সেমাই-জর্দা খাওয়া নয়, সালামি উঠানোই ছিল ছোটবেলার আসল আনন্দ
ছোটবেলায় এমন একটা সময় ছিল যখন ঈদ মানে নতুন জামা, নতুন জুতা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সালামি আদায় করা। ঈদের দিন সকালে ঈদের নামাজ পড়ে কোনমতে বাড়িতে হালকা কিছু খেয়েই বের হয়ে যেতাম নানা-নানী, দাদা-দাদী আর চাচার বাসায়। সেখানে গেলে সেমাই জর্দা, পোলাও কোরমা খেতে দিতো। তখন সেগুলো কোথাও খেতাম, আবার কোথাও খেতাম না। তবে সেমাই-জর্দা, পোলাও কোরমা খাওয়াটা মূল লক্ষ্য ছিলনা। মূল লক্ষ্য ছিল ঈদ সালামি নেয়া।
এই দৃশ্য শুধু আমার একার বেলায়ই ঘটতো না, দলবেঁধে পাড়ার ছেলেমেয়েদের সবাইকে এমনটিই করতে দেখা যেত। তখন খুবই আনন্দ হতো। আনন্দময় ছিল তখনকার দিনগুলো। তারপর সালামির টাকা উঠিয়ে দোকানে গিয়ে বাঁশি কেনা, কোক ও প্যাটিস কিনে খাওয়া, আর দলবেঁধে পাড়ার ছেলেমেয়েরা এ বাড়ি ও বাড়ি ঘুরে ঘুরে সেমাই জর্দা খাওয়া ছিল একটি রেওয়াজ। এরপর ঈদ রাতের বড় আনন্দ ছিল ৭দিন ব্যাপী টিভিতে আনন্দমেলা ও ঈদের নাটক দেখা।
কিন্তু আজ সেই দিনগুলো খুবই মিস করি। সময়ের পরিক্রমায় বড় হয়ে গেছি, কারো চাচা- কারো মামা হয়েছি। এখন ছোট ভাগিনা-ভাগ্নি, ভাতিজা-ভাতিজিকে এখন সালামি দিতে হয়, দিতেও ভালো লাগে।
আরেকটি মজার ঘটনা শেয়ার করলে বলতে হয়, গত কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় আজ ঈদের দিনও ছিল বৃষ্টিস্নাত। ঝুম বৃষ্টি হয়েছে সকালে। কোরবানির গরু জবাই করতে এবং গোস্ত বানাতে ভালই বেগ পেতে হয়েছে মানুষের। বাড়ির নিচতলায় যাদের খালি রয়েছে, তারাই কেবল সুবিধা মতো কোরবানির মাংস বানানোর সুযোগ পেয়েছে। এছাড়া বাকিদের বৃষ্টিতে ভিজে কষ্টই হয়েছে বটে।
পুরনো দিনের স্মৃতি ছাপিয়ে এখন ডিজিটাল সময়ে চলে এসেছি আমরা। ঈদ সালামির লেনদেন এখন বিকাশ, নগদ, রকেটে। আগের মত আত্মীয় স্বজনদের বাসায় যাওয়া, খোঁজখবর নেয়া, ঈদ উপহার বিনিময় করা, সমবয়সীদেরকে ঈদ মোবারক লিখে হাতে কার্ড বানিয়ে বন্ধুদের দেওয়াই ছিল রীতি। বড়দের সালাম করা ও অল্পবিস্তর সালামি পাওয়ার রেওয়াজটাও কেন যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। এর বিপরীতে আমরা এখন মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাম, হোয়াটস অ্যাপে শুভেচ্ছা জানিয়েই শেষ করছি।
অন্যদিকে, ঈদের দিন ঘুরার জন্য দূরে কোথাও না গেলেও বিকেলের দিকে কাছাকাছি কোথাও ঘুরতে যাওয়ার অভ্যাস রয়েছে আমার। কারণ বাড়ির পাশেই রয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ঈদের বিকেলে জাতীয় স্মৃতিসৌধে না গেলেও প্রকৃতির অনন্য সৌন্দর্যখ্যাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে যাওয়া মিস হয় না। অতীতের মত আজ যদি বৃষ্টি না থাকে তাহলে বিকেলে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে।
লেখক: শিক্ষার্থী, তা'মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা, টঙ্গী ক্যাম্পাস