‘বদলি না দিলে বিশেষ বা ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি হতে দেওয়া হবে না’
ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের শূন পদের বিপরীতে বদলি চালু না হলে বিশেষ কিংবা ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি হতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের বদলি গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাশী ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রভাষক মো. সরোয়ার।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ঘোষণা দেন তিনি।
লিখিত বক্তব্যে প্রভাষক মো. সরোয়ার বলেন, ২০১৬ সাল থেকে এনটিআরসিএ গনবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সুপারিশ করে আসছে। ১ম গণবিজ্ঞপ্তিতে উপজেলা ভিক্তিক শিক্ষক সুপারিশ করার ফলে নিজ উপজেলায় শূন্য পদ না থাকায় অনেক শিক্ষক বাধ্য হয়ে মাদরাসা এবং কারিগরি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। ২য় ও ৩য় গণবিজ্ঞপ্তিতে মেরিট পজিশন অনুযায়ী জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষক সুপারিশ করা হয়েছিল। এনটিআরসিএর নিয়োগ পরিপত্র ২০১৫ এর ০৭ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একজন ইনডেক্সধারী শিক্ষক যে কোন বয়সে পরবর্তী যে কোন গনবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের মাধ্যমে মেরিট পজিশন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করতে পারবেন। তাই ২য় ও ৩য় গণবিজ্ঞপ্তিতে অনেক শিক্ষক নিজ এলাকায় পোষ্ট না থাকায় বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবার জন্য দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে আবেদন করে সুপারিশ পেয়েছেন।
তিনি বলেন, হঠাৎ করে নিয়োগ পরিপত্র ২০১৫ এর ০৭ নং অনুচ্ছেদ সাময়িক স্থগিত করার কারণে ৪র্থ ও ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের ও আবেদনের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। যার ফলে এখন ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের চরম সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বিশেষ করে নারী শিক্ষকদের। পাশাপাশি পুরুষ শিক্ষকরাও নিজ উপজেলা থেকে ৫০০-৮০০ কিলোমিটার দূর-দূরান্তে এনটিআরসিএর মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে চরম হতাশায় দিন যাপন করছেন। ইতিমধ্যে শিক্ষকদের কষ্টের কথা উপলব্ধি করতে পেরে স্বৈরাচার সরকারের অধীনস্থ কর্মকর্তাগণ পারস্পারিক বদলি প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে এই প্রজ্ঞাপন দিয়ে ১% শিক্ষকও বদলি হতে পারবেন না। শিক্ষক বৈষম্য আরও প্রকট আকার ধারণ করবে। পাশাপাশি নিজ জেলায় সমপদ পাওয়া অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে যাবে।
ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের বদলি গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাশী ঐক্য পরিষদের সভাপতি বলেন, ২০২৩ সাল থেকে শিক্ষকদের বদলি-গণবিজ্ঞপ্তি নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি। তারই ধারাবাহিকতায় ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের শূন্যপদে বদলির দাবিতে গত ২৫ ও ২৬ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন পালনের প্রেক্ষিতে গত ২৭ আগস্ট শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়ের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করলে শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি হিসেবে তিনি তা মেনে নেন এবং শূন্য পদের বিপরীতে বদলি চালুর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত শূন্যপদের বিপরীতে বদলির প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি।
প্রভাষক মো. সরোয়ার বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টার নির্দেশনা পরও কেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ পরিপত্র জারির বিষয়ে গড়িমসি করছেন। দ্রুত প্রজ্ঞাপন না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আগামী ১৬ অক্টোবর হতে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে বদলির ব্যবস্থা চালু কিংবা প্রজ্ঞাপন জারি না করলে কোন রকম নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বা বিশেষ বিজ্ঞপ্তি বা ৬ষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি হতে দেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, বদলি শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি, বদলি না থাকায় একজন শিক্ষককে তার পেশাগত জীবনে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে সময় অতিবাহিত করতে হয়। ১২৫০০ টাকা বেতন উত্তোলন করে বাসা ভাড়া এবং কোনো রকম খেয়ে না খেয়ে যেমন জীবন অতিবাহিত করতে হয়। এছাড়া প্রধান শিক্ষক এবং স্থানীয় শিক্ষকদের রোষানলে পড়েও অত্যন্ত মানসিক কষ্ট নিয়ে সময় পাড় করতে হয়। এমনকি স্বামী এবং স্ত্রী চাকরির সুবাদে দুইজন দুইপ্রান্তে আছেন কিন্তু শূন্য পদে বদলি ব্যবস্থা না থাকায় একে অপরের মাঝে মনোমালিন্য পারিবারিক অশান্তি থেকে শেষে ডিভোর্স পর্যন্ত গড়াচ্ছে। যদি ০৭ নং ধারা চালু থাকত তাহলে গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের মাধ্যমে শিক্ষকরা তাদের নিজ এলাকায় যেতে পারতেন। শূন্য পদের বিপরীতে দ্রুত বদলির প্রজ্ঞাপন জারি এবং বদলি চালু না হওয়া পর্যন্ত যে কোন বিশেষ বিজ্ঞপ্তি বা ৬ষ্ঠ বিজ্ঞপ্তি না দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।