এখন সন্ধ্যা হলে পড়ার আওয়াজ শোনা যায় না

লেখক: রাসেল ইব্রাহীম
লেখক: রাসেল ইব্রাহীম

আগে ঘরেঘরে সন্ধ্যা হলে পড়ার আওয়াজ শোনা যেত, এখন শোনা যায় না। কে কতক্ষণ পড়ে, কখন পড়ে, কী পড়ে - তা নিয়ে চলতো আলোচনা- গবেষণা, এখন চলে না। আগে পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের টেনশন থাকতো, এখন টেনশন ফ্রি, রাস্তায় আড্ডা দেয় এবং দোকানে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করে। বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা উচ্চ-শিক্ষা নিয়ে আলোচনা তো অনুপস্থিতই। এভাবেই চলছে শিক্ষার্থীদের এলোমেলো জীবন। 

আগে পড়াশোনা করে ভালো রেজাল্ট করতো, এখন না পড়েও ভালো রেজাল্ট করে। আগে জিপিএ-০৫ পেলে আনন্দ হতো, পাড়া-প্রতিবেশি খুশি হত। খুশিতে মিষ্টি বিতরণ হতো। এখন যে জিপিএ-৫ পায়, সে নিজেও লজ্জিত হয়। জিপিএ-৫ নিয়ে হাসাহাসি কিংবা ট্রল হয়। জিপিএ-৫ এর সুনাম এখন আর নেই। কারণ, ফলাফলের সাথে শিক্ষার্থীদের পরিশ্রমের মিল নেই। টাকা দিয়ে স্পেশাল সহযোগিতা পাওয়া যায় এবং অনায়সে A+ পাওয়া যায়। যে ভাগে যত বেশি পায়, সে তত ভালো রেজাল্ট করে।

আমি নিজের উপজেলায় শুনেছি যে, শিক্ষকরা এসএসসি কেন্দ্রে  এমসিকিউ বলে দিয়েছে, যা প্রমাণ সহ পত্রিকায় (চাঁদপুর কণ্ঠ) প্রকাশিত হয়েছে। এভাবে এগুলো কি শুধু একটা উপজেলায় চলে? আর সামনে পাসের হার হবে আকাশচুম্বী, কিন্তু আদর্শ শিক্ষার্থী পাওয়া যাবে না, পাওয়া যাবে নকলবাজ শিক্ষার্থী। যারা শিক্ষকদের প্রতি হবে আগ্রাসী এবং পোষণ করবে অশ্রদ্ধা।

অধিক সংখ্যক পাস দিয়ে অদূর কিংবা সুদূর ভবিষ্যতে আমরা পাব বেকার এবং অদক্ষ জাতি, যারা চাকরি পেতে আন্দোলন করবে এবং সার্টিফিকেট হাতে নিয়ে ঘুরবে কিংবা চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যা করবে। ২০০১ সালের দিকে পাসের হার বর্তমানের চেয়ে তুলনামূলক কম ছিলো, তবে সে সময়টা কিংবা এর আগের সময়টা ছিলো পড়াশোনার সোনালী যুগ। দিন যত আসছে, শিক্ষার্থীরা ততো বই-পুস্তক থেকে ছিটকে যাচ্ছে। মোবাইলের ভিতরে এখন শিক্ষার্থীদের দৈনন্দিন জীবন।

বর্তমানে ষষ্ঠ হতে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের যে পাঠ্যপুস্তক পড়ানো হয়, তা আসলেই কতটুকু যুগোপযোগী, ভেবে দেখা উচিত। আর ফিউচারে প্রচলিত এই শিক্ষানীতি পরিবর্তন করার প্রয়োজন হবে না, তার নিশ্চয়তা দেওয়া যায় কি না! বছর- বছর নতুন কেউ এসে নিজের মনের মতো নতুন শিক্ষাব্যবস্থার স্বপ্ন দেখাবে, আর বছর বছর পরিবর্তন হবে, এভাবে কতদিন চলবে? আমরা কি একটা সুনির্দিষ্ট এবং দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষাব্যবস্থা পেতে পারি কি?

সামনে নবম-দশম শ্রেণির বই কি এমন হবে? তাহলে এখনই পদক্ষেপ নিন। সায়েন্স, কমার্স এবং আর্টস থাকুক। তাছাড়া এই দেশের মানুষের মাঝে ধর্মান্ধতা প্রবল, তাই নবম থেকেই সায়েন্স থাকুক, সাহিত্য, বিজ্ঞান এবং ধর্ম- চর্চা সব দিক দিয়ে আমরা এগিয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ। গ্রামীণ শিক্ষার্থীরা ইন্টারমেডিয়েটে গেলে সরাসরি সায়েন্স পড়তে ভয় পাবে, চোখে জোনাকিপোকা দেখবে।ফলে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ তুলনামূলক কমবে। রাষ্ট্রের বুদ্ধিজীবী তাদের অবস্থান থেকে পরামর্শ দেবে, আর আমি পরামর্শ দিলাম একজন সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থার কিংবা সৃজনশীল বিহীন শিক্ষাব্যবস্থার  ছাত্র এবং শিক্ষক (অতিথি)  হিসেবে।

শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে দেখতে চাই, গুণগুণ পড়ার আওয়াজ শুনতে চাই। গভীর রাত পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে পড়াশোনার প্রতিযোগিতা দেখতে চাই। সেই প্রত্যাশায় এই লেখা। আমি বড় কোনো লেখক নই, আমি একজন শিক্ষার্থী কিংবা উদীয়মান লেখক। আমার এই অগোছালো কথায় ভুল পরিলক্ষিত হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার সবিনয় অনুরোধ।

লেখক: গীতিকার ও তরুণ লেখক


সর্বশেষ সংবাদ