ছাত্রলীগের অবৈধকে ‘বৈধ’ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

মেহেদী হাসান মুন্না
মেহেদী হাসান মুন্না  © টিডিসি ফটো

বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোনো আইন বা নিয়ম নেই যে, যাদের শিক্ষা জীবন শেষ হয়েছে তারা হলে অবস্থান করতে পারবেন। কিন্তু ছাত্রলীগের বেলায় নিয়মটা ভিন্ন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে অবৈধভাবে ৭ বছর যাবৎ অবস্থান করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু। এছাড়াও একই হলে ডজন খানিক নেতাও অবৈধভাবে অবস্থান করছেন।

বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ১১টি আবাসিক হলে আসন আছে ৫ হাজার ৩৮৩টি। এর মধ্যে পাঁচ শতাধিক আসন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দখলে রেখেছেন। এছাড়াও রয়েছে আসন বাণিজ্য, শিক্ষার্থীদের আসন থেকে নামিয়ে দেওয়া, টাকার বিনিময়ে একজনের সিটে অন্য শিক্ষার্থীকে উঠিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা।

বঙ্গবন্ধু হলের ২২৮ নম্বর কক্ষে থাকতেন গোলাম কিবরিয়া ও ২৩০ নম্বর রুমে থাকতেন ফয়সাল আহমেদ রুনু। ২২৯ নম্বর কক্ষ প্রচার সেল ও ২৩১ নম্বর কক্ষ দপ্তর সেল হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। প্রচার ও দপ্তর সেলের কক্ষ দুটিতে থাকেন বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

যে চারটি কক্ষের কথা বললাম, সেখানে প্রত্যেকটি কক্ষে চারজন করে আবাসিক শিক্ষার্থী থাকার কথা। হিসেব মতে, ১৬ জন শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা ৭ বছর যাবৎ অবৈধ প্রক্রিয়ায় দখল করে আসছেন তারা। হলে আবাসিক শিক্ষার্থীদের প্রতিমাসে ১০০ টাকা সিট ভাড়া দিতে হয়। অবৈধভাবে থাকার ফলে সিট ভাড়া থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন হল প্রশাসন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসন সংকটের কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীকেই থাকতে হয় ক্যাম্পাসের বাহিরে মেস কিংবা বাসা ভাড়া নিয়ে। যাদের দ্বারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার খর্ব হয়, তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজ দায়িত্বে হলে রেখে আমাদের যে বার্তা দেয় তা হলো ভয় সঞ্চার করা। উচ্চশিক্ষা নিতে এসে শিক্ষার্থীদের থাকতে হয় ভয়ের সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে। তারা মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটা পর্যায়ে ভয়ের সঞ্চার করে ক্ষমতাসীন সরকারের ভীত শক্ত করার ভূমিকা পালন করেন।

অবাসিক হলগুলোতে আপনার যে হল বরাদ্দ থাকবে সেই হলেই থাকতে হবে। কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের হল কমিটির সময় যে নজির আমরা দেখেছি তা আমাদের মধ্যে আরো ভয়ের সঞ্চার করেছে।

দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে কমিটি হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু হলে বরাদ্দ দেওয়া হয়। যদিও তারা ছিলেন অন্য হলের আবাসিক ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে হলে প্রথমত সবাইকে সমান সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু আমাদের প্রশাসন তার উল্টো।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। এখনও কমিটি ঘোষণা হয়নি। যারা দায়িত্ব পাবেন তাদের যদি ছাত্রত্ব না থাকে অথবা এখনো যারা অবৈধভাবে হলে অবস্থান করছেন তাদেরকে কি বছরের পর বছর অন্য শিক্ষার্থীদের বৈধ সিট দখল করার সুযোগ করে দিবে প্রশাসন?

লেখক: সভাপতি, নাগরিক ছাত্র ঐক্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ সংবাদ