এনটিআরসিএর এক বিজ্ঞপ্তি-নিয়োগেই যায় ৩ বছর

এনটিআরসিএ
এনটিআরসিএ  © ফাইল ফটো

বেসরকারি স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০০৫ সালে গঠিত হয় বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। প্রতিষ্ঠার দশ বছর পর ২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী সনদধারী শিক্ষকদের নিয়োগ দিয়ে আসছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানটি। তবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার ধীর গতির কারণে নানা সমালোচনার মুখে পরতে হচ্ছে তাদের। একই সাথে নিবন্ধনধারী শিক্ষকরা পড়েছেন বিপাকে।

জানা গেছে, ২০১৫ সালে এনটিআরসিএ শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রথম চক্রের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। প্রথম ধাপের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রায় তিন বছর পর দ্বিতীয় চক্রে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। দ্বিতীয় চক্রে দুই ধাপে প্রায় ৬৫ হাজার শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। তবে প্রায় দুই বছর অতিক্রম হলেও এখনো তৃতীয় চক্রের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে পারেনি এনটিআরসিএ। যদিও বেসরকারি পর্যায়ের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫৮ হাজার শিক্ষকের শূন্যপদের চাহিদা রয়েছে এনটিআরসিএর কাছে।

তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তৃতীয় চক্রের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরিকল্পনা ছিল এনটিআরসিএর। সে লক্ষ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কাজ গুছিয়েও রাখা হয়। তবে ১৩তম নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা একক নিয়োগের দাবিতে আদালতে রিট করায় তা আর সামনে এগোয়নি। এর মধ্যেই দেশে করোনার প্রকোপ শুরু হয়ে গেলে থমকে যায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কাজ।

এনটিআরসিএর একটি সূত্র জানায়, ১৩তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা একক নিয়োগের দাবিতে হাইকোর্টে রিট করেন। আদালতে রিটের শুনানি শেষে হাইকোর্ট রিটকারীদের পক্ষে রায় দেন। সেটি চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করে এনটিআরসিএ। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে সুপ্রিমকোর্ট রায়ের উপর কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। এটি ১৩তম দের পক্ষে গেছে বলে দাবি তাদের। তাই কীভাবে নিয়োগ দেয়া হবে সেটি জানতে চেয়ে আদালতে আর্জি দেবে এনটিআরসিএ। ফলে সহসা তৃতীয় চক্রের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা সম্ভব হবে না বলে জানান তারা।

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ধীরগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান মো. আকরাম হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, আমরা চাই দ্রুত সময়ের মধ্যে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে। তবে যোগ্য কোনো প্রার্থী যেন নিয়োগের হাত থেকে বঞ্চিত না হন সেজন্য আমরা আবারও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। এর ফলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কাজ থেমে আছে। এছাড়া দেশে করোনার প্রকোপও গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কবে নাগাদ তৃতীয় চক্রের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আদালত যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে সেখানে ১৩তম দের পক্ষে রায় দেয়া হয়েছে। আমরা যদি শুধু তাদের নিয়োগ দেই তাহলে ১-১৫তম নিবন্ধধারী শিক্ষকদের অনেকেই বঞ্চিত হবেন। সেটি করা ঠিক হবে না। তাই আমরা আদালতে একটি আর্জি দিবো। আদালত আমাদের সুস্পষ্ট একটি গাইডলাইন দিলে তবেই গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে।

এদিকে দ্বিতীয় চক্রের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রায় দুই বছর হতে চললেও এখনো তৃতীয় চক্রের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন ১-১৫ তম নিবন্ধিত শিক্ষকরা। তারা বলছেন, ২০১৮ সালে দ্বিতীয় চক্রের নিয়োগ শেষ হয়। এরপর প্রায় দুই বছর হয়ে গেল; অথচ এখনো তৃতীয় চক্রের গণবিজ্ঞপ্তিই প্রকাশ করতে পারেনি এনটিআরসিএ। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে কত সময় লাগবে কে জানে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশসহ পুরো প্রক্রিয়া শেষ করার দাবি জানান তারা।

এ বিষয়ে ১-১৫তম নিবন্ধনধারী নিয়োগ প্রত্যাশী মো. শান্ত বলেন, সারাদেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিয়োগের কার্যক্রম এনটিআরসিএর উপর ন্যস্ত। ইতোপূর্বে প্রতিষ্ঠানটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রার্থী নিয়োগ দিয়েছে। যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় শিক্ষক নিয়োগ চক্রের ৩য় গণবিজ্ঞপ্তির সকল কার্যক্রম সম্পন্ন থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত তা প্রকাশ করা হয়নি। যদিও এই গণবিজ্ঞপ্তি গত জানুয়ারি মাসে প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল। এরই মধ্যে অনেকের বয়স ৩৫ পার হয়ে গেছে, তাদের বিষয়েও সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য দিচ্ছে না এনটিআরসিএ। ফলে অনেককেই হতাশার মধ্যে দিন পার করছেন।

তিনি আরও বলেন, আমরা নিবন্ধনধারীরা বিভিন্ন সময়ে ছয় বার গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবি জানিয়ে এনটিআরসিএতে স্মারকলিপি দিয়েছি। আমাদের কষ্ট, দুঃখ ও যন্ত্রণার কথা বলেছি, বারবার অনুরোধ করেছি যত দ্রুত সম্ভব গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার জন্য। কিন্তু তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে কালক্ষেপণ করেছে যার মধ্যে একটি হলো- ১৩তম রায়ের পর্যবেক্ষণ কপি না পাওয়া। কিন্তু এখন সেটাও তাদের হাতে। এতদিন রায়ের কপির কথা বলে কালক্ষেপণ করেছে। এখন রায়ের কপি পেয়েও কেন তারা গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছে না?

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুধু তৃতীয় চক্রের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশেই এনটিআরসিএ কালক্ষেপণ করেনি; প্রায় প্রতিটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ এবং নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এনটিআরসিএর প্রায় ৩ বছর লেগে যায়। এর আগে প্রথম চক্রের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর দ্বিতীয় চক্রের গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশে এনটিআরসিএর সময় লেগেছিল ৩ বছর।

গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার এই দীর্ঘসূত্রতা দূর করতে এনটিআরসিএর সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও নিয়োগ প্রক্রিয়ার এমন ধীর গতির জন্য অনেক মেধাবী শিক্ষক হওয়ার আগ্রহ হারাচ্ছেন। অনেকেই সরকারি কর্ম কমিশনের আদলে শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি স্বাধীন কমিশন গঠনেরও প্রস্তাব দিয়েছেন।

শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের এমন প্রস্তাবকে সাধুবাদ জানিয়ে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান বলেন, আমরাও এনটিআরসিএকে পিএসসির আদলে গড়ে তুলতে চাই। এটি সম্ভব হলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যে জটিলতা তা দূর করা সম্ভব হবে।

এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, শিগগিরই বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের জন্য পিএসসির আদলে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা হবে। এই কমিশন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে শুরু করে সুপারিশ পর্যন্ত যাবতীয় কাজ করবে। কমিশন সব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকসহ সকল পর্যায়ের শিক্ষক নিয়োগ দেবে।


সর্বশেষ সংবাদ