০৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৩:০৩

সুপারিশপ্রাপ্ত ১০৭ শিক্ষককে এমপিও পদে স্থানান্তর চায় শিক্ষক পরিষদ

সংবাদ সম্মেলন  © টিডিসি

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) কর্তৃক প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সুপারিশপ্রাপ্ত ১০৭ শিক্ষককে এমপিও পদে স্থানান্তর চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে এনটিআরসিএ কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্ত বেতনবিহীন শিক্ষক পরিষদ।

আজ বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়,  মানবেতর জীবন থেকে রক্ষার্থে মাত্র ১০৭ জন শিক্ষককে এমপিও পদে স্থানান্তরের মাধ্যমে বেতন-ভাতাদি নিশ্চিত করার প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টাসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করছি। অন্যথায় তাদের আত্মাহুতি ছাড়া কোনো উপায় নেই বলে উল্লেখ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আমরা শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করে জাতীয় মেধা তালিকায় স্থান লাভ করেছি। সেই জাতীয় মেধাতালিকা থেকে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক এনটিআরসিএ মাধ্যমে আবেদন করি এবং ওই আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করে এমপিও এবং নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের লক্ষ্যে এনটিআরসিএ সুপারিশ করে। সুপারিশের পর থেকেই একই পরিপত্রের আলোকে নিয়োগ পেয়ে কিছু শিক্ষক বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা ভোগ করছেন এবং মাত্র ১০৭ জন শিক্ষক বেতন-ভাতা না বৈষম্যের শিকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। এনটিআরসিএর প্রতিটি নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা বৈষম্যের শিকার হই। এনটিআরসিএ গঠন হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৫টি গণবিজ্ঞপ্তি হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, প্রথম গণবিজ্ঞপ্তিতে আমাদের নিজ উপজেলার বাইরে আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হলেও উপজেলা কোটা থাকার কারণে যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী হয়েও নিজ উপজেলায় এমপিও পদে যোগদান করার সুযোগ পাইনি। অথচ কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীরা উপজেলা কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন এবং বেতন-ভাতাসহ সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। প্রথম গণবিজ্ঞপ্তিতে অধিকাংশ শূন্য পদের বিপরীতে এমপিও উল্লেখ করা ছিল। যোগদান করার পর আমরা জানতে পারি ওই পদগুলো এমপিও। ফলে আমরা বেতন-ভাতা না পেয়ে আদালতের শরণাপন্ন হই এবং রিট করি। বিচারক মহোদয় আমাদের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে যোগদানের দিন থেকে বেতন-ভাতাদি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য রায় প্রদান করেন। কিন্তু বিগত সরকার সেই রায় কার্যকর না করে মহামান্য হাইকোর্টকে অবমাননা করেন।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক এনটিআরসিএ কর্তৃক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। কিন্তু ওই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে নন-এম প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেলে বেতন-ভাতা পাবে না এ ধরনের কোনো নির্দেশ ছিল না। যার ফলে আমরা নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবেদন করি এবং যোগদান করিয়া অদ্যাবধি পর্যন্ত বেতন-ভাতা ছাড়াই পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি।

এতে বলা হয়, এনটিআরসিএ হতে আমরা নির্বাচিত হওয়ার পর জানতে পারি প্রতিষ্ঠান নন-এমপিও। তাৎক্ষণিক আমরা এনটিআরসিএ অফিসে যোগাযোগ করলে তাঁরা আমাদের বেতন-ভাতা পাবেন বলে নিশ্চয়তা দেন এবং যথারীতি প্রতিষ্ঠানে যোগদানের জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। এ আমরা দীর্ঘদিন চাকরি করলেও বেতন-ভাতাদির কোনো ব্যবস্থা না হওয়াতে আবারও এনটিআরসিএ অফিসে যোগাযোগ করি। আমাদের কথা বলার সুযোগ দেয় না এবং গেটের মধ্যে প্রবেশ করতে না দিয়ে চলে যেতে বলেন। এরপর আমরা অসংখ্য এনটিআরসিএ, মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করলেও তারা আমাদের পেটের ক্ষুধা মেটানোর কোনো ব্যবস্থা না করে আম তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন এবং এক দপ্তর অন্য দপ্তরের ওপর দায়ভার চাপিয়ে নিজেরা দায় সারেন।

এতে  বলা হয়, আবেদনের ক্ষেত্রে প্রতিটি আবেদনের বিপরীতে ১৮০ টাকা করে ফি প্রদান করে আবেদন করতে হত। অর্থাভাবে আমাদের অনেকে একাধিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে ব্যর্থ হই। এ ছাড়া ৪র্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে বয়স ৩৫ বছর নির্ধারণ করায় অধিক পদ শূন্য থাকা সাপেক্ষে আমরা আবেদন করতে ব্যর্থ হই। আমরা মানুষ গড়ার কারিগর হয়েও সব দপ্তর হতে আশাহত হয়ে ফিরে আসি। মানুষ গড়ার কারিগর এই শিক্ষকদের সঙ্গে কেন এই বৈষম্যমূলক আচরণ, তা আমাদের বোধগম্য নয়। কেনবা আমাদের এই বোবাকান্না কেউ শুনতে চায় কেনবা আমাদের সরকারিভাবে নিয়োগ পেয়েও অদ্যাবধি বিনাবেতনে চাকরি করতে হচ্ছে? আমরা দীর্ঘদিন বেতন-ভাতাদি না পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টের মধ্যে ও অমানবেতর জীবন যাপন করছি। এতে আমরা যেমন সমাজে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছি তেমনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছি।