১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫:৫৬

মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় ঝুলে আছে ১৭তম নিবন্ধনের কার্যক্রম

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ  © ফাইল ফটো

১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ নিয়ে সময়ক্ষেপনের অভিযোগ উঠেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে। এক মাস আগে নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অনুমতি চাওয়া হলেও এখনো তাতে অনুমোদন দেয়নি মন্ত্রণালয়। এতে বিপাকে পড়েছেন প্রিলিমিনারি পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকা প্রায় ১২ লাখ প্রার্থী।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ২৩ জানুয়ারি ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ওই বছরের ১৫ মে সকালে স্কুল পর্যায়ে এবং বিকেলে কলেজ পর্যায়ের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার তারিখ দেওয়া হয়। তবে এর আগেই দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলে থেমে যায় নিবন্ধন কার্যক্রম।

এনটিআরসিএ বলছে, ১৭তম নিবন্ধনের নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে অনুমতি চেয়ে চিঠি পাঠানো হলেও এখনো অনুমতি দেয়নি মন্ত্রণালয়। অনুমোদন পাওয়ার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হবে।

এ প্রসঙ্গে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খান বলেন, ১৭তম নিবন্ধনের নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি পেলে প্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদন গ্রহণ করা হবে। এরপর দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রিলি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হবে। চলতি অর্থ বছরেই এই নিবন্ধনের প্রিলি পরীক্ষা নেয়ার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) ফৌজিয়া জাফরীন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য এনটিআরসিএর চিঠি পেয়েছি। এটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শিগগিরই অনুমোদন দিয়ে দেয়া হবে।

এদিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দুই বছর অতিক্রম হলেও এখনো প্রিলিমিনারি পরীক্ষা আয়োজন করতে না পারায় হতাশা ব্যক্ত করেছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। বয়স শেষ হয়ে যাওয়াসহ নানা সমস্যার কারণে অপেক্ষায় থাকা প্রার্থীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে পরীক্ষা আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, তৎকালীন এনটিআরসিএ’র কর্মকর্তাদের অদূরদর্শিতার কারণেই এখনো প্রিলি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।

এ প্রসঙ্গে ১৭তম নিবন্ধনের আবেদন করা প্রার্থী রবিউল সানি জানান, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও পিএসসি, সরকারি ব্যাংক, খাদ্য অধিদপ্তর সহ বিভিন্ন সরকারি চাকরির বড় বড় সার্কুলার গুলোর পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অথচ এনটিআরসিএ করোনার অজুহাত দেখিয়ে ১৭তম নিবন্ধন পরীক্ষার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেনি। এমতাবস্থায় অনেকেরই বয়স ৩৫ এর কাছাকাছি চলে গেছে অথবা পঁয়ত্রিশোর্ধ হয়ে গেছে, সেক্ষেত্রে শিক্ষক হওয়ার যে মহান পেশায় নিয়োজিত হওয়ার মনোবাসনা, সারা জীবন হয়তো অধরাই থেকে যাবে। তাই মানবিক দিক বিবেচনা করে দ্রুত পরীক্ষা গ্রহণ করার জন্য এনটিআরসিএ কে বিনীত অনুরোধ করছি।

মো. জসিম উদ্দিন নামে আরেক প্রার্থী বলেন, বাংলাদেশের সকল চাকরিতে যেদিন বিজ্ঞাপন দেয়া হয় সেই দিন থেকেই বয়স ধরা হয়। কিন্তু নিবন্ধনের আবেদনের কোন বয়স নেই। গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সময় বয়স ৩৫ বছর। ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের সার্কুলার হয়েছিল ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি। এখন সময় অতিবাহিত হল ২ বছরের অধিক। তবে পরীক্ষা যদি আরও বিলম্ব হয় অনেকে ভাল করেও গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারবেনা। নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ দুই বছর পরীক্ষা নিতে পারেনি কিন্তু তাদের আইনে প্রতিবছর একটি পরীক্ষায় আয়োজনের কথা আছে। তাই আমরা চাই দ্রুত পরীক্ষা নিয়ে আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে যে অন্তরায় আছে সেটি দূর করুক।

প্রসঙ্গত, বেসরকারি স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এন্ট্রি লেভেলের শিক্ষক নিয়োগে সুপারিশ করে থাকে এনটিআরসিএ। ২০১৫ সালের আগ পর্যন্ত তারা কেবল সনদ প্রদান করতো। নিয়োগ হত কমিটির মাধ্যমে। তবে কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠায় ২০১৫ সাল থেকে নিবন্ধন সনদ প্রদানের পাশাপাশি মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে আসছে এনটিআরসিএ।