১১ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৪৯

দারিদ্র দূরীকরণে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

দারিদ্র দূরীকরণে শিক্ষার্থীদের ভাবনা  © সংগৃহীত

দরিদ্রতা আমাদের দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা। বর্তমান সময়ে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমছে না আশানুরূপ। আমরা যদি একে অপরের পাশে না দাঁড়ায়, মানুষ মানুষের জন্য কাজ না করি তাহলে দরিদ্র দূরীকরণ অসম্ভব প্রায়। তাই বিষয়টি নিয়ে আমাদেরকেই ভাবতে হবে, সচেতন হতে হবে। বাংলাদেশ কে 'দরিদ্র মুক্ত' দেশ গড়তে এবং সমস্যাগুলি মোকাবেলার বিষয়ে কী ভাবছেন শিক্ষার্থীরা? কথা হয় পাঁচ তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর সাথে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রপ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ ইবনে সাইদ বলেন, নিজ জায়গা থেকে  কাজ করতে হবে। দরিদ্রতা দূরীকরণে সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা ও এনজিও গুলো অনেক সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। বেড়েছে শিক্ষার হার ও নারীর ক্ষমতায়ন। সর্বক্ষেত্রে অংশগ্রহণে গ্রামে অকৃষি খাতের বিকাশ ঘটেছে। গড়ে উঠেছে সেবা খাত। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক রেমিট্যান্সের প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্ষুদ্র ঋণ, বিধবা ভাতা, কর্মমুখী শিক্ষার অনেক প্রসার ঘটেছে বাংলাদেশে। তাছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ দেশে ব্যাপক হারে, হাঁস-মুরগি, কোয়েল-কবুতর, টার্কি মোরগ, সাপ, কুমিরের ফার্ম গড়ে তোলা হচ্ছে যা ব্যক্তির কর্ম সংস্থানের দ্বার উন্মুক্ত করছে। মাছ, শুঁটকি, চিংড়ি, কাঁকড়া, কুঁচিয়া, শামুক-ঝিনুক  বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অব্যাহত থাকলে এ দেশে দারিদ্র্য কমে যাবে সহজেই। তৈরি পোশাক খাতে বিপুলসংখ্যক কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে, যার বড় অংশ হচ্ছে নারী। পোশাক কারখানায় কাজ করে অনেকে দারিদ্র্যমুক্ত হয়েছেন। এ ছাড়া ধান, সবজি, ফল উৎপাদনে অভাবনীয় উন্নতির কারণেও দারিদ্র্য বিমোচনে সফলতা এসেছে।বাংলাদেশের নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল। যেমন, সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল সমূহ। এখানে ৫০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করে ১ কোটি ২৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা হচ্ছে। এতে আয় বাড়বে ৪ হাজার কোটি ডলার। জিডিপি বাড়বে ২ শতাংশ। পিডব্লিউসি ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছে ২০৩০ সালে বাংলাদেশের হতদরিদ্র হ্রাস পাবে ৩ শতাংশ।

তাছাড়া ইইউ-পিকেএসএফের প্রকল্প চালু হচ্ছে খুব শীঘ্রই ‌‌।পাথওয়েজ টু প্রসপারিটি ফর এক্সট্রিমলি পুওর পিপল-ইউরোপীয় ইউনিয়ন’ শিরোনামে তিন বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের মোট বাজেট ২০৫ কোটি টাকা। যার পুরোটাই অর্থায়ন করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এর মাধ্যমে দেশের চরাঞ্চল, হাওর ও উপকূলের ১২ জেলার ৩৪টি উপজেলার ২ লাখ ১৫ হাজার অতি দরিদ্র পরিবারের দারিদ্র্য বিমোচনে বিভিন্ন কর্মকান্ড পরিচালিত হবে।করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বাংলাদেশের দারিদ্র্য জয় করার কাজ অনেকটা ধীর হয়ে পড়েছে। করোনার সময়ে বেকারত্ব বেড়েছে । তাছাড়া বৈশ্বিক যুদ্ধাবস্থার জন্যে ও বাংলাদেশ এর অর্থনীতি সংকটপূর্ণ অবস্থায় পড়েছে । তাছাড়া দুর্নীতি ও অনিয়মের বেড়াজালে বাংলাদেশ এর দারিদ্র্য বিমোচন এর যাত্রা ক্রমশ ই মন্থর হচ্ছে । সরকারের সঠিক তদারকি ও জনসচেতনতা এই অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে । তাছাড়া সম্পদের সুষম ও সঠিক  বন্টন ও এর থেকে সর্বোচ্চ ফলাফল নিয়ে আসার জন্যে সবার নিজের জায়গা থেকে কাজ করতে হবে ।

