প্রশাসনের উদাসীনতা, নিম্নমানের খাবারে রাবি শিক্ষার্থীদের সেহরি-ইফতার
রমজানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সবচাইতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে খাবারকে কেন্দ্র করে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির পাশাপাশি হলের ডাইনিংগুলোতে সরবারহ করা হচ্ছে নিম্নমানের খাবার। জীবনধারণের জন্য যেটুকু পরিমাণ খাবার দরকার, সেটুকুই গ্রহণ করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ফলে একদিকে যেমন দেখা দিচ্ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি, অপরদিকে তৈরি হচ্ছে মানসিকভাবে ভঙ্গুর অবস্থা। বিগত কয়েকদিনে পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ‘হাওয়ার উপর চলে গাড়ি’ অবস্থা বিরাজ করছে। এতে না পরিলক্ষিত হচ্ছে প্রশাসনিক তদারকি, না নিশ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্যের দিকটি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ২৮ টাকা মূল্যে সেহরীতে যে খাবার খাওয়ানো হচ্ছে সেখানে আলু ভাজির সাথে শুকনো এক পীস মুরগীর মাংস দেওয়া হচ্ছে। যেটা পরিমাণে ১০ গ্রাম কিংবা তারও কম! অথচ বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য আমিষের প্রয়োজন ন্যূনতম ৩৩ গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ৬৬ গ্রাম।
খাবারের মূল্য অনুযায়ী যা সরবারহ করা হচ্ছে তাতে শিক্ষার্থীদের মনে দেখা দিয়েছে তীব্র অসন্তোষ। মাছের পিস যতটুকু ছোট করা যায়, ততোটুকু ছোট করা হচ্ছে। সাথে দেওয়া হচ্ছে হলুদাভ পানি সদৃশ ডাল। দেশের শীর্ষস্থানীয় সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের এরকম চিত্রে ফুটে এসেছে দৈন্যদশা এবং প্রকাশ পাচ্ছে প্রশাসনিক তদারকির অভাব। উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হলে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য খাবারে পুষ্টিমান নিশ্চিত করতে হবে। কেননা পেটে খিদে থাকলে মস্তিষ্ক ব্যবহারের সর্বোচ্চটা আশা করা নেহাত অতিরিক্ত প্রত্যাশা করারই শামিল।
রমজানে সংযমের মাধ্যমে যাবতীয় ইন্দ্রিয়তৃপ্তি থেকে বিরত থেকে আধ্যাত্মিকতা অর্জন ও নৈতিক মূল্যবোধের স্ফূরণ ঘটাতে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত রোজা রাখছে। তবে সেহরীতে নামমাত্র খাবারে তাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে হতাশা এবং বিরক্তি। প্রতিনিয়ত ক্লাস, পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন চলছে পূর্ণগতিতে। এমতাবস্থায় যদি সেহরীতে প্রাপ্ত খাবারের পুষ্টিমান নিশ্চিত না করা হয় তবে অনেকেই অসুস্থতায় ভুগবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রশাসনিক তদারকি ও শিক্ষার্থীবান্ধব পদক্ষেপই পারে সমস্যার নিষ্পত্তি ঘটাতে।
দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষালাভের জন্য ভর্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এ পর্যায়ে এসেছে। স্বাভাবিকভাবেই নাড়ির টান তাদের আপলুত করে। বিকেলের শুকনো ইফতার কিংবা সেহরীর নিম্নমানের খাবার মানসিকভাবে তাদের মধ্যে তৈরি করছে নিজেদের দূর্বল ও অসহায়ত্ব অবস্থা। এর দায় প্রশাসন এড়াতে পারেনা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যদি শিক্ষার্থীদের প্রতি শুধু কাগজে কলমে অভিভাবকত্বের পরিচয় বহন করে থাকে এবং কর্তব্য পালনে উদাসীনতা, গাফিলতি প্রদর্শন করে তবে তা হবে নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিবেকবান লোকদের পক্ষ থেকে বিবেকহীন, নৈতিকতা-বর্জিত কাজ। যার ফল ভোগ করতে হবে পুরো দেশকে। কেননা এটি অনেকটা চুলায় বসানো ভাতের মতো। যার একটি চাল টিপে দেখলে বাকি চালগুলোর অবস্থা আঁচ করা যায় যে তা সিদ্ধ হয়েছে কিনা।
একইভাবে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চিত্র প্রকাশ করে দেশের মেধাবী, ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারক এবং জাতির সর্বোচ্চ মস্তিষ্কের ব্যবহারকারী লোকদের অবস্থা! তারা কতটুকু দায়বদ্ধতার সাথে কাজ করছে? কতটুকু কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে পারছে? এক্ষেত্রে কর্মচারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের সাথে প্রভোস্ট, হল টিউটরদের মাসিক মিটিং এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগের বিকল্প নেই।
মনে রাখতে হবে, শিক্ষাজীবনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের সামনে নৈতিকতার নজির সৃষ্টির পাশপাশি তাদের পেটের খিদে দূর করতে না পারলে শিক্ষার সামগ্রিক উদ্দেশ্য বিঘ্নিত হবে। আর এর ফল ভোগ করতে হবে জাতিকে। কেননা অবহেলাপূর্ণ বাগান থেকে সুন্দর ও স্নিগ্ধ ফুলের প্রস্ফুটন কমই হয়ে থাকে।
লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়