এক্সপেরিমেন্ট কেন গরিবের সন্তানদের ওপর চালান?
যুক্তরাজ্যের হেইলিবারি (Haileybury) নামের একটি স্কুল ভালুকায় স্থাপিত হয়েছে। অসাধারণ সুন্দর ক্যাম্পাস। ঠিক যেমন ব্রিটিশ বোর্ডিং স্কুল। এটিও চলবে ব্রিটিশ কারিকুলামে। এখানে পড়তে হলে শুধু মেধাবী হলে চলবে না। বড়লোকের সন্তান হতে হবে। যেনতেন বড়লোক হলে চলবে না। বছরে খরচ হবে প্রায় ৪০ লাখ টাকা।
সম্প্রতি দেখা গেছে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর ছেলেমেয়ে ইংল্যান্ডের নামিদামি প্রাইভেট স্কুলে পড়তে গিয়েছে যাদের অনেকেই সরকারি আমলাদের সন্তান। এটা দেখে এই স্কুলের কর্তৃপক্ষ এবং সাথে নিশ্চই কোন বাংলাদেশি আছেন, যারা ভেবেছে বাংলাদেশে এর শাখা খুললে দারুন চলবে, অনেক লাভ হবে!
একটু কম খরচে বাংলাদেশে থেকেই এরা পড়তে পারবে। তাছাড়া ভালুকা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া হওয়ায় সেখানে অনেক বিদেশিও আছেন। আসলে ঢাকায় এরকম ব্যয়বহুল স্কুল আরো আছে। তবে এমন সুন্দর ক্যাম্পাসভিত্তিক স্কুল তেমন একটা আছে বলে আমার জানা নেই। উত্তরায় রেডব্রিক ও ডিপিএস এসটিএস স্কুল আছে।
আরো পড়ুন: রাজধানীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটির দিনেও ক্লাস-পরীক্ষা, চাপে শিক্ষার্থীরা
এসব স্কুলের ছাত্রদের বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য শেখানোর চাপ নেই। ঘাড়ে ধরে ১০টি সাবজেক্ট পড়ানোর বাধ্যবাধকতা নেই। রান্নাবান্না, ঘর গোছানো, প্রজনন স্বাস্থ্য ও ধর্ম শেখানোর বাধ্যবাধকতা নেই। এদের মাতৃভাষা শেখা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বড় হওয়ার চাপ নেই। এদের রাজনীতি করা বা মিছিলে যাওয়ার চাপ নেই। এরা মুক্ত স্বাধীন। কারণ এরা ক্ষমতাবান বড়লোকদের সন্তান।
এরা দেশের সাধারণ মানুষদের চিনবে না জানবে না। সাধারণ মানুষের ভাষা বুঝবে না, দুঃখ আনন্দ বুঝবে না। এরা একসময় বিদেশে পড়ে এসে রাজনীতি করলে সোজা বড় পদে, বাবার ব্যবসা ধরলে সোজা বড় চেয়ারে। যতরকম এক্সপেরিমেন্ট, কেন গরিবের সন্তানদের ওপর চালান?
প্রজনন স্বাস্থ্য শেখা বলেন, রান্না বান্না বলেন, কিছু করে খাওয়া বলেন, ডিজিটাল প্রিযুক্তি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বলেন সবই সাধারণ গরিবের পোলাপানদের জন্য। এরা একটু পড়বে। আর এদের সর্বোচ্চ স্বপ্ন হবে বিসিএস দিয়ে সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে আরামে ক্ষমতা দেখিয়ে একটা জীবন পার করে দেবে।
লেখক: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়