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী আফরা সাইয়ারা চৌধুরী বলেন, কর্মমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। দারিদ্র্য একটি জটিল ও বহুমাত্রিক সমস্যা। দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থানকারী মানুষের জীবন হয় মানবেতর। বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ দারিদ্র্য মূল্যায়নের প্রতিবেদনে (২০১৯) বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনকে ‘উদ্দীপনামূলক গাথা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ২০০০ সালের পরে গত দেড় দশকে আড়াই কোটিরও বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার বাইরে চলে এসেছে। বস্তুতপক্ষে, বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচকের মাধ্যমে ব্যক্তিপর্যায়ে সব বঞ্চনা (খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান প্রভৃতি) বিবেচনায় দারিদ্র্য মূল্যায়ন করা উচিত এবং এতে কে দরিদ্র ও কী কারণে দরিদ্র , সে ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া সম্ভব।  ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সময়ে বহুমাত্রিক সূচক গঠনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার বহুমাত্রিক দারিদ্র্য মোকাবেলার প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং এমইপির কথা আলোচিত হয়। আমাদের দেশে আয়-ব্যয় ভিত্তিক দারিদ্র্যের পাশাপাশি বহুমাত্রিক দারিদ্র্য পরিমাপের সময় এসেছে। মধ্য আয়ের দেশ থেকে উন্নত দেশে রূপান্তরিত হতে হলে আমাদের শুধু আয়ভিত্তিক দারিদ্র্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। যেহেতু এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য দারিদ্র্য নিরসন অপরিহার্য, তাই বহুমাত্রিক দারিদ্র্য নিরসনের মাধ্যমে কার্যত আমরা বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নচিত্র দেখার প্রয়াস পাবো। কতিপয় বঞ্চনার সমন্বয়ে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য পরিমাপ করা হয়। যে দেশের মৌলিক অধিকারে বঞ্চনা বেশি, সে দেশের বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার তত বেশি হবে।

জাতিসংঘ ঘোষিত ১৭টি টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচীর প্রথম অভীষ্টেই দারিদ্র্য বিলোপের কথা উল্লেখ রয়েছে। সেখানে সর্বত্র সব ধরণের দারিদ্র্যের অবসানের কথা বলা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সার্বিকভাবে ও পরিপূর্ণ মাত্রায় দারিদ্র্যের অবসান ঘটাতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা একটি সাহসী ও যুগান্তকারী পদক্ষেপই বটে। কর্মসূচীর ১.খ.১ নং উপ-ধারায় বর্ণিত হয়েছে যে, নারী, দরিদ্র ও অরক্ষিত (সংকটাপন্ন) জনগোষ্ঠীকে অসামঞ্জস্যভাবে সেবা প্রদান যাতে না করা হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট খাতসমূহের সরকারি রাজস্ব ও মূলধনী ব্যয়ের অনুপাতের কথা উঠে এসেছে।  নারী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মাঝে বিদ্যমান দারিদ্র্যের প্রবণতা হ্রাসকল্পে সর্বক্ষেত্রে সম্পদের সুষম বণ্টন, সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রমসমূহে যুবসমাজের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, সামাজিক সমতা বিধান, সঞ্চয় বৃদ্ধি, কৃষি উন্নয়ন, শিল্পায়নের দিকে মনোযোগ বৃদ্ধি, কুটির শিল্পের প্রসারকল্পে উদ্যোগ গ্রহণ, বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসার, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনার ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ, গণমুখী প্রশাসনিক কাঠামো সৃষ্টি, স্বেচ্ছাসেবী কার্যাবলীর তত্ত্বাবধানসহ স্থানীয় পর্যায়ে কর্মমুখী পরিকল্পনা প্রভৃতি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। টেকসই উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য দারিদ্র্যসীমা ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকার, সম্পদ ও পরিষেবা পাওয়ার সুযোগও বাড়াতে হবে।

