ফিরতে চাই স্কুল জীবনে
এই তো সেইদিন ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম মাধ্যমিকের প্রতিটি ছাত্রের স্বপ্নের বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে।নবীন বরণ অনুষ্ঠানের আমার সামনে স্টেজে সেদিন বসেছিলেন স্কুলের শিক্ষকরা। এক স্যার বলছিলেন " এই নবীন হবে একদিন প্রাক্তন"। সত্যই আজ প্রাক্তন। চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই প্রথম দিনের কথা। মায়ের হাত ধরে যেদিন প্রথম পা রেখেছিলাম এই বিদ্যালয়ে। ৭ বছর পেরিয়ে গেল, স্কুল জীবনের সমাপ্তি হল ,কলেজ জীবন সমাপ্তি করে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে জীবনে। তারপর আসবে কর্ম জীবন কিন্তু ৭ বছরের স্কুল জীবনের স্মৃতি সবশ্রেষ্ঠ স্মৃতি হয়ে থাকবে আজীবন।
আসলেই জীবনটা অনেক ছোট। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় ভাবতাম কখন সপ্তম অষ্টম শ্রেণিতে উঠব। আর সপ্তম অষ্টম শ্রেণিতে উঠে ভাবতাম কবে স্কুল জীবন শেষ করব। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করে উচ্চ শিক্ষা গ্রহনের পথে। এই পর্যন্ত আসতে কত শিক্ষক উপরে ওঠার সিঁড়ি হয়েছেন আমার জীবনে তার হিসাব নেই। আমি প্রত্যেক শিক্ষকের কাছে চিরঋণী।
স্কুল জীবনের সব থেকে রাগী স্যারকে দেখলে এখন আর ভয় লাগেনা। আজ নিজে থেকেই বুঝতে পেরেছি স্যার আমাদের সঙ্গে কঠোর ব্যবহার করতেন শুধু আমাদের ভবিষ্যত সুন্দর করার জন্য। কিন্তু বুঝতে সময়টা দেরি হয়ে গেল। আজ আমি সবচেয়ে বেশি ফিরে পেতে চাই আমার স্কুলের বাউন্ডারি দেওয়া জীবনে।
রোজ স্কুল ইউনিফর্ম পরে স্কুলে যাওয়া আমার জন্য ছিল এক বিরক্তিকর বিষয়। তবে আজ মনে হয় কোন বাহানায় হলেও একবার স্কুল ইউনিফর্মটা যদি পরতে পারতাম! তবে সেই সুযোগ টা আর নেই। নানা অজুহাতে সেদিন ক্লাস ফাঁকি দিতাম আর আজ ইচ্ছে করলে ক্লাস করতে পারিনা। এটাই বাস্তবতা।
স্কুলের বই ভর্তি ওজন বেশি ব্যাগ ছিল আমার জন্য বেদনা দায়ক। আজ আর ব্যাগে তেমন কোনো ওজন নেই। কিন্তু আমি চাই স্কুলের ওজন বেশি ব্যাগটাই। ইংরেজি, গণিত বিষয় পরীক্ষার ভয়ে যেদিন স্কুলে যেতাম না, পরদিন স্কুলে যেয়ে শুনতাম পারতাম পরীক্ষা হয়নি পরীক্ষা আজ হবে। ঘটনাগুলো এখন আর আমার সঙ্গে ঘটে না। স্যারদের জানাই হলো না তাদের অগোচরে তাদের কিছু সুন্দর নাম দিয়েছিলাম আমি। টিফিন টাইমের আনন্দটা হারিয়ে ফেললাম, সঙ্গে হারিয়ে ফেললাম খুব কাছের বন্ধুদের। আজ অনেকদিন হলো তাদের সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই। তারা আছে স্মৃতির পাতায়। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর সবাই প্ল্যান করেছিলাম একই কলেজে ভর্তি হব। বাস্তবে সেটা আর হলো না। বাস্তবতায় আমরা যে যার যোগ্যতা অনুযায়ী হারিয়ে গেলাম নতুন নতুন ঠিকানায়।
নতুন বন্ধু-বান্ধবী হয়েছে অনেক, তবে ‘তুই যদি স্কুলে না যাইস তাহলে আমিও যাব না’ এরকম বন্ধু হয়নি আজও। হয়তো ভবিষ্যতে আর হবেও না। কলেজ জীবনে এসে অনেক বন্ধু-বান্ধবী তো পেয়েছিলাম, তবে নিজের ফুচকার চটপটি প্লেট শেষ করে বন্ধুদের ফুচকার চটপটির প্লেটে ভাগ বসানোর মতো বন্ধু হয়নি আজও।
সময় চলে আপন গতিতে। স্কুল লাইফ শেষ হয়েছে বছর তিন-চারেক তবে স্কুল জীবনের মায়া ছাড়তে পারেনি আজও। স্কুল যখন পড়তাম তখন চাইতাম স্কুল জীবনটা তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাক। স্কুলের সামনে দিয়ে যখন যাই তখন মনে পড়ে যায় স্মৃতিগুলো। সে সময় মনে চায় স্কুল জীবনে ফিরে যেতে। মিথ্যা মাথায় ব্যাথা, পেটে ব্যাথা, স্টিলের স্কেল দিয়ে প্যান্টের সেলাই ছিড়ে ফেলা ছিল ক্লাস ফাকিঁ দেওয়ার অন্যতম কাজ। অন্যদের মতো দেয়াল টপকিয়ে স্কুল পালাই কোন দিন। তবে সবচেয়ে বেশি উক্তিগুলো মনে পড়ে " এ বেডা পলাইছো পলাইছো টিফিন খাইঁছো কে", " মাইর আছে", "কিচ্ছু বোঝে না, কিচ্ছু বোঝে না", "সব ফেল করবি"।
আমাদের স্কুল নিয়ে আমি অনেক গর্বিত, আমাদের অনেক প্রাক্তন বড়ভাইরা দেশকে পরিচলনা করছেন এবং দেশমাতৃকাকে সেবা করছেন। মাধ্যমিক শিক্ষা জীবন এমন একটা সময় যা হারিয়ে যাওয়ার আগে উপলব্ধি করা যায় না। আমার জীবনে মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের প্রতিটি অধ্যায় স্মৃতিময় হয়ে আছে মনের ডায়েরীতে।
২০১৫ সালের স্কুলের রেডক্রিসেন্ট ইউনিট থেকে শুরু করে ২০১৬ স্কাউট দলে যোগাদান। তারপর ২০১৮ সালের স্টুডেন্ট কেবিনেট সদস্য তারপর দিবা শাখার সভাপতি নির্বাচিত হওয়া। পরবর্তীতে স্কুল জীবনের নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা আমাকে সুযোগ করে দিয়েছে জাতীয় পর্যায়ে সংগঠন এনসিটিএফ বাংলাদেশ ও জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) বাংলাদেশ ,বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম সহ বিভিন্ন সংগঠনে নিষ্ঠার সাথে কাজ করার। এজন্য আমার স্কুল কে বলব আমাকে তৈরী করার আতুর ঘর। যদি সত্যিই ফিরে যাওয়া যেত, তবে আমি ফিরে যেতাম আমার স্কুল জীবনে। মনকে বুঝিয়ে নিয়েছি স্কুল জীবনে আর ফিরা হবে না। তবে আমি তো চিরদিনই বাগেরহাট সরকারি উচ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন পরিবারের একজন হয়েই থাকব।