তবে কী এরদোয়ানেই ভরসা থাকবে তুর্কিদের?
তুরস্কের নির্বাচনে বাকি আর মাত্র ১ দিন। এরদোয়ানের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সবচেয়ে জটিল নির্বাচন এটি। শেষ মুহুর্তের নানা হিসাবনিকাশ চলছে, অনেকেই হিমশিম খাচ্ছেন অঙ্ক মিলাতে। এরই মধ্যে গতকাল আতাতুর্কপন্থী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী মোহারেরম ইনজের প্রার্থীতা প্রত্যাহার নতুনভাবে ভাবাচ্ছে। কামালিস্ট ব্লকে ভোটের যে ভাগাভাগি হওয়ার কথা ছিল সেটাতে কিছুটা হলেও ভাটা পড়বে। আদর্শিক কারণে এসব ভোট এরদোয়ানের হিসাবে জমা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তারপরও আমার ধারণা শেষমেশ এরদোয়ানকেই বেছে নিবে অধিকাংশ ভোটার। অনেকগুলো কারন এখানে রয়েছে:
১. তুর্কিরা শক্তিশালী নেতৃত্বে বিশ্বাসী। এতে ব্যক্তি এরদোয়ানের তুলনায় সবদিক থেকেই দুর্বল বিরোধী জোটের প্রার্থী। অতীতে কথা দিয়ে কথা না রাখার অনেক রেকর্ড আছে কেমাল কিলিচদারুলুর। একইসাথে আছে সিএইচপির অতীত রেকর্ডের কারণে দ্বীনদার ভোটারদের কেমাল সাহেবকে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। যদিও সাদেত পার্টি, আহমেদ দাওতুলু কিংবা আলী বাবাজানদের সিএইচপির সাথে জোট করার কারনে এ সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল। খুবই অল্পসংখ্যক কনজারভেটিভ ভোট তারা পেতে পারে। আর তুরস্কে এখনও কমবেশী ৬০% এর মতো কনজারভেটিভ ভোট আছে।
২. বিরোধী জোটে অস্বস্থি আছে। বাম-ডান, তুর্কি-কুর্দি জোটে মতের মিল-অমিল প্রশ্নে তৃণমুল দ্বিধাবিভক্তি আছে। সম্প্রতি সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হল, কুর্দি সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর নেতাদের মুক্তির বিষয়ে বিরোধী জোটের নেতাদের সরাসরি সমর্থন ঘোষণা এবং কুর্দিদের দল এইচডিপির সাথে অতিরিক্ত মাখামাখি। এতে মনমানসিকতায় সর্বদাই জাতীয়তাবাদী তুর্কিদের অধিকাংশ ভোট তারা পাবেনা।
৩. এরদোয়ানের ২১ বছরের উন্নয়ন প্রজেক্টগুলো, নিজস্ব গাড়ী, রণতরী, সামরিক প্রযুক্তিতে স্বাবলম্বীতা অর্জন এবং সর্বশেষ নিজেদের গ্যাস জাতীয় গ্রীডে যুক্ত করার মতো সফলতাগুলো এরদোয়ানকে সবদিক থেকেই এগিয়ে রাখবে।
৪. গতকাল সরকারি কর্মকর্তাদের সর্বনিন্ম বেতন প্রায় দিগুন করার ঘোষণা দিয়েছেন। গত পরশু বাড়ানো হয়েছে সরকারি কর্মচারীদের বেতন। এর পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্তদের সর্বনিন্ম বেতনও বাড়ানো হয়েছে। সেগুলো নির্বাচনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এর পাশাপাশি গৃহস্থলীতে একবছর বিনামূল্যে গ্যাসের মতো জনতুষ্টিমূলক প্রজেক্টগুলোও সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
৫. ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থ ১১ টি প্রদেশের যে পুনর্বাসন পরিকল্পনা তাতে এরদোয়ান না জিতলে সেগুলো বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ কিংবা ১ বছরের কাজ ৫ বছর লেগে যাবে। সরকারী উদ্যোগে কয়েক লক্ষ ফ্লাট/ বাড়ীর কাজ চলমান। এগুলো এরদোয়ান না আসলে থমকে যেতে পারে বলে ভয় আছে ভূমিকম্প ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাগুলোতে। সুতরাং তাদের সমর্থনও এরদোয়ানের পক্ষেই থাকবে।
৬. এরদোয়ানের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হল বিশ্ব রাজনীতিতে তার শক্ত অবস্থান। তুরস্কের আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে যে ইতিবাচক অর্জন রয়েছে তাতে এরদোয়ান না আসলে মারাত্মক নীতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করে তুর্কিরা। আর পুরো পশ্চিমা বিশ্বের এরদোয়ান বিরোধী অবস্থান দেশপ্রেমিক তুর্কিদের মনে এরদোয়ানের জন্য ভালোবাসা অটোমেটিক তৈরী করে দিয়েছে।
এরদোয়ানের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের জায়গা হল দ্রব্যমূল্যের মারাত্মক উর্ধ্বগতি। যা বিরোধীদের সবচেয়ে বড় অস্ত্র। এবার বিরোধী জোটের প্রার্থী অধিকাংশ প্রচারনা কিংবা কন্টেন্ট তৈরী করেছে রান্নাঘরে বসে। এটা এমন এক বিষয় যা সবাইকে প্রভাবিত করে।
উল্লেখ্য, যদি ফ্লাইং ভোটগুলো এরদোয়ানের দিকে যায় তবে জয় পেতে কোনও বেগ পেতে হবে না। তবে সাধারণ জনগণ যদি রান্নাঘর এবং নিত্যদিনের জীবনমান চিন্তা করে তবে নির্বাচনের সমীকরণ কঠিন হয়ে যাবে। তবুও আমার মনে হয় তুর্কিরা শেষমেষ এরদোয়ানেই আস্থা রাখবে।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, তোকাত গাজী উসমান পাশা ইউনিভার্সিটি, তুরস্ক