সাভার মডেল কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাসফিয়াতুল মীম বলেন, দারিদ্র্যের অবসান হোক। বাংলাদেশে সবচেয়ে দরিদ্র জেলা কুড়িগ্রাম। এই জেলার ৫৪ শতাংশ মানুষই হতদরিদ্র।তাছাড়া গ্রামীণ দারিদ্র্যের হার দাঁড়িয়েছে ১৭.২ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ৫.৩ শতাংশ (২০১৬ সালে)। যার প্রায় অর্ধেক শিশু।এ সমস্যাটা বেশি তৈরি হয়েছে মহামারি করোনা ভাইরাসের পর থেকে। সেপ্টেম্বর ২০২০-এ প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে দারিদ্র্য মাত্র কয়েক মাসে ৭ শতাংশ বেড়েছে, যদিও তা গত ২০ বছর ধরে ক্রমাগত কমছে।দরিদ্র দূরীকরণে সরকার কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। ব্যাপক দারিদ্র্য নিরসনের কৌশল এবং নীতিগুলি বিকাশ ও বাস্তবায়ন করতে হবে, যার মধ্যে অন্যতম হলো দারিদ্র্যের মূল কারণগুলিকে চিহ্নিত করা, এর অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা এবং দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা  প্রদান করা।আর লক্ষ্যযুক্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে  সরকারের এমন কর্মসূচি এবং প্রকল্পগুলিতে সংস্থান বরাদ্দ করা উচিত যা সরাসরি দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্য করে, যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, এবং দরিদ্র এলাকায় অবকাঠামো উন্নয়ন নিশ্চিত করে।

কর এবং সামাজিক কল্যাণ নীতিগুলি আয়ের পুনর্বন্টন এবং সম্পদের বৈষম্য কমাতে ব্যবহার করা যেতে পারে, যার ফলে মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনতে সাহায্য করবে।দারিদ্র্য নিরসনের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, বিশুদ্ধ পানি এবং স্যানিটেশনে সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা অপরিহার্য। সরকারের উচিত এইসব ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা এবং প্রবেশের বাধা দূর করা।কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং শালীন কাজের পরিবেশ প্রচার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং শালীন কর্মসংস্থানের সুযোগ সুবিধা দিতে পারে, বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য।সরকার কে SDG 1-এর দিকে অগ্রগতি ট্র্যাক করতে এবং দারিদ্র্য নিরসনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য নিজেদেরকে দায়বদ্ধ রাখতে মনিটরিং এবং রিপোর্টিং ব্যবস্থা স্থাপন করা উচিত।অন্যান্য দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং এনজিওগুলির সাথে সহযোগিতা দারিদ্র্য নিরসনের প্রচেষ্টার জন্য সংস্থান এবং দক্ষতা অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

সরকারকে দারিদ্র্যের গতিশীলতা এবং সেই অনুযায়ী নীতিগুলি আরও ভালভাবে বোঝার জন্য ডেটা সংগ্রহ এবং গবেষণা পরিচালনায় বিনিয়োগ করা উচিত। প্রান্তিক গোষ্ঠীর অধিকার রক্ষা করে এবং দারিদ্র্য নিরসনের জন্য একটি সক্ষম পরিবেশ তৈরি করে এমন আইনের বিকাশ ও প্রয়োগ অপরিহার্য।দারিদ্র্য নিরসনের প্রচেষ্টা টিকিয়ে রাখার জন্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং সংঘাতের দুর্বলতা হ্রাস করা গুরুত্বপূর্ণ।সামগ্রিকভাবে, SDG 1 অর্জন এবং বৈশ্বিক পর্যায়ে দারিদ্র্য হ্রাস করার প্রচেষ্টার সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দারিদ্র্যের অবসান হোক সেই প্রত্যাশা করি।

ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং-এর শিক্ষার্থী খোদেজা আক্তার বলেন, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা দরকার। এসডিজি ১ শুধুমাত্র চরম দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্যই নয়, 2030 সালের মধ্যে দারিদ্র্যকে এর সমস্ত মাত্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনার আহ্বান জানায়৷ SDG ১ বা Sustainable Development Goal ১ হলো "দারিদ্র্য  নীতির শান্তি, সুরক্ষা এবং সম্মান"। এই লক্ষ্যের অধীনে সরকার দারিদ্য নীতির আওতায় এই লক্ষ্যের প্রাপ্তি করতে হলে দারিদ্র কমাতে সাহায্য করতে পারে, সবচেয়ে দারিদ্রবাদী বা সর্বনিম্ন আয়ের লোকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে, এবং ক্ষমতা বাধাও সরকারের লক্ষ্য হতে পারে।শিক্ষার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নীতি উদ্যোগ নেয়া দরকার, যাতে দারিদ্যবাদী এবং সর্বনিম্ন আয়ের শিক্ষা সাধনা করতে পারে।তাছাড়া প্রাইমারি স্বাস্থ্য সেবা, নিরাপত্তা স্বাস্থ্য যোগে সরকার জনগণের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োগ করতে পারে।আর নিরাপত্তা এবং সুরক্ষার ক্ষেত্রে  সম্প্রদায় নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে সরকার উপায়ে যোগে থাকতে পারে।

