প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির ২৪ বছর
উত্তরবঙ্গের প্রথম ও দেশের দ্বিতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মাদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি)। আজ ১১ই সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টি ২৪ বছর পেরিয়ে ২৫ বছরে পা দিয়েছে। ১৯৭৬ সালে ‘এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নামে প্রতিষ্ঠিত হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। এরপর কৃষি কলেজে উন্নীত হয়ে ১৯৯৯ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর ঘোষিত হয় পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় রূপে। প্রতিষ্ঠার ২৪ বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়টি এখনও অনেক দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে। তবে প্রাপ্তির মাত্রাও কম নয়।
বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে প্রাক্তন ও বর্তমান কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাফল্য ও অগ্রগতি এবং তাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস প্রতিনিধি রিয়া মোদক।
‘পরিপূর্ণরূপে বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠুক’
করোনা পরবর্তী সময়ে সেশনজট কমাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়ার কথা থাকলেও তার বাস্তব প্রয়োগ এখনো ঘটেনি। এনরোলমেন্টে হল-ক্লিয়ারেন্স থেকে শুরু করে ব্যাংকে টাকা জমা দেয়াতে এখনো চলমান রয়েছে অ্যানালগ পদ্ধতির ব্যবহার। সেমিস্টারের ফলাফল দেয়ার ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যাচ্ছে দীর্ঘসূত্রিতা। বাশেরহাটের স্থানীয় মেস মালিক, অটো চালক, দোকানিরা যেভাবে ইচ্ছা যাচ্ছেতাই স্বেচ্ছাচারিভাবে বাড়িভাড়া, অটোভাড়া, খাবারের দাম ইচ্ছে মতো নির্ধারণ করেই চলেছে। অথচ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে সবকিছু সুলভমূল্যে শিক্ষার্থীদের নাগালের মধ্যে থাকার কথা। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও যৌন হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশাসনের উচিৎ জিরো-টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
তবে এতসব অপ্রাপ্তির মাঝেও, রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন কার্ড, ওয়ান স্টপ সার্ভিস, দেশের প্রথম ক্যাশলেস ইউনিভার্সিটির মত উদ্যোগ প্রশংসার দাবীদার।
ফাহিম আল মাহমুদ, পরিসংখ্যান বিভাগ, হাবিপ্রবি
‘ছাত্র সংসদ ও অ্যালামনাই এসোসিয়েশন অতি দ্রুত প্রয়োজন’
উত্তরবঙ্গের কৃতি সন্তান, তেভাগা আন্দোলনের নেতা মরহুম হাজী মোহাম্মদ দানেশের নামে ১৯৯৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সময় থেকে অনেক ক্ষেত্রেই এই বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে গেছে। তবে বলতে কষ্ট নেই গবেষণা ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে হাবিপ্রবি। শিক্ষক সংকটসহ বিভিন্ন প্রতিকূলতায় একাডেমিক দিকেও অনেক সময় কিছুটা বাঁধাগ্রস্থ হয়েছে। তবে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গুণী শিক্ষক ও মেধাবী শিক্ষার্থীও রয়েছে। এজন্যই বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, একাডেমিক উন্নয়ন হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি অতি দ্রুত এই বিশ্ববিদ্যালয় একটি একাডেমি ও গবেষণা ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত হবে। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম কামারুজ্জামান স্যার একাডেমি উন্নয়ন করণ, গবেষণা বৃদ্ধি ও শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য কৃষক সেবা কেন্দ্র, ক্যারিয়ার এডভাইজরি সার্ভিস সেন্টার ও অবকাঠামো উন্নয়ন করেছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও গতিশীল করতে এখানে ছাত্র সংসদ ও অ্যালমেনাই এসোসিয়েশন অতিদ্রুত প্রয়োজন। সবশেষে বলতে চাই, আমার বিশ্ববিদ্যালয় আমার কাছে সব সময়ই সেরা।
মানিলা নিশা, কৃষি অনুষদ, হাবিপ্রবি
‘ক্যাম্পাসের মন্দির চাই’
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ২৫ বছরে পা দিবে তারপর ও প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির খাতাটা অনেক বড়। বাংলাদেশে প্রথম আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েই কৃত্রিমভাবে উটপাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানো হয়েছে। হাজারো সনাতনী ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাণের দাবী ছিলো একটা মন্দির। আজ থেকে অনেক বছর আগে রিজেন্ট বোর্ডে পাশ হওয়ার পরও তা কেবলই স্বপ্নই হয়ে আছে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব নায্য দাবী আদায় করতে কি আন্দোলন করা ছাড়া আর কোনোই রাস্তা নেই? এত বড় প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেও সব কিছুর জন্য কেনো আমাদের রাস্তায় নামতে হয়?
সেশন জট যদিও আগে অনেক ছিলো, যা বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম কামারুজ্জামান স্যার অনেক কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন, আশা করি আরও কমিয়ে আনবেন।
আবির চন্দ্র, ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিমেল সায়েন্স অনুষদ, হাবিপ্রবি
‘সেশনজট নিরসন চাই’
কালচার বা এনভায়রনমেন্ট এর সাথে সাথে ভার্সিটির ও কিছু ব্যাপার আছে যেমন সেশন জট, কোয়ালিটিফুল টিচার, ভালো ল্যাব ইত্যাদি। এইগুলার ও অনেক ক্ষেত্রেই উন্নতি হচ্ছে। তবে সেশনজট একটা বড় সমস্যা এখনো আছে। বিশেষ করে করোনার সময়ে যেই ব্যাচ গুলা ছিলো তারা অলরেডি অনেক পিছিয়ে গেছে। হয়তো কিছুটা মেকাপ করা যেতো৷ সময় গুলা কিন্তু কেনো হয়নি বা কার জন্য হয়নো এইগুলা না জেনে মন্তব্যা করা টা ঠিক না। তবে অনেক ভার্সিটি মেকাপ করতে পারলে আমাদেরও উচিৎ ছিলো করা। কারন দেরী করে বের হওয়া মানে এই কম্পিটিশনের যুগে নিজেকে হাজারো মানুষের পেছনে রাখা।
মোহাম্মদ শিখর আলী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, সিএসই অনুষদ, হাবিপ্রবি