শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেয়ার দাবিতে হট্টোগোল, যা আছে বিধিতে
খাতা পুনর্মূল্যায়ন বা পুনর্নিরীক্ষা করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন ফেল করা প্রার্থীদের একাংশ। বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, লিখিত পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়ন করে পাস করি দেয়ার দাবিতে প্রার্থীরা তাদের কার্যালয়ে এসে হট্টোগোল করছেন।
আজ বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ও গতকাল বুধবার (২৩ অক্টোবর) এনটিআরসিএ কার্যালয়ে হট্টোগোল ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন বলে অভিযোগ তাদের। যদিও বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন বিধিমালা অনুযায়ী খাতা পুনর্নিরীক্ষণ বা পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ নেই।
১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় অংশ নিতে আবেদন করা ১৮ লাখ ৬৫ হাজার প্রার্থীর মধ্যে প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ৪ লাখ ৭৯ হাজার প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাদের মধ্য থেকে ৩ লাখ ৪৮ হাজার প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। উত্তীর্ণ হয়েছেন ৮৩ হাজার ৮৬৫ জন। ২ লাখ ৬৪ হাজারের বেশি প্রার্থী লিখিত পরীক্ষা গণ্ডি পাড় হতে পারেননি। তাদের একাংশই খাতা পুনর্মূল্যায়ন বা পুনর্নিরীক্ষা করে লিখিত পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেয়ার দাবি করছেন।
আরও পড়ুন : শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে কত নম্বর পেতে হবে
এনটিআরসিএর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলছেন, শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেয়ার দাবিতে ফেল করা প্রার্থীদের ২৫-৩০ জনের একটি দল বৃহস্পতিবার এনটিআরসিএ কার্যালয়ে এসে হট্টোগোল করেন। তারা শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে নিবন্ধিত হতে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তারা কার্যালয়ে এসে ফল পুনর্মূল্যায়ন ও পুনর্নিরীক্ষণের দাবিতে হট্টোগোল শুরু করেন। তাদের কেউ কেউ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অকথ্য ভাষায় গালাগাল করছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। একপর্যায়ে এনটিআরসিএর সদস্য পদে থাকা যুগ্মসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
এনটিআরসিএর একাধিক কর্মচারী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, আলোচনার এক পর্যায়ে সদস্য প্রার্থীদের একজনকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করায় তারা ক্ষেপে গিয়ে দুর্ব্যবহার শুরু করেন। সঙ্গে সঙ্গে ওই সদস্য প্রার্থীদের কাছে ক্ষমা চান। পরে প্রার্থীরা বাইরে এসে গালাগাল করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এর আগে গতকাল বুধবারও চারুকলা বিষয়ে লিখিত পরীক্ষার গণ্ডি পাড় হতে না পারা প্রার্থীদের একাংশ এনটিআরসিএ কার্যালয়ে এসে খাতা পুনর্মূল্যায়ন বা পুনর্নিরীক্ষা করে পাস করিয়ে দেয়ার দাবি করেন। তারা হট্টোগোল করলেও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে ফেল করা প্রার্থীদের থেকে অপেক্ষাকৃত মার্জিত ছিলেন।
আরও পড়ুন : সচিবালয় থেকে গ্রেফতার ২৬ শিক্ষার্থী কারাগারে
এনটিআরসিএর পরীক্ষা শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, প্রার্থীরা এসে পাস করিয়ে দেয়ার দাবিতে হট্টোগোল করেন। কিন্তু বিধি অনুযায়ী খাতা পুনর্মূল্যায়ন বা পুনর্নিরীক্ষণের সুযোগ আমাদের নেই। সেটি বারবার তাদের বলা হলেও তারা মানতে চাননি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর সচিব এ এম এম রিজওয়ানুল হক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, প্রার্থীরা এসে খাতা পুনর্মূল্যায়নের দাবি করছিলেন। কিন্তু এনটিআরসিএর বিধিমালা অনুসারে পুনর্মূল্যায়ন বা পুনর্নিরীক্ষার সুযোগ আমাদের নেই। নিয়োগ সংক্রান্ত প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় কেউ উত্তীর্ণ হবেন বা কেউ হবেন না। এটাই স্বাভাবিক। আমরাও যখন বিসিএস পরীক্ষা দিয়েছি তখন দেখেছি আগের বার ভাইভা পর্যন্ত যাওয়া অনেকে প্রিলিমিনারির গণ্ডি পাড় হতে পরেননি। এ স্বাভাবিক প্রক্রিয়া মেনে নেয়ার মানসিকতা ধারণের পরামর্শ দেন এ কর্মকর্তা।
সম্প্রতি এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় ফেল করা প্রার্থীরা ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ও সচিবালয়ে ঢুকে ফল পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে হট্টোগোল করেছেন। সে ঘটনা শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় ফেল করার প্রার্থীদের এনটিআরসিএ কার্যালয়ে এসে হট্টোগোল করতে উৎসাহিত করছে বলে মন্তব্য করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন মাধ্যমিক অনুবিভাগ (বর্তমানে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ) থেকে জারি করা ‘বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন বিধিমালা ২০০৬ (সংশোধিত ২০১৫)’ অনুসারে লিখিত পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণের সুযোগ নেই। ওই বিধিমালায় ৪ নং অনুচ্ছেদের ‘খ’ বিধিতে উল্লেখ আছে, প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণ বা পুনর্নিরীক্ষণের কোন আবেদন গ্রহণ করা হবে না এবং এ সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রার্থী বা তার প্রতিনিধিকে প্রদর্শন করা হবে না।