বেতন ছাড়াই বছর পার সেসিপের ট্রেড ইন্সট্রাক্টরদের

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি  © ফাইল ছবি

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপাক্ষের মাধ্যমে বেসরকারি মাদ্রাসায় সুপারিশপ্রাপ্ত ট্রেড ইন্সট্রাক্টরা বেতন ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করছেন। এমপিও নীতিমালার দোহাই দিয়ে সুপারিশপ্রাপ্তদের এমপিও ফাইল রিজেক্ট করছে মাদ্রাসা অধিদপ্তর। যদিও পদগুলো অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগীদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৩০ মার্চ তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। একই বছরের ৫ আগস্ট সেসিপের ট্রেড ইন্সট্রাক্টর নিয়োগের বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পদ সংখ্যা ছিল ৬৮৮টি। ওই বছরের ২৮ নভেম্বর ১৯৩টি পদের দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।  তিনটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিভিন্ন মাদ্রাসায় ১০২ জন ট্রেড ইন্সট্রাক্টর নিয়োগের সুপারিশ করা হয়।

সুপারিশপ্রাপ্তরা সকল নিয়ম মেনে পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম জমা দেন। তাদের ভেরিফিকেশন চলমান রেখেই যোগদানের নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষকরা চূড়ান্ত সুপারিশপত্র পাওয়ার পর যোগদান করেন। এরপর সংশ্লিষ্ট দপ্তরের চাহিদা অনুযায়ী কাগজপত্র জমা দিয়ে এমপিওভুক্তির আবেদন করেন। তবে এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে এই পদের প্রাপ্যতা নেই উল্লেখ করে এই শিক্ষকদের এমপিও ফাইল রিজেক্ট করা হয়। ফলে মাদ্রাসার ট্রেড ইন্সট্রাকটর পদে সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকরা চরম মানবেতর জীবনযাপান করছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ বলছে, ট্রেড ইন্সট্রাক্টর পদে সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষকদের উক্ত পদের অনুমোদন বা প্রাপ্যতা নেই। এজন্য তাদের এমপিওভুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। যদিও সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) আওতায় স্কুলে সুপারিশপ্রাপ্তরা ইতোমধ্যে এমপিওভুক্ত হয়েছেন।

আরও পড়ুন: চলন্ত বাসে যাত্রীদের ৩ ঘণ্টা জিম্মি করে ডাকাতি ও ধর্ষণ

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগেরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাদ্রাসা) মো. হাবিবুর রহমান দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, মাদ্রাসার ট্রেড ইন্সট্রাক্টদের পদটি নিয়ে কিছু জটিলতা রয়েছে। এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী এই পদগুলোর প্রাপ্যতা নেই। সেজন্য তারা এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না। আমরা বিষয়টি আমাদের সচিব মহোদয়কে জানিয়েছি। এ বিষয়ে আমরা সভা করে সিদ্ধান্ত নেব।

এদিকে এমপিওভুক্তির দাবিতে গত চার মাস ধরে এনটিআরসিএ, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষকরা। শিক্ষামন্ত্রী, মাদ্রাসা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর ‘সেসিপ মাদ্রাসা ট্টেড-ইন্সট্রাক্টর ফোরাম’র পক্ষ থেকে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। তবে এমপিও নীতিমালার দোহাই দিয়ে কোনো পক্ষই তাদের সমস্যার সমাধান করছেন না। যোগদান করার পর দীর্ঘ সময় বেতন না পাওয়ায় শিক্ষকরা চরম মানবেতর জীবন করছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে সেসিপ মাদ্রাসা ট্রেড-ইন্সট্রাক্টর ঐক্য পরিষদের মুখপাত্র মো. জাহাঙ্গীর আলম, আব্দুর রহিম কায়েস, আহসান আজিজ সুমন, মিজানুর রহমানসহ আরো অনেকেই জানান, স্কুলে  ট্রেড ইন্সট্রাক্টর পদে সুপারিশপ্রাপ্ত সকলের এমপিওভুক্ত হয়েছে। কেবলমাত্র মাদ্রাসায় সুপারিশপ্রাপ্ত ১০২ জন শিক্ষক সুপারিশ পাওয়ার চার মাসেও এমপিওভুক্ত হতে পারেননি। আমরা বেতন ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করে আসছি। পরিবার নিয়ে আমাদের চরম মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের বকেয়া ভাতা সহ এমপিওভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।

আরও পড়ুন: এমপিওভুক্তির দাবিতে মাদ্রাসা অধিদপ্তরের সামনে মাদ্রাসার ইংরেজি শিক্ষকরা

তারা আরও বলেন, এমপিও নীতিমালায় প্রাপ্যতা নেই বলে যে কথাটি বলা হচ্ছে; এই সমস্যার অনেক আগেই হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এই পদগুলো অনেক আগেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মাদ্রাসা ছাড়া অন্যত্র যারা ট্রেড ইন্সট্রাক্টর পদে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তারা এমপিওভুক্ত হয়েছেন। অথচ আমাদের এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে না। এক দেশে দুই নীতি প্রয়োগ করা হয়েছে। এর ফলে আমরা ১০২ জন শিক্ষক চরম ভোগান্তিতে পড়েছি।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে যারা ট্রেড ইন্সট্রাক্টর পদে সুপারিশ পেয়ছিলেন তাদের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছিল পরবর্তীতে বিষয়টি সমাধানে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞান জারি করা হয়। ২০১৯ সালের ১১ মার্চ অর্থ মন্ত্রণালয় জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেছিলেন উপসচিব তনিমা তাসমিন। সেখানে বলা হয়,  ‘‘প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত ৯২টি দাখিল মাদ্রাসার প্রতিটিতে ০২টি ট্রেড ইন্সট্রাক্টর ও ০২টি ল্যাব এ্যাসিসট্যান্ট/কম্পিউটার ল্যাব এ্যাসিসটেন্ট পদসহ ০৪টি পদ অন্তর্ভুক্ত করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮' সংশোধনে নির্দেশক্রমে অর্থ বিভাগের সম্মতি জ্ঞাপন করা হলো।’’

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই প্রজ্ঞাপন বিষয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ২০১৯ সালে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল সেরকম আরেকটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হলে মাদ্রাসায় সুপারিশপ্রাপ্ত ট্রেড ইন্সট্রাক্টদের এমপিওভুক্তিতে সমস্যা হবে না। বিষয়টি নিয়ে আমাদের সচিব মহোদয় ভালো বলতে পারবেন।


সর্বশেষ সংবাদ