শাহবাগ থানায় ছাত্র নেতার এক রাতের গল্প
প্রিয় ভাই-বোনেরা আপনারা জানেন ৮ আগষ্ট ৩৫ এর আন্দোলনে শরিফুল হাসান শুভ ভাইসহ শাহবাগ থানায় নিরাপরাধ ছাত্রদের ১৩ জন কে গ্রেফতার করা হয়। আমার সেই দিনের সবচেয়ে বড় কষ্ট হলো শুভ ভাই এবং অন্যদের উপর পুলিশের অমানবিক লাঠি চার্জ। জনবানি অনলাইন পোর্টাল এর লাইভে স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে, ডিবি প্রধান হুকুম দিচ্ছেন পিটাও, পিটাও সবাইকে, তিনি এবং তার বাহিনী আমার ভাইদের কি মারটা না মারলো!
একজন রাখালও গরুকে লাঠি দিয়ে এমন আঘাত করেনা। শক্তি শালি লাঠি দিয়ে শরীরের সব শক্তি দিয়ে নিরাপদ মানুষ গুলিকে মারাত্মক ভাবে জখম করল, যা অত্যন্ত অমানবিক, ঘৃণিত, পাষবিক এবং সন্ত্রাসী হামলার সামিল। এই হামলার তিব্র প্রতিবাদ জানায়।
যাই হোক আপনারা সব কিছুই জানেন এবং ভুক্তভোগী। আমি সেই দিনের রাতের এক বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরছি। যখন ঘোষণা আসলো গ্রেফতারকৃত সকলকে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার। আমি আমার জেলার একজন গার্ডিয়ান হয়ে তাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য সাহস করে থানায় গেলাম। রাত ১:৫৬ মিনিটে থানার গেটে গিয়ে শুভ ভাইকে কল দিলাম, দেখি ভাই গেটের ভিতরে দাড়িয়ে আছেন। তিনি থানার অফিসার ইনচার্জ এর কাছে নিয়ে গেলেন। আমাকে জিজ্ঞেস করা হলো সে আমার সম্পর্কে কে হন, জবাবে বললাম সে আমার এলাকার ছোট ভাই। কিন্তু তারা ব্লাড কানেক্টেড কাওকে ছাড়া তাকে ছাড়বেন না বলে জানিয়ে দিলো।
আসল ঘটনা আপনাদের সাথে শেয়ার করি, আমরা সবাই খবর পেয়েছিলাম যে শুভ ভায়ের মুক্তি হয়ে গেছে এবং আমরা সেটার ভিক্তিতে গ্রুপে পোস্ট করেছিলাম। কিন্তু থানায় গিয়ে দেখলাম ভিন্ন চিত্র। (১৩ জনের যে সাধারণ মুচলেকা দেয়া হয়েছিল সেখানে শুভ ভাই স্বাক্ষর করেছেন এবং তার মুক্তিতে আর কোন সমস্যা ছিল না।)
শুভ ভাইয়ের জন্য আলাদাভাবে একটি অঙিকার নামা লিখা হলো। ডিউটিরত অফিসার ইনচার্জ সেই মুচলেকায় শুভ ভাইকে স্বাক্ষর করতে বললেন। ভাই সেটি পড়া শেষ করে টেবিলে ছুড়ে ফেলে দিয়ে বললেন এই শর্তে আমার স্বাক্ষর করা সম্ভব নয়,তাতে আমার জেল হোক, ফাঁসি হোক যা হবার হবে। আমি খুব অবাক হলাম, উনি যে লিডার সেটা হয়তো ভুলেই গিয়েছিলাম। প্রকৃত লিডাররা এমনই হয়। ভাই আমাকে লেখাটি দেখালেন। যেখানে অনেক কিছুই মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে, কিন্তু ভায়ের এতোকিছুতে তেমন আপত্তি নাই।
একটি লাইনে তার আপত্তি, ‘যেখানে লেখা ছিলো এই আন্দোলনের নেতৃত্ব থেকে আমি সম্পূর্ণরূপে সড়ে দাঁড়ালাম।’ যেখানে আমার অস্তিত্ব মিশে আছে ভাই আমাকে বললেন এটা কি আমার পক্ষে কখনো সম্ভব?
চাকরির বয়সসীমা ৩৫ সফল করার জন্য একজন মানুষ কতটুকু ত্যাগী হলে তা বাস্তবায়নে কি পরিমান স্বপ্নবাজ হলে এবং কি পরিমান ডেডিকেটেড হলে ৩৫ কে তার অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে বলতে পারেন এটা আপনাদের কাছেই আমার প্রশ্ন রইল?
