাইনে ব্যবহারের সুযোগ উন্মুক্ত হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ শিক্ষাদানের পাশাপাশি গবেষণা ও উদ্ভাবনা। একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানে নিয়ে যায় তার গবেষণা ও উদ্ভাবনার সাফল্য। এ লক্ষ্য সামনে রেখে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম বৃদ্ধি তথা নবীন-প্রবীণ গবেষকদের গবেষণায় আগ্রহী করে তুলতে গবেষণার অনুদান বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের গবেষণা বরাদ্দ ৩৫ লাখ থেকে বর্তমানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৫.৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ইতিবাচক দিক। শিক্ষকদের পাশাপাশি মাস্টার্স ও পিএইচডি শিক্ষার্থীদেরও গবেষণায় উৎসাহিত করতে অনুদান দেওয়া হয়েছে। গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে নবীন শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গবেষণা ও প্রকাশনা যাতে আন্তর্জাতিক পরিসরে ব্যাপ্তি ও পরিচিতি পায় সে জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় স্টাডিজকে যুগোপযোগী করা হয়েছে। এর জন্য স্বতন্ত্র ওয়েবসাইট খোলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষককে গুগল স্কলার আইডি খোলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং তাদের গবেষণা নিবন্ধ সেখানে উপস্থাপনের জন্য বলা হয়েছে। গবেষণাগারের পরিবেশ উন্নয়ন ও পরিসর বৃদ্ধি করা হচ্ছে। নিজস্ব গবেষণা তহবিল রিসার্চ ইনডোমেন্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে। গবেষণা সেলের নাম পরিবর্তন করে রিসার্চ এন্ড ইনোভেশন সেন্টার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় গবেষণাগারে আন্তর্জাতিকমানের যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে এবং একটি সেন্ট্রাল কম্পিউটিং ল্যাব স্থাপনের কাজ চলছে। এছাড়া প্রত্যেক ডিসিপ্লিনের গবেষণাগারের জন্য আরও নতুন যন্ত্রপাতির সংস্থান করা হচ্ছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর অবকাঠামো উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বেশ কিছু অবকাঠামোর নির্মাণকাজে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। এর মধ্যে ১০ তলা বিশিষ্ট জয়বাংলা একাডেমিক ভবন, ৫ তলা আইইআর ভবন, ৪ তলা বিশিষ্ট মেডিকেল সেন্টার, কেন্দ্রীয় গবেষণাগার, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের পার্শ্ব ও ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ, টিএসসি ভবন, জিমনেশিয়াম কমপ্লেক্স, আবাসিক ভবন, দৃষ্টিনন্দন মেইনগেট, সীমানা প্রাচীর, অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ভবনের ছাদে ২১৬টি সোলার প্যানেল বসানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

যা থেকে ১১৫ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও ৩০০ কিলোওয়াট সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন, আবাসিক হল ও অন্যান্য বড় স্থাপনার ছাদেও সোলার প্যানেল স্থাপন করা হবে। এর মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করারও পরিকল্পনা রয়েছে।  দৃষ্টিনন্দন প্রধান গেট নির্মাণ কাজও এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের অধিকতর আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে নতুন হল তৈরি, প্রশাসনিক, একাডেমিকসহ সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের গতি ত্বরান্বিত করতে সফট ইনফ্রাস্ট্রাকচার এর আওতায় হাইস্পিড ইন্টারনেট ব্যাকবোন, সিকিউরিটি সার্ভিলেন্স সিস্টেম স্থাপন এবং স্মার্ট ক্লাসরুম তৈরি করার উদ্যোগ, নিয়মিত জাতীয়/আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন, জীববিজ্ঞান স্কুলের জন্য গ্রিনহাউস স্থাপন, কেন্দ্রীয় গবেষণাগারকে আন্তর্জাতিক মানসম্মত করার লক্ষ্যে আইএসও সার্টিফাইড করা উদ্যোগ, খেলার মাঠের উন্নয়ন, আবাসিক হলসমূহে আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব তৈরি, সার্বিক কাজে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার, বিদেশি শিক্ষার্থীদের আবাসনের সুবিধার্থে ইন্টারন্যাশনাল হল/ডরমেটরি তৈরি, সুন্দরবনের উপর বিশ্বমানের রিসার্চ করার জন্য যুগোপযোগী সেন্টার তৈরি। এছাড়াও জীববিজ্ঞানভিত্তিক ৭টি বিভাগসমূহের জন্য মাঠ গবেষণারে প্রয়োজনীয় জমিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আগামী একশত বছরের চাহিদা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিরিখে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ২০৩ একর জমি অধিগ্রহণ, আরও ৩০০ কিলোওয়াট সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যুতের মোট চাহিদার ৪০% পূরণ, রিসার্চ ইনফরমেশন সেন্টার ডেস্ক তৈরি, সেন্ট্রাল কম্পিউটিং ল্যাব নির্মাণ, বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

এ বিষয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে এতদঞ্চলের মানুষের অপরিসীম অবদান ও ত্যাগ অনস্বীকার্য। আমরা সবসময়ই সে বিষয়টি ধারণ করি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশের সংস্কৃতি-ঐতিহ্য ধারণ করেই এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের ২০৪১ সালের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অভিলক্ষ্য পূরণে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয়’ হিসেবে গড়ে তুলতে ডিজিটালাইজেশনের পথে এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, দেশের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে আস্থার জায়গা সৃষ্টিতে সক্ষম হয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।

এটা ধারণ করেই এ বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বমান অর্জনের পথে এগিয়ে যাবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রায় সকল শাখার মেলবন্ধনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গরূপ পরিগ্রহের পথে। এ বিশ্ববিদ্যালয় শীঘ্রই শিক্ষা, গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিশ্ব পরিমণ্ডলে আলো ছড়াবে; সে প্রত্যাশার সাথে আজ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-২০২৩ এর এই শুভক্ষণে সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।

লেখক:খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মাহমুদ হোসেন