এই সম্পর্কে অধিক বিস্তারিত জানতে স্থানীয় সরকার তথা উপদেষ্টা বা অধিকারীর সাথে যোগাযোগ করা উচিত যাতে সঠিক বিষয়গুলি বুঝা যায়।এসডিজি অর্জনের জন্য, আমাদের অবশ্যই তাদের লক্ষ্যবস্তু করতে হবে, যারা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে বসবাস করছে।এবং এসকল ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়গুলিকে সহায়তা করতে হবে।

ইডেন মহিলা কলেজের অর্থনীতি বিভাগের পরশমণি বলেন, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। দারিদ্র্য কাটিয়ে ওঠে বিশ্বকে সমৃদ্ধশালী করার জন্য ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ১৭ টি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ শুরু করে। এই লক্ষ্য ২০৩০ সালে পূর্ণ হবে।যার ১ম টিতে বলা হয়েছে 'সর্বত্র সব ধরনের দারিদ্র্যের অবসান'।এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য ৭টি লক্ষ্য এবং ১৩ টি সূচক রয়েছে। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও এসডিজির লক্ষ্য মাত্রা পূরণে সমান তালে কাজ করে যাচ্ছে।তবে আমাদের দেশে দারিদ্র্য অন্যতম প্রধান এক সমস্যার নাম।দারিদ্র্য দেশে উদ্বেগের কারণ হলেও,বাংলাদেশের নিজস্ব কিছু দারিদ্র্য দূরীকরণের মডেল আছে, যা বিশ্বে প্রশংসা পেয়েছে এবং কোনো কোনটি তৃতীয় বিশ্বের কিছু দেশে অনুকরণীয়ও।

তাছাড়া  দারিদ্র্য নিয়ে কাজ করে তিন মহান বাঙালি নোবেল জয়ের অনন্য গৌরব অর্জন করেছেন। ড. অমর্ত্য সেন (১৯৯৮) পেয়েছেন দারিদ্র্য বিষয়ে তাত্ত্বিক জ্ঞান তৈরির জন্য। ড. মুহাম্মদ ইউনূস (২০০৬) পেয়েছেন দারিদ্র্য দূরীকরণে গরিবদের উপযোগী ব্যাংক তৈরির জন্য। আর ড. অভিজিৎ ব্যানার্জি (২০১৯) পেয়েছেন দারিদ্র্য দূরীকরণে পরীক্ষাগার পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য।এতো শত পরিকল্পনা, গবেষণা আর পুরস্কারের পরও দরিদ্র দূরীকরণ কতটুকু  সম্ভব হয়েছে প্রশ্ন থেকে যায়।জানতে ইচ্ছে করে কবে দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশ পাবো? কেনো এ প্রশ্ন করছি তা দরিদ্রতার পরিসংখ্যান দেখলেই বোধগম্য হবে। ২০২৩ এর প্রকাশিত সূচকে বাংলাদেশের র‍্যাংকিং তিন ধাপ এগিয়ে ১৬৬ টি দেশের মধ্যে ১০১ তম। বর্তমানে দারিদ্রতার হার ১৮.৭%। অতি দারিদ্র্যের হার ৫.৬%। যা ২০১৬ সালে যথাক্রমে ছিল ২৪.৩% ও ১২.৯% । বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি দরিদ্র কুড়িগ্রাম জেলায়। এখানে প্রতি ১০০ জনে ৭১জন দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছে।পরিসংখ্যান আমাদের হতাশ করলেও দেশের বর্তমান গতিশীলতা আর উন্নয়ন দরিদ্র দূরীকরণে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে আশা করি।

কেননা, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বাড়ছে প্রতিনিয়ত।অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এক প্রতিবেদনে জানান ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২৭৬৫ মার্কিন ডলার।ফলে সমীকরণ পর্যালোচনায় বলা যায়, বাংলাদেশ দরিদ্র দূরীকরণে অনুকরণীয় মডেল হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত হবে অদূর ভবিষ্যতে কিংবা অতি শীঘ্রই। আর এসডিজি লক্ষ্য মাত্রা-১  অর্জন করতে হলে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। তাছাড়া কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা,বেকারত্ব কমানো,ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়া, কৃষি কার্যক্রমে উৎসাহী করা,সকলের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত কর ও কর বা শুল্ক কমানোর ফলে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সহায়ক হবে।