তারপর অফিসার ইনচার্জ এর রুম থেকে আমাকে নিয়ে বাইরে আসলেন। তার নিজের জন্য কোন চিন্তা নাই। গ্রেফতারকৃত ভাইদের দেখতে গেলেন তাদের খোঁজ খবর নিলেন। তাদের বললেন. তোমাদের কোন ভয় নাই, সবাই ছড়া পেয়ে যাবে। আমি খুব অবাক হলাম। যার কিছুক্ষন পরেই থানা থেকে মুক্তি পেয়ে বের হবার কথা ছিল, কর্তৃপক্ষের নতুন মুচলেকার একটি লাইন মেনে সাইন না করায় তাৎক্ষনিকভাবে মুক্তি বাতিল হয়ে গেলেও তাতে তার কোন আক্ষেপ নেয়। তিনি বললেন, আমার দ্বারা এই শর্তে সাইন করা সম্ভব নয় এতে যা হবার হোক!
তার পর ভাই অফিসার ইনচার্জ এর সাথে কথা বলেন। অফিসার বললেন ওসি স্যারের সাথে কথা না বলে কিছু করা যাবেনা। ওসি স্যার থানা থেকে অনেক আগেই বের হয়ে গেছেন। সকালে আসবেন। এরপর শাহবাগ থানায় সোফায় বসে রাত কাটল। ১ টি সোফায় ভাই, ভায়ের ছোট ভাই এবং আরেক জন চাপাচাপি করে বসেছিলেন। পাশের একটি সোফায় একজন পুলিশ এবং আমি বসেছিলাম।
শাহবাগ এর মত ব্যস্ত জায়গা এক সময় নিরিবিলি হয়ে যায়। গাড়ি-ঘোড়ার শব্দ নাই, এই শহরের সব মানুষ ঘুমের রাজ্যে বিভর। রাত তিনটা যায়, ৪ টা যায় একসময় ফজরের আজান শোনা গেল। অবাক হলাম এভাবেই থানার সোফায় বসে একটি রাত চলে গেল, ৩৫ এর জন্য একজন নেতার কি পরিমান ত্যাগ ভায়ের দিকে তাকায় আর চিন্তা করি। খাওয়া দাওয়া নাই, শান্তির ঘুম নাই, সারাটি রাত থানায় বসে আছে কার জন্য? কিসের জন্য এতো কষ্ট করছেন?
সকাল হয়ে গেলে আমি অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, আমার কিছুটা রেষ্ট হয়ে যাই, ভাইকে রিকুয়েষ্ট করেছিলেন এই সোফাতে কিছুটা গা এলিয়ে রেষ্ট করার জন্য কিন্তু তিনি কিছুতেই রাজি হননি। ভাইয়ের জন্য খুব খারাপ লাগছিল, অনেক মায়া হচ্ছিলো।
সকাল হলো। নিজের কোন খবর নাই, গ্রেফতারকৃত কয়জন ছাড়া পেয়েছে? বাকি আছে কয়জন, এই নিয়ে ব্যাস্ত হয়েগেল। যাই হোক সকাল ১০ টা নাগাদ সবাই ছাড়া পেয়ে গেল। বাকি রয়ে গেল আমাদের প্রিয় নেতা। কোন সিদ্ধান্ত হচ্ছেনা, ওসি স্যারও পোঁছাইনি। সারারাত সোফায় বসা মানুষটার নির্ঘুম কষ্ট দেখে ইনচার্জ অফিসারেও মায়া হয়েছিল। তিনি আমাদের সকালের নাস্তা করালেন থানার ক্যানটিনে। তিনি ভাইয়ের প্রতি অনেক টা সফট হলেন। ওসি স্যারের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন অবশেষে ভাইকে নতুন মুচলেকায় স্বাক্ষর ছাড়ায় মুক্তি দেন। আলহামদুলিল্লাহ।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে কি সিদ্ধান্ত হয় জানতে পারবেন। সবাই মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন ৩৫ এর ফয়সালা হয়।
আর যদি পজিটিভ রেজাল্ট না আসে এবং ৩৫ বাস্তবায়নের কান্ডারী, জনপ্রিয় ছাত্র নেতা, ত্যাগী, বিপ্লবী, অগাধ ধৈর্য্যের অধিকারী আমাদের সবার প্রিয় ভাই যদি রাজপথে আবারও ৩৫ এর জন্য দুর্বার আন্দলোনের ডাক দেন তখনও কি ঘরে বসে থাকতে পারবেন? নাকি গণ-জোয়ার গড়ে তুলতে ভুমিকা রাখবেন? এটাও প্রশ্ন রেখা গেলাম।
লেখক: আন্দোলনকারী, চাকরির বয়সসীমা ৩৫ বছর