১-১২তম নিবন্ধনধারীদের নিয়োগের সম্ভাবনা কতটুকু?
১-১২তম শিক্ষক নিবন্ধনধারীদের নিয়োগ সুপারিশের ব্যবস্থা করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)। বয়স এবং সনদের মেয়াদ না থাকা প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশে চিঠি পাঠানোয় ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে তাদের নিয়োগের সম্ভাবনা নিয়েও।
বিষয়টি নিয়ে দ্য ডেইলি ক্যাম্পাস কথা বলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তার সাথে। তারা বলছেন, এনটিআরসিএর পাঠানো চিঠি তারা পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তবে এনটিআরসিএর চিঠিতে বয়স এবং সনদের মেয়াদ না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। ফলে ১-১২তম নিবন্ধনধারীদের নিয়োগ সুপারিশের সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছেন কর্মকর্তারা।
নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের সর্বোচ্চ বয়স ৩৫ বছর। ১-১২তম নিবন্ধনধারীদের সবার বয়সই ৩৫ বছরের বেশি। এছাড়া তাদের কারো সনদের মেয়াদ নেই। এ অবস্থায় তাদের নিয়োগ সুপারিশের সম্ভাবনাও নেই। এনটিআরসিএ তাদের চিঠিতে বিষয়গুলো উল্লেখ করে দিয়েছে।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এনটিআরসিএকে চাপ সৃষ্টি করে এ ধরনের চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। আমরা বিষয়গুলো জেনেছি। আমাদের আইনের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবুও বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
গত ১১ নভেম্বর ১-১২তম নিবন্ধনধারীদের নিয়োগ সুপারিশের ব্যবস্থা করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় এনটিআরসিএ। সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিকীর স্বাক্ষরে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, 'জুলাই গণঅভ্যুত্থাণ পরবর্তী সময়ে ১-১২তম প্রার্থীরা নিয়োগ সুপারিশের দাবিতে শাহবাগ চত্ত্বর, প্রেস ক্লাব এবং বেসরকারি শিক্ষক প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন সময় আন্দোলন করে অফিসের কাজে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। ইতিপূর্বে তারা এনটিআরসিএ-এর কার্যালরের গেট ভেঙ্গে প্রবেশ করে দাপ্তরিক কাজে বিঘ্ন ঘটানোর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে ১-১২তম নিবন্ধনধারী প্রার্থীদের সাথে আলোচনার জন্য শিক্ষক নেতা সেলিম ভূঁইয়া এবং রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদ আলম এনটিআরসিএ-এর চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত)-এর সাথে যোগাযোগ করে তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য আলোচনার অনুরোধ করেন।
এতে বলা হয়, অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ নভেম্বর দুপুরে শিক্ষক নেতা সেলিম ভূঁইয়া এবং রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারের প্রতিনিধিসহ ১-১২ তম নিবন্ধনধারী প্রার্থীদের প্রতিনিধিদের সাথে এ কার্যালয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় ১-১২তম নিবন্ধনধারী প্রার্থীগণ দাবি করে যে, তারা নিয়োগ বঞ্চিত ও বৈষম্যের শিকার।
তারা বলেন, ১ থেকে তৃতীয় নিয়োগ সুপারিশ বিজ্ঞপ্তিগুলোয় ইনডেক্সধারী প্রার্থীগণের আবেদন করার সুযোগ থাকায় ১-১২তম নিবন্ধনধারী প্রার্থীদের আবেদনের সুযোগ সংকুচিত হয়েছে। এছাড়া ১-১২তম প্রার্থীরা অনেক আগে নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। ওই সময়ে তাদের নিবন্ধন পরীক্ষার পরীক্ষা পদ্ধতি ও সিলেবাসের ভিন্নতার কারণে পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরও অপেক্ষাকৃত কম ছিল।
নিবন্ধিত প্রত্যয়নপত্রধারী হওয়ার পরও তারা দীর্ঘদিন নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে তারা ১-১২তম ব্যাচের ফলাফল যেদিন প্রকাশ হয়েছে, সে দিন থেকে ৩৫ বছর ধরে বয়স নির্ধারণ করে একটি বিশেষ নিয়োগ সুপারিশ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবী জানায়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের জনবলকাঠামো ও এমপিও সুপারিশের জন্য প্রার্থীগণের বয়স ৩৫ বছর নির্ধারণ করা রয়েছে। বেসরকারি শিক্ষক পরীক্ষা এবং নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন বিধিমালা, ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৫) অনুযায়ী শিক্ষক নিবন্ধন সনদের মেয়াদ ০৩ (তিন) বছর।
এনটিআরসিএর সাথে চলমান মামলার রায়ের আলোকে ১-১২তম নিবন্ধনধারী প্রার্থীগণের দাবী অনুযায়ী বিশেষ বিজ্ঞাপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে আবেদনের সুযোগ প্রদানে এনটিআরসিএ-এর এখতিয়ার নেই। পরিস্থিতি বিবেচনায় ১-১২তম নিবন্ধনধারী প্রার্থীরা যে তারিখে প্রত্যয়নপত্র অর্জন করেছে, সে বছর বয়স হিসেব করে যদি কোন প্রশাসনিক অনুমোদন পাওয়া যায়। তবে ১-১২তম নিবন্ধনধারীদের সুযোগ সৃষ্টি হবে। বিষয়টি সদয় অবগতি ও পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হলো।'