২৯ জুন ২০২৫, ১৭:১৫

এনটিআরসিএর এক পরিচালকের বোর্ডে কপাল পুড়েছে ১৮তম নিবন্ধনপ্রত্যাশীদের!

এনটিআরসিএ  © ফাইল ছবি

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) একজন পরিচালকের বোর্ডে ১৮তম নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৪৭ জন প্রার্থীকে ফেল করানো হয়েছে। যদিও একইদিন অন্য বোর্ডে তুলনামূলক কম প্রার্থীকে অনুত্তীর্ণ করানো হয়েছিল বলে জানা গেছে।

এনটিআরসিএর একটি সূত্র জানিয়েছে, ১৮তম নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষা চলাকালীন সংস্থাটির পরিচালক (শিক্ষাতত্ত্ব ও শিক্ষামান) কাজী কামরুল আহছানের দুই বোর্ডে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৬০ জনের মধ্যে ৪৭ জন প্রার্থীকে ফেল করানো হয়। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ মফিজুর রহমানকে অবহিত করা হলেও তিনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।

জানতে চাইলে এনটিআরসিএর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘কাজী কামরুল আহছানের বোর্ডে একদিনে ৪৭ জনকে ফেল করানোর বিষয়টি আমরা চেয়ারম্যানকে অবহিত করেছিলাম। আমাদের উপপরিচালক (পরীক্ষা মূল্যায়ন ও প্রত্যয়ন) প্রফেসর দীনা পারভীনের বোর্ডে ৬০ জনের মধ্যে তিনজন ফেল করেছিল। একই দিন কামরুল আহছানের বোর্ডে ৪৭ জন ফেল করে। বিষয়টি আমার কাছে অস্বাভাবিক লেগেছিল।’

শুধু এনটিআরসিএর পরিচালক কাজী কামরুল আহছানই নন; বাহির থেকে পরীক্ষা নিতে আসা একটি মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপকের বিরুদ্ধে অসংখ্য প্রার্থী ফেল করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগীরা। তারা বলছেন, আরবি প্রভাষক পদে দুইদিনের ভাইভায় ১২০ জনের মধ্যে ১০৬ জনকেই ফেল করিয়েছেন ওই সহকারী অধ্যাপক।

মো. মিলন নামে এক ১৮তম নিবন্ধনপ্রত্যাশী দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘গাউছিয়া ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার সহকারী অধ্যাপক (আরবি) মাওলানা আক্তার ফারুক গত ৬ ও ৮ মে ১৮তম নিবন্ধনের আরবি প্রভাষক পদের ভাইভা নিয়েছেন। তার বোর্ডে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১২০ জনের মধ্যে মাত্র ১৪ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। বাকিরা সবাই ফেল। নিশ্চিতভাবে এই বোর্ডে ইচ্ছাকৃতভাবে প্রার্থীদের ফেল করানো হয়েছে।’

৬০ জনের মধ্যে ৪৭ জনকে ফেল করানোর অভিযোগের বিষয়ে জানতে এনটিআরসিএর পরিচালক  কাজী কামরুল আহছানের ব্যবহৃত মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। মাওলানা আক্তার ফারুকের সাথে যোগাযোগ করতে তার প্রতিষ্ঠানে কল করে নাম্বার নেওয়া হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যালয় ঘেরাও করেছে ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের মৌখিক পরীক্ষায় অকৃতকার্যরা। চূড়ান্ত ফল বাতিল করে পুনরায় যাচাই-বাছাই এবং মৌখিক পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের সনদ প্রদানের দাবিতে অবস্থান নিয়েছেন তারা। তাদের সরিয়ে দিতে পুলিশ লাঠিপেটা করে। রবিবার (২৯ জুন) দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ফলাফলে অসংগতি ও বৈষম্য করা হয়েছে। ভাইভা পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভালো ফল করার পরও অনেকে অনুত্তীর্ণ হয়েছেন।একাধিক বোর্ডে ৩০ জনের মধ্যে মাত্র ১ থেকে ৩ জন পাস করেছেন, অন্যদিকে কিছু বোর্ডে ২৯ জনও পাস করেছেন।

বরিশাল থেকে আসা ফাতিমা বেগম বলেন, ‘ভাইভায় সঠিক উত্তর দেওয়ার পরও আমাকে ফেল দেখানো হয়েছে। এটা ন্যায়সংগত নয়।’ 

একই অভিযোগ করেন চাঁদপুরের প্রিয়াঙ্কা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাহমুদা বেগম। তারা বলেন, ফলাফল পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে প্রকৃত মেধাবীদের স্বীকৃতি দিতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত ৪ জুন বিকেলে ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। এতে ৬০ হাজার ৫২১ জন প্রার্থীকে উত্তীর্ণ ঘোষণা করা হয়। পরে ২৩ জুন সংশোধিত ফলাফলে আরও ১১৩ জনকে উত্তীর্ণ দেখানো হয়। 

এনটিআরসিএ জানিয়েছে, ২০২৫ সালের ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ফল কারিগরি ত্রুটির কারণে প্রথমে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। ফল পুনঃনিরীক্ষা ও যাচাইয়ের পর সংশোধিত ফল প্রকাশ করা